সিকান্দার বেগম (১০ই সেপ্টেম্বর ১৮১৭ - ৩০শে অক্টোবর ১৮৬৮), ১৮৬০ সাল থেকে ১৮৬৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ভোপালের নবাব ছিলেন। যদিও ১৮৪৪ সালে তিনি তাঁর নয় বছর বয়সী কন্যা শাহজাহান বেগমের রাজ প্রতিনিধি নিযুক্ত হন, তবে ১৮৬০ সালে তিনি নবাব হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়, সিকান্দারের ব্রিটিশপন্থী অবস্থান তাঁকে নাইট গ্র্যাণ্ড কমাণ্ডারে পরিণত করেছিল। ১৮৬৩ সালে, তিনিই প্রথম ভারতীয় শাসক যিনি হজ পালন করেছিলেন। সিকান্দার রাজ্যে অনেক সংস্কার আনেন, যার মধ্যে ছিল একটি টাঁকশাল, একটি সচিবালয়, একটি সংসদ এবং একটি আধুনিক বিচার বিভাগ তৈরি করা।

সিকান্দার বেগম
সিকান্দার বেগম, আনুষ্ঠানিক পোশাক এবং একটি মুকুট পরা
ভোপালের নবাব
রাজত্ব৩০শে সেপ্টেম্বর ১৮৬০ – ৩০শে অক্টোবর ১৮৬৮
পূর্বসূরিশাহজাহান বেগম (প্রথম রাজত্ব)
উত্তরসূরিশাহজাহান বেগম (দ্বিতীয় রাজত্ব)
জন্মসিকান্দার বেগম
(১৮১৭-০৯-১০)১০ সেপ্টেম্বর ১৮১৭
গওহর মহল, ভোপাল রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ, ভারত)
মৃত্যু৩০ অক্টোবর ১৮৬৮(1868-10-30) (বয়স ৫১)
মতি মহল, ভোপাল রাজ্য, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান মধ্য প্রদেশ, ভারত)
সমাধি
ফারহাত আফজা বাগ, ভোপাল
পতিজাহাঙ্গীর মোহাম্মদ খান
বংশধরশাহ জাহান বেগম
পিতানাসির মোহাম্মদ খান
মাতাকুদসিয়া বেগম, ভোপালের বেগম
ধর্মইসলাম

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

সিকান্দার ১৮১৭ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের ভোপাল রাজ্যের গওহর মহলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মা, নাসির মুহাম্মদ খান এবং ভোপালের বেগম কুদসিয়া বেগম, রাজ্যের প্রাক্তন নবাব ছিলেন।

রাজত্ব

সম্পাদনা
 
নবাব সিকান্দার বেগমের নামে প্রণীত ভোপাল রাজ্যের রূপালী মুদ্রা।

১৮৪৭ সালের ৩রা জানুয়ারী, সিকান্দার বেগমের নয় বছর বয়সী কন্যা শাহজাহান বেগম ভোপালের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ভারতের গভর্নর-জেনারেলের রাজনৈতিক প্রতিনিধি জোসেফ ডেভি কানিংহাম সেই বছরের ২৭শে জুলাই ঘোষণা করেন যে সিকান্দারকে রাজ প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়েছে। গভর্নর-জেনারেল তাঁকে রাজ্যের নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করেন।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়, সিকান্দার ব্রিটিশদের পক্ষে ছিলেন। ভোপালে বিদ্রোহ রোধ করার জন্য, তিনি ব্রিটিশ-বিরোধী পুস্তিকা প্রকাশনা ও প্রচার নিষিদ্ধ করেছিলেন, তাঁর গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করেছিলেন এবং ব্রিটিশ-বিরোধী সৈন্যদের পক্ষ পরিবর্তনের জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন। তবে আগস্ট মাসে, সিপাহিদের একটি দল সেহোর এবং বেরাসিয়ায় ব্রিটিশ গ্যারিসন আক্রমণ করে; তাঁর ব্রিটিশপন্থী অবস্থানের কারণে রাজ্যে তাঁর প্রতি ক্ষোভ বেড়ে যায়। সিকান্দারের মায়ের উৎসাহে সিপাহিদের সেই দলটি ডিসেম্বর মাসে তাঁর প্রাসাদ ঘিরে ফেলে। সিকান্দার তাঁর জামাতা উমরাও দৌলাকে তাদের সাথে আলোচনার জন্য পাঠান। যখন তিনি ঘোষণা করলেন যে তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে, তখন সৈন্যরা তাদের অবরোধ শেষ করে। ১৮৬১ সালে, বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশপন্থী অবস্থানের জন্য সিকান্দার নাইট গ্র্যাণ্ড কমাণ্ডার পুরস্কার পেয়েছিলেন।[] ১৮৬০ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশরা সিকান্দারকে ভোপালের নবাব হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পরের বছর তাঁর সামরিক স্যালুটের সংখ্যা ১৯টি বন্দুকে উন্নীত করা হয়।

