সিপাহে সাহাবা পাকিস্তান
সিপাহে সাহাবা পাকিস্তান (এসএসপি - নবীর সাহাবীদের সৈন্য) পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসবাদী দেওবন্দি মুসলিম সংগঠন।[১] এটিকে মিল্লাতে ইসলামিয়া নামে নামান্তর করা হয় এবং বর্তমানে এটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে পরিচিত। এটি একটি রাজনৈতিক দল হিসাবেও কাজ করে। এটি ১৯৮৫ সালে মূল দেওবন্দি সুন্নি সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হক নওয়াজ ঝংভি ঝংয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররফ ১৯৯৭ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সংগঠনটিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।[২] ইন দ্য লাইন অফ ফায়ার: পারভেজ মোশাররফের এই স্মৃতিকথা বইটিতে বাস্তবতা ভিত্তিক বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০১২ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সরকার আবারও সিপাহে সাহাবাকে নিষিদ্ধ করে।[৩][৪] যুক্তরাজ্য সরকার ২০০১ সালের শুরুতে এই গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ করে।[৫]
সিপাহে সাহাবা পাকিস্তান | |
---|---|
سپاہ صحابہ | |
নেতা | হক নওয়াজ ঝংভি,ইসারুল হক কাসেমি, আজম তারিক, জিয়াউর রহমান ফারুকী, আলী শের হায়দারি, মুহাম্মদ আহমেদ লুধিয়ানভি, আওরঙ্গজেব ফারুকী |
উদ্দেশ্য | পাকিস্তান থেকে শিয়া নির্মূল করা |
সক্রিয়তার অঞ্চল | পাকিস্তান |
মতাদর্শ | শিয়া বিরোধী, দেওবন্দি |
বিপক্ষ |
পাকিস্তান |
যার দ্বারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে মনোনীত | যুক্তরাজ্য (২০০১) যুক্তরাষ্ট্র (২০০৫) পাকিস্তান |
রঙ | সবুজ |
২৬শে জুন ২০১৮ তারিখে, সে বছরের নির্বাচনের আগে পাকিস্তান সরকার সিপাহে সাহাবা পাকিস্তানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।[৬][৭][৮]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৮৫ সালে হক নওয়াজ ঝংভি, জিয়াউর রহমান ফারুকী, ইসারুল হক কাসেমি এবং আজম তারিক পাকিস্তানের ঝং-এ আঞ্জুমানে সিপাহে সাহাবা নামে একটি সংস্থা গঠন করেন।[৪][৯][১০] যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি জনসংখ্যার ঝং এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিয়া জমিদারদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা।[৯] পরবর্তীতে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে এবং শিয়া মুসলমানদের উপর হামলা চালাতে শুরু করে।[৯] ১৯৮০-এর দশকে তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং হাজার হাজার শিয়াদের হত্যার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। তারা সারা পাকিস্তান জুড়ে কাজ করছে এবং পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় (কেপি) বৃহৎ ভোট ব্যাংক রয়েছে।[৯] তারা ব্যাপকভাবে সংগঠিত এবং সারা দেশে পাঁচশরও বেশি কার্যালয় আছে।[৯]
১৯৯৬ সালে অনেকে দল ত্যাগ করে আরেকটি সংগঠন লস্করে ঝংভি (লেজ; LEJ) গঠন করে।[৯]
২০০২ সালে পারভেজ মূশাররফ দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।[৯] পরে তারা এর নাম পরিবর্তন করে এবং মিল্লাতে ইসলামিয়া পাকিস্তান নামে চালু করে।[৯] ২০০৩ সালে তাদের আবার নিষিদ্ধ করা হয়।[৯] আজম তারিকের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ আহমেদ লুধিয়ানভি দলটির প্রধান নির্বাচিত হন।
সিপাহে সাহাবার একজন নেতা ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাবের জোট সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন এবং দলটি পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে আসন ধরে রেখেছে।[২][৪]
১৯৯০ সালে যখন শিয়া জঙ্গিরা ঝাংভিকে হত্যা করে, তখন জিয়াউর রহমান ফারুকী দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালের ১৯ জানুয়ারি লাহোর সেশন কোর্টে বোমা বিস্ফোরণে জিয়াউর রহমান ফারুকী মারা যান।[৪] তার মৃত্যুর পর আজম তারিক ২০০৩ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই দলের নেতৃত্ব দেন। অতপর তিনি জঙ্গি শিয়া সংগঠন সিপাহে মুহাম্মদসহ আরও চারজনের উপর হামলায় নিহত হন।[২][৪]
দলটির প্রধান (সরপারাস্ত-আলা) আলী শের হায়দারী ২০০৯ সালে একটি হামলায় নিহত হন।[১১] এরপর মুহাম্মদ আহমেদ লুধিয়ানভি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে আওরঙ্গজেব ফারুকীর সাথে সরপারাস্ত-ই-আলা হিসেবে নির্বাচিত হন।[১২][১৩]
জোট
সম্পাদনাসংগঠনটি কাশ্মীর এবং গিলগিত-বালতিস্তান সহ পাকিস্তানের সকল প্রদেশে ৫০০ কার্যালয় এবং শাখা আছে। এছাড়াও পাকিস্তানে প্রায় ৩০০,০০০ জন নিবন্ধিত কর্মী এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে ১৭টি শাখা রয়েছে।[২]
এর নিয়মিত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে মাসিক খিলাফতে রাশিদা, আবে হায়াত এবং জিনিয়াস।[১৪]
সম্পর্কিত বিষয়াবলি
সম্পাদনা- ১৯৯৬ সালে সিপাহে সাহাবার অভ্যন্তরে এমন কিছু ব্যক্তি ছিলেন যারা বিশ্বাস করেন না যে সংগঠনটি লস্করে ঝংভি গঠনের জন্য যথেষ্ট বামপন্থি ছিল ছিল।[৪]
- ২০০০ সালের অক্টোবর মাসে নিষিদ্ধ জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসউদ আজহারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "সিপাহ-ই-সাহাবা জিহাদে জইশ-ই-মুহাম্মদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।"[৪] একটি ফাঁস হওয়া মার্কিন কূটনৈতিকের বর্ণনা অনুযায়ী "জইশ-ই-মুহাম্মদ আরেকটি সিপাহে সাহাবা, যা দেওবন্দি সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন"।[১৫]
- অনিমেষ রুলের মতে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হল এসএসপির একটি প্রকাশ্য দল যা পাকিস্তানে নিষিদ্ধ।[১৬]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ খান, ইরফানুল্লাহ (২০১৭)। দি দেওবন্দ মুভমেন্ট এন্ড দি রাইজ অব রিলিজিয়াস মিলিট্যান্সি ইন পাকিস্তান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (ইংরেজি ভাষায়)। ইসলামাবাদ: কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৭৩–৭৪। ৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০২১।
- ↑ ক খ গ ঘ Refugees, United Nations High Commissioner for। "Refworld | Pakistan: The Sipah-e-Sahaba (SSP), including its activities and status (January 2003 - July 2005)"। Refworld (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "Pakistan bans Ahle Sunnah Wal Jamaat Islamist group"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "Sipah-e-Sahaba Pakistan, Terrorist Group of Pakistan"। www.satp.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "Police probe mosque figures' links"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "Govt lifts ban on ASWJ, unfreezes assets of its chief Ahmed Ludhianvi"। The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "Pakistan removes ASWJ leader Ahmed Ludhianvi from terrorist watchlist | SAMAA"। Samaa TV (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "Pakistan removes radical Sunni leader Maulana Ludhianvi from terrorist watchlist ahead of election"। Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "Sipah-e-Sahaba Pakistan (SSP) | Encyclopedia.com"। www.encyclopedia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ Mahmood, Sohail (১৯৯৫)। Islamic Fundamentalism in Pakistan, Egypt and Iran (ইংরেজি ভাষায়)। Vanguard।
- ↑ Staff, Reuters (২০০৯-০৮-১৭)। "Leader of banned Pakistan militant group shot dead"। Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ Dawn.com (২০১৫-০২-১৫)। "ASWJ local leader killed in Rawalpindi, central leader attacked in Karachi"। DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ Azeem, Kalbe Ali | Munawer (২০১৭-০৩-২৯)। "Ludhianvi hopeful of ASWJ's 'unbanning'"। DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ Muhammad Amir Rana, "Jihadi Print Media in Pakistan: An Overview" in Conflict and Peace Studies, vol. 1, no. 1 (Oct-Dec 2008), p. 4
- ↑ Dawn.com (২০১১-০৫-২১)। "2009: Southern Punjab extremism battle between haves and have-nots"। DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Growing Islamic State Influence in Pakistan Fuels Sectarian Violence"। Jamestown (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।