সিন্ধুর সাত রানী

সিন্ধু প্রদেশ পাকিস্তানের সাত বীর নারীর লোক কাহিনী।

সাত রাণী [উচ্চারন(সাত-এ সূর-মায়ূন); অর্থ(ست মানে 'সাত'; অন্যদিকে سورميون মানে 'বীর নারী')], বলতে সাধারনতঃ সিন্ধির বিখ্যাত কবি শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাই[১] এর লেখা কবিতার বই শাহ জো রিসালোতে [২] বর্নিত আটজন বীর নারী চরিত্রের কথা বোঝায়। এরা হলোঃ মারুই (مارئي), মূমল (مومل), সাসি (سسئي), নূরী (نوري), সোহনি (سهڻي), লিলান (ليلان) এবং সোরথ (سورٺ)।

শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাই
شاھ عبداللطيف ڀٽائي

এই সাতজন। [৩] নারী চরিত্রকে কবি ইতিহাস থেকে বেছে নিয়েছেন তার কাব্যিক বার্তা পৌছেঁ দেবার জন্য এবং এদের নির্ভীকতা, আবেগ, আনুগত্য, একনিষ্ঠতা, এবং চরিত্রিক দৃঢ়তার জন্য এরা সিন্ধুর সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আদর্শ হয়ে আছেন।

মারুই এর চরিত্রে চিত্রিত হয়েছে তার দেশ ও মানুষের জন্য ভালবাসা, তার সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকার এবং অত্যাচারী শাসক, উমর(عمر) এবং কেউ কেউ বলেন (অমর—امر) [৪] -এর বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান।

মূমল চরিত্রে অঙ্কিত হয়েছে তার ধৈর্য্যশীল মন, তার দয়িত রনোর(راڻو) জন্য তার উদ্বেলতা, বিচ্ছেদ এবং প্রত্যাখ্যানের শত যন্ত্রণা সত্যেও মাথা নিচু না করার কথা।[৫]

সাসি ছিলেন এক কঠিন চরিত্রের মহিলা যিনি তার ভালবাসার মানুষ পুনহুনকে(پنهون)[৬] খুজেঁ বের করার জন্য এক সংকল্পবদ্ধ পাহাড়ী যাত্রা শুরু করেছিলেন।

নূরী এক দুঃসাহসিক নারী জেলে, যে কিনা রাজা তামাচিকে(تماچي) মন্ত্র্ বলে বশ করেছিলেন এবং সিন্ধু সাহিত্যে মূমল এবং সুহনি’র মত সবচেয়ে রোমান্টিক চরিত্রের একটিতে পরিনত হন। [৭]

সোহনি বেপোরোয়া এক চরিত্র যে তার প্রেমিক মেহারের(ميهار) সাথে দেখা করার জন্য সিন্ধু নদীর ভয়ংকর উচুঁ সব টেউ উপেক্ষা করে চলে যেতেন। এভাবেই দূরের এক নদী তীরে তাদের দেখা-সাক্ষাত করতে থাকেন এবং এক রাতে ঢেউয়ের কবলে পরে মৃত্যবরণ করেন।[৮]

লিলান অসম্ভব দামী একটি গলার হারের জন্য তার স্বামী রাজা চ্যানেসারকে হারান। এই যন্ত্রণাদায়ক বিচ্ছেদের পর তাকে তার অবস্থান ও চারিত্রিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল।[৯]

অন্যদিকে সোরাথের আছে প্রেমপূর্ণ এক মন, তার প্রেমিকের জন্য গভীর আসক্তি ও মমতা।[১০]

শাহ আবদুল লতিফ তার কবিতার বই ''গঞ্জ'', যা সাধারন ভাবে ''শাহ জো রিসালো'' নামে পরিচিত, এমন ভাবে চিত্রিত করেন, যা দেখে বোঝা যায়, তিনি তার কবিতার মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দিতে চান। তার কবিতার লেখার ইচ্ছেগুলোর পেছনে প্রধান ঝোকঁ হলো, তার দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে, বিশেষত নারীদের তুলে ধরা। সেই হিসেবে তিনি এই সাত নারী বা সিন্ধি লোককাহিনীর সাত রানীকে তার প্রধান চরিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