১৮৬৩ সালে, সিকান্দার ছিলেন প্রথম ভারতীয় নবাব, যিনি হজ পালন করেছিলেন। তাঁর সাথে প্রায় ১,০০০ জন লোক ছিল, যাদের বেশিরভাগই মহিলা। সিকান্দার তাঁর ভ্রমণের একটি স্মৃতিকথা উর্দুতে লিখেছিলেন এবং ১৮৭০ সালে এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন যে মক্কাজেদ্দা শহরগুলি "অপবিত্র", আরব ও তুর্কিরা "অসভ্য" এবং তাদের "কোনও ধর্মীয় জ্ঞান নেই।" স্মৃতিকথায় তুর্কি শুল্ক কর্মকর্তাদের সাথে তাঁর সংঘর্ষের একটি উপাখ্যানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যারা তাঁর আনা সবকিছুর উপর শুল্ক আরোপ করতে চেয়েছিল।[]

সিকান্দার রাজ্যটিকে তিনটি জেলা এবং ২১টি উপ-জেলায় বিভক্ত করেছিলেন। প্রতিটি জেলার জন্য একজন রাজস্ব কর্মকর্তা এবং প্রতিটি উপ-জেলার জন্য একজন প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি রাজ্যের  ৩ মিলিয়ন (ইউএস$ ৩৬,৬৬৯.৯) ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। সিকান্দার একটি কাস্টমস অফিস, একটি সচিবালয়, একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, একটি টাঁকশাল এবং একটি ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা রাজ্যকে ভারতের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করেছিল। তিনি একটি আধুনিক বিচার বিভাগও তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে একটি পুনরাবেদন আদালত (কোর্ট অফ অ্যাপীল) ছিল।

তিনি রাজ্যের প্রতিটি জেলায় মেয়েদের জন্য ভিক্টোরিয়া স্কুল এবং কমপক্ষে একটি উর্দু এবং হিন্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[] ১৮৪৭ সালে সিকান্দার একটি মজলিস-ই-শুরা (সংসদ) চালু করেন। অভিজাত ও বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল আইন পাস করা ও সুপারিশ করা এবং সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া। ১৮৬২ সালে, তিনি ফার্সির পরিবর্তে উর্দুকে আদালতের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন।

স্থাপত্য

সম্পাদনা

সিকান্দার লাল বেলেপাথরের তৈরি একটি মতি মসজিদ নির্মাণ করেন,[] এবং মতি মহল ও শওকত মহল প্রাসাদ নির্মাণ করেন। দ্বিতীয়টি ছিল ইউরোপীয় এবং ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের মিশ্রণ, যার মধ্যে গথিক বৈশিষ্ট্য ছিল।[]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

১৮৩৫ সালের ১৮ই এপ্রিল সিকান্দার নবাব জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ খানকে বিয়ে করেন।[] তাঁদের এক কন্যা ছিল, শাহজাহান বেগম। তাