সুফী জুলফিকার হায়দার
সুফী জুলফিকার হায়দার (১৯ নভেম্বর ১৮৯৯ - ২৩ এপ্রিল ১৯৮৭) একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী কবি। কাব্যরচনায় তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবশিষ্য। নজরুলের কবিতার মত তার কবিতায়ও সমাজের অত্যাচারিত মানুষের জন্য তিনি প্রতিবাদ রূপায়িত হয়েছে। ইসলামী আদর্শের রুপায়নের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে সিতারা-ই-খিদমত উপাধি দেন। তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদক ও নজরুল ইনস্টিটিউট কর্তৃক নজরুল স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন।[১]
সুফী জুলফিকার হায়দার | |
---|---|
জন্ম | জুলফিকার হায়দার ১৯ নভেম্বর ১৮৯৯ ভাতুরিয়া, নবীনগর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ২৩ এপ্রিল ১৯৮৭ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৮৭)
পেশা | কবি |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
ধরন | কবিতা |
বিষয় | সামাজিক |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি |
|
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক নজরুল স্মৃতি পুরস্কার |
সক্রিয় বছর | ১৯৪৫–১৯৮৫ |
দাম্পত্যসঙ্গী | রাবেয়া হায়দার |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
সম্পাদনাজুলফিকার হায়দার ১৮৯৯ সালে (১৪ অগ্রহায়ণ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে) বাংলাদেশের কুমিল্লার (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা) নবীনগর উপজেলার ভাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৌলভী মাহমুদ জামাল সেটলমেন্ট অফিসে চাকরি করতেন এবং মা চাঁদ বিবি ছিলেন গৃহিণী। তার দাদা হাজী আমির আহমেদ দানশীলতার জন্য কুমিল্লায় পরিচিত ছিলেন। তার পড়াশুনায় হাতেখড়ি হয় তার বাবার মাধ্যমে। পরে তিনি নূরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[২] পরে শিবপুর মাইনর স্কুল থেকে মধ্য ইংরেজি পরীক্ষায় পাস করেন এবং ভর্তি হন বিদ্যাকোট উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে। ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষার কিছু দিন আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মুম্বাইয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এ অংশগ্রহণের জন্য বাগদাদ যান। যুদ্ধ শেষ হলে বাগদাদে ব্রিটিশ বাহিনী ভেঙে দেয়া হলে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন।[১]
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাজুলফিকার হায়দার ১৯২৮ সালের ২০ জানুয়ারি নবীনগরের বিটঘর গ্রামের রাবেয়া হায়দারকে বিয়ে করেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে রাবেয়া হায়দার ছিলেন শিক্ষিতা, লেখিকা এবং সমাজসেবিকা। তিনি সেই সময়ে সওগাত ও দৈনিক কৃষক পত্রিকায় লিখতেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাযুদ্ধ শেষে কলকাতায় ফিরে তিনি ব্রিটিশ মালিকানাধীন ম্যাকিনন ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানিতে ট্রাভেলিং সুপারভাইজার পদে চাকরি নেন। কাজের জন্য তিনি উপমহাদেশের বিভিন্ন শহর, মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ এবং শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার ভ্রমণ করেন।[১] তিনি কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কবি ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে তিনি রুগ্ন কবির চিকিৎসা এবং তার পরিবার-পরিজন দেখাশোনার দায়িত্বপালন করেন।[৩] ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। সেখান থেকে তিনি চট্টগ্রামের শাহ সুফী মাওলানা অলি আহমদ নিজামপুরী পীর সাহেবের নিকট দীর্ঘ চৌদ্দ বছর আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত থাকেন। সেখান থেকে তিনি 'সুফী' আখ্যা লাভ করেন।[১]
সাহিত্যচর্চা
সম্পাদনাজুলফিকার হায়দারের কবিতায় সামাজিক অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। তার ভাঙ্গা তলোয়ার ও বিপ্লব বিপ্লব দ্বিতীয় বিপ্লব কাব্যগ্রন্থে সামাজিক অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ তুলে ধরেন। এছাড়া ফের বানাও মুসলমান কাব্যগ্রন্থে ইসলামী আদর্শ ও সুফীবাদ তুলে ধরা হয়েছে। কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তিনি নজরুল গবেষণায় এবং নজরুলবিষয়ক স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি নজরুলের জীবনীসংক্রান্ত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায় রচনা করেছেন। তার অন্যান্য নজরুলবিষয়ক গ্রন্থ হল নজরুল প্রতিভার পরিচয় ও জাতীয় কবি নজরুল।[১]
গ্রন্থতালিকা
সম্পাদনাবাংলা
সম্পাদনাকাব্যগ্রন্থ
- ভাঙ্গা তলোয়ার (১৯৪৫)
- ফের বানাও মুসলমান (১৯৫৯)
- জেহাদের আহ্বান (১৯৬৫)
- ঈদের চাঁদের জবাব শোন (১৯৬৬)
- বিপ্লব বিপ্লব দ্বিতীয় বিপ্লব (১৯৭৫)
নজরুল বিষয়ক গ্রন্থ
- নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায় (১৯৬৪)
- বিদ্রোহী নজরুল নীরব আজি (১৯৬৪)
- নজরুল প্রতিভার পরিচয় (১৯৮৪)
- জাতীয় কবি নজরুল (১৯৮৪)
অন্যান্য
- শত বেদনা সয়েছি নীরবে (১৯৭০)
- সিপাহী (১৯৭৮)
- আশরাফুল মাখলুকাত (১৯৮০)
- বিপ্লব বিপ্লব সত্যের বিপ্লব (১৯৮২)
- দুর্নীতি দমন আন্দোলন
উর্দু
সম্পাদনাকাব্যগ্রন্থ
- সামনে কদম বাড়হা (১৯৬০)
- জেহাদ কি পুকার (১৯৬৫)
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- একুশে পদক (১৯৭৮)
- নজরুল স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৫)
মৃত্যু
সম্পাদনাজুলফিকার হায়দার ১৯৮৭ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "স্মরণ : সুফী জুলফিকার হায়দার"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৩ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন (ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫)। "সুফী জুল্ফিকার হায়দার; জীবনের খেয়াপার"। মিরসরাই নিউজ। চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। ২৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ আলী হোসেন চৌধুরী (৩০ আগস্ট ২০১৩)। "বাংলাদেশের নজরুল-স্বজন"। দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬।