সীতারাম কেশরী

ভারতীয় রাজনীতিবিদ

সীতারাম কেশরী (১৫ই নভেম্বর,১৯১৯ - ২৪শে অক্টোবর,২০০০)[১] একজন ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা। তিনি ভারত সরকারের মন্ত্রী ও ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন[২]

সীতারাম কেশরী
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি
কাজের মেয়াদ
১৯৯৬ - ১৯৯৮
পূর্বসূরীপি. ভি. নরসিমা রাও
উত্তরসূরীসোনিয়া গান্ধী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৫ই নভেম্বর, ১৯১৯
দানাপুর,বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৪শে অক্টোবর, ২০০০
নতুন দিল্লি, ভারত
রাজনৈতিক দলভারতের জাতীয় কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীকেশর দেবী
সন্তান১ পুত্র, ২ কন্যা
বাসস্থানদানাপুর, বিহার

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

স্বাধীনতা পূর্বের রাজনীতি সম্পাদনা

সীতারাম কেশরী ১৩ বছর বয়সে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত হয়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কেশরী ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে বেশ কয়েকবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কেশরী স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিড়েশ্বরী দুবে, ভাগবত ঝা আজাদ, চন্দ্রশেখর সিং, সত্যেন্দ্র নারায়ণ সিনহা, কেদার পান্ডে এবং আবদুলের সাথে বিহার কংগ্রেসের বিখ্যাত তরুণ তুর্কি দলের অংশ ছিলেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

কেশরী ১৯৭৩ সালে বিহার প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি এবং ১৯৮০ সালে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৩]

সীতারাম কেশরী ১৯৬৭ সালে কাটিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস দলের প্রার্থী হিসাবে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০০০ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে পাঁচবারের জন্য রাজ্যসভায় বিহারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।[৪] তিনি ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী এবং পি. ভি. নরসিংহ রাওয়ের শাসন আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন।

কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে ভুমিকা সম্পাদনা

১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে নরসিমহা রাও কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলে, সীতারাম কেশরীকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল।

পরের বছরগুলি কংগ্রেস দলের পক্ষে কঠিন ছিল। সীতারাম কেশরীর জনগণের মধ্যে জনসমর্থনের অভাব পার্টির আরও ক্ষতি করে। কেশরীর সবচেয়ে বিতর্কিত কাজটি হল হঠাৎ এইচ. ডি. দেবেগৌড়া সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা, যা ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে দেব গৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকার কে পতনের দিকে পরিচালিত করে। তবে, একটি সমঝোতা হয়েছিল, কংগ্রেস দলের সমর্থনে আই. কে. গুজরালের নেতৃত্বে পরবর্তী যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন হয়।

১৯৯৭ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জৈন কমিশনের রিপোর্টে রাজীব গান্ধী হত্যা ষড়যন্ত্রের অনুসন্ধানের রিপোর্টের কিছু অংশ সংবাদপত্রে ফাঁস হয়েছিল। এই রিপোর্ট অনুযায়ী গান্ধী হত্যার সাথে জড়িত সংগঠন এলটিটিইয়ের সাথে জৈন কমিশন ডিএমকে দলের যোগাযোগ খুঁজে পায়। কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা যুক্তফ্রন্ট সরকারের অন্যতম অন্যতম শরিক ছিল ডিএমকে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্র কুমার গুজরালের নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদে ডিএমকে দলের তিন জন মন্ত্রী ছিলেন। কংগ্রেস সরকার থেকে ডিএমকেভুক্ত মন্ত্রীদের অপসারণের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্র কুমার গুজরাল তা মানা করে দেয়। যার ফলে কংগ্রেস সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় এবং ফলস্বরুপ সরকার পড়ে যায় ও নতুন করে লোকসভা নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

কংগ্রেস মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্তভাবে প্রস্তুত ছিল না। রাঙ্গারাজন কুমারমঙ্গলম, আসলাম শের খান, এবং অন্যান্য নেতাদের মতো দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা কেশরীর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং দল ত্যাগ করেন।

ভোটে কংগ্রেস পরাজিত হলেও ১৪০ টি আসনে জিতেছিল। নির্বাচনী প্রচারের সময়, কোয়েম্বাটুরে একাধিক বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল, যেখানে বিজেপি সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদবানীর একটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। বিস্ফোরণে প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছিলেন।

বিস্ফোরণের পরে, কেশরী একটি বিবৃতিতে বলেন, যে বোমা বিস্ফোরণগুলিতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের হাত আছে এবং তদুপরি, এই বিস্ফোরণে আরএসএসের জড়িত থাকার প্রমাণ তার কাছে আছে। আরএসএস কেশরীর বিরুদ্ধে মানহানির জন্য মামলা করে, তবে ১৯৯৮ সালে কেশরিকে সিটি আদালত জামিন দেয়। [৫]

নির্বাচনী পরাজয়ের পরে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি কেশরীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়।[৬] পরিবর্তে সোনিয়া গান্ধীকে তাঁর জায়গায় কংগ্রেস দলের সভাপতি নিযুক্ত করে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি থেকে কেশরীর অপসারণকে কেউ কেউ দলীয় সংবিধানের বিশ্বাসঘাতকতা হিসাবে বিবেচনা করেছেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://books.google.co.in/books?id=p2qFYxtq3GYC&pg=PA129&dq=Sitaram+Kesri+1919&hl=en&sa=X&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false। https://books.google.co.in/books?id=p2qFYxtq3GYC&pg=PA129&dq=Sitaram+Kesri+1919&hl=en&sa=X&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  2. "https://www.thehindu.com/archive/print/2000/10/26/"  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  3. "Sitaram Kesri: President – Indian National Congress"। Congress Sandesh। ৩০ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২১ 
  4. "List of Rajya Sabha members Since 1952" 
  5. Sitaram Kesri gets bail in RSS defamation case Indian Express – 5 May 1998
  6. Kesri and three transitions in Cong. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০০৯ তারিখে The Hindu – 26 October 2000