বিয়োগান্ত রোমান্টিক গল্পগুলো হলঃ উমর মারভি, মূমল-রনো, সোহনি-মেহার, লিলান-চ্যানেসার, নূরী -জ্যাম তামাচি, সাসি পুনহুনসোরাথ রায় দিয়াচ [১১] [১২]

পাকিস্তানে বিভিন্ন ভাষায় লিখিত (সিন্ধি, উর্দু, বেলুচি, পশতু, সারাইকি, পাঞ্জাবি) সাহিত্যের উপর এসব বীর রমনীদের যথেষ্ট প্রভাব আছে। বিশেষ করে ভারতে সিন্ধি সাহিত্যে মূমল ও সুহনি বেশ জনপ্রিয়। এ সব লোক কাহিনীর বিশেষ করে কবি লতিফের লেখা কবিতায় এসব নারীদের পুরুষ প্রতিপক্ষের কার্যকলাপের চেয়ে নারীর উপর প্রাধান্য প্রকাশ পেয়েছে। কবি লতিফের শুধু উমর-মারভির উপর লেখা কবিতাটি বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, সেখানে উমরের কথা কমই বলা হয়েছে, বরং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের রাজা উমর কর্তৃক মারভিকে অপহরণের করার কারণে মারভি যে সব সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে সেগুলোর বর্ণনাই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে করা হয়েছে। মূমল-রনো কাহিনীতে রনোর ভূমিকাকে ছাপিয়ে মূমলের ভূমিকাই সব কিছু।

সাসি পুনহুন গল্প প্রধানত তার ছেড়ে যাওয়া স্বামীকে নিয়ে। স্বামীকে খুজেঁ পাবার জন্য সানসুইয়ের সংগ্রাম এই গল্পের মূল প্রতিপাদ্য। পুনহুনের জন্য এই গল্পে খুব কম জায়গাই বরাদ্দ আছে। নূরী-জাম তামাচি’র রোমান্টিক গল্পেও নূরীকে প্রধান চরিত্রে দেখা যায়। নূরীর চরিত্র চিত্রনে তামাচিকে একজন সাহায্যকারীর ভূমিকায় দেখা যায়। সোহনি-মেহার গল্পে মেহারের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য সোহনির উদ্বেগ আর যন্ত্রণা ভোগের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে। মেহারকে বরং তার ভাবমূতির একটা মিথ্যা উদ্ভাবন হিসেবে দেখান হয়েছে। লিলান-চ্যানেসার গল্পেও অন্যান্য গল্পের মত লিলানকে প্রধান চরিত্র মনে করা হয়েছে। যদিও সোরাথ-রায় দিয়াচ গল্পে এ পর্যন্ত বর্নিত অন্য সব গল্প থেকে একটু ভিন্ন,ভাবে দেখান হয়েছে, গল্পে চেতনাকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়েছে, কুশীলবদের নয়।

এভাবে, বীরত্বপূর্ণ চরিত্রের এই সাত নারীর গল্প, কম বেশি, কোনও না কোনভাবে প্রাচীন ভারত বা বর্তমান পাকিস্থানের বিভিন্ন অঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের ক্রমবিকাশমান সামাজিক পরিবেশ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সর্ম্পক রয়ে গেছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাই
  2. শাহ জো রিসালো
  3. "সিন্ধি ফোক্‌ টেলস ইন ইংলিশ| Sindhi Sangat | সিন্ধি বুক| সিন্ধি কমিউনিটি"www.sindhisangat.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-০৩ 
  4. উমর মারভি
  5. মূমল রনো
  6. সানসুই পুনহূন
  7. নূরী জ্যাম তামাচি
  8. সোহনি মেহার
  9. লিলান চানেসার
  10. সোরাথ রায় দিয়াচ
  11. "দি সেভেন কুইন্স অব সিন্ধ এন্ড দেয়ার ইটারনাল লাভ ষ্টোরিস থ্রু দি পোয়েট্রি অব শাহ আবদুল লতিফ ভিট্টাই"topyaps.com। ২১ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২০ 
  12. "সিন্ধি ফোক টেলস ইন ইংলিশ"sindhisangat.com। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২০