সুবোধ মিত্র

ভারতীয় বাঙালি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ

সুবোধ মিত্র এম.ডি, এফআরসিএস, এফআরসিওজি (১ নভেম্বর ১৮৯৬ - ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬১) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ[] তিনি একজন মহান চিকিৎসক হয়েও পাশাপাশি ছিলেন একজন মহান প্রশাসক, সংগঠক এবং জনহিতৈষী। সার্ভিকাল ক্যান্সারের জন্য যে শল্য চিকিৎসার কৌশল অবলম্বন করেন তা বিশ্বে "মিত্র অপারেশন" নামে পরিচিত হয়। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও(২১ অক্টোবর ১৯৬০- ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬১) ছিলেন। []

সুবোধ মিত্র
জন্ম(১৮৯৬-১১-০১)১ নভেম্বর ১৮৯৬
মৃত্যু৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬১(1961-09-05) (বয়স ৬৪)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয় নাগরিক
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণমিত্র অপারেশন
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপ্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রতিষ্ঠানসমূহকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ

সংক্ষিপ্ত জীবনী

সম্পাদনা

সুবোধ মিত্র ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের যশোর শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারী নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল স্নাতক হন। তিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে মহিলা রোগীদের বেদনা, যন্ত্রণা ও দুর্দশা গভীরভাবে উপলব্ধি করে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জার্মানির যান। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সেখানকার বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিজ্ঞানে এম.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই বছরেই তিনি এডিনবার্গের রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস'-এর এফআরসিএস হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের এমআরসিওজি উপাধি লাভ করেন।

চিকিৎসা সেবা

সম্পাদনা

বিদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষ করে ডাঃ মিত্র দেশে ফেরেন এবং ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট এবং রেসিডেন্ট সার্জন হিসাবে কলকাতার তৎকালীন কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ অধুনা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যোগদান করেন। তিনি দরিদ্র ও বিশেষকরে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের চিকিৎসা সেবাদানে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়া চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে (সিএসএস) যোগ দেন। তিনি একজন দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন। স্ত্রীরোগ চিকিৎসায় ডাঃ মিত্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক অবদান ছিল গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা এবং টক্সেমিয়া এবং ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের আশঙ্কা। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি তিনি এবং তাঁর সহকর্মী চিকিৎসকদের নিয়ে মহিলাদের যৌনাঙ্গের ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি এই হাসপাতালটিকে ক্যান্সারের চিকিৎসা, গবেষণা ও প্রতিরোধের জন্য এক বিশেষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আগ্রহ পোষণ করেন। ডাঃ মিত্র তার প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে 'দেশবন্ধু ট্রাস্ট তহবিলে বেতন থেকে প্রতি মাসে একশত টাকা সঞ্চয় শুরু করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে স্যার দোরাবজি টাটার ইচ্ছা অনুসারে টাটা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ইতোমধ্যে মুম্বাইতে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ডা. মিত্র তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল হন। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল। [][] নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ম্যাডাম কুরি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি ডা.মিত্রের ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রটির (চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালের) উদ্বোধন করেন।[]

তিনি চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের পরিচালক এবং কলকাতার প্রসূতিবিদ্যা, স্ত্রীরোগ ও শিশু স্বাস্থ্য কলেজের অধ্যক্ষ হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সেনেট সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যার অধ্যাপক এবং পরিচালক হন। পরে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন।[]

ডা. মিত্রর ক্যান্সার গবেষণার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে ছিল রেডিওবায়োলজি এবং ক্যান্সার এপিডেমিওলজি। তিনি তার ক্যান্সার হাসপাতাল এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটে জরায়ুর ক্যান্সার কোষের উপর বিকিরণের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি "ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ রেডিওলজি"- এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক এবং 'দ্য ফেডারেশন অফ অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটিজ অফ ইন্ডিয়া' তৈরীর অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন।[]

সম্মাননা

সম্পাদনা

জীবনাবসান

সম্পাদনা

ডা. সুবোধ মিত্র ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যার তৃতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে যোগ দিতে ভিয়েনা যান। সেখানে ৫ সেপ্টেম্বর তিনি প্রয়াত হন।

মিত্র অপারেশন

সম্পাদনা

ডাঃ সুবোধ মিত্র মহিলাদের সার্ভিকাল ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের জন্য এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। সেটি মিত্র অপারেশন নামে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়। ক্যানসার সার্ভিক্স অপারেশনের জন্য ডাঃ এস. মিত্রের অনুসৃত জরায়ু অপসারণ কৌশল তথা 'এক্সটেন্ডেড র‌্যাডিক্যাল ভ্যাজাইনাল হিস্টেরেক্টমি উইথ এক্সট্রাপেরিটোনিয়াল লিম্ফ্যাডেনেক্টমি' আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং জার্মান গাইনোকোলজিক্যাল কনফারেন্সে ঘোষণা করা হয়। তিনি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনায় এই কৌশলটি প্রদর্শন করেছিলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস সি. থমাস, টরেন্টোর রাইয়ারসন প্রেস এবং অক্সফোর্ডের ব্ল্যাকওয়েল সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন্স, একযোগে মনোগ্রাফ "মিত্রা অপারেশন ফর ক্যান্সার অফ দ্য সার্ভিক্স"- নামে একটি মনোগ্রাফ প্রকাশ করে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Dr. Subodh Mitra, by Purandare C.N and Patel Madhuri, Indian Contribution to Obstetrics and Gynaecology, The Journal of Obstetrics and Gynecology of India, 2011, 61; 384-5.
  2. "List of Vice Chancellors of the University of Calcutta"University of Calcutta। ৬ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. "SubodhMitra - The forgotten hero in the Indian Radiotherapy"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২২ 
  4. Our Idol: Subodh Mitra at Subodh Mitra Cancer Hospital and Research Center. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুলাই ২০১২ তারিখে
  5. "Subodh Mitra"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]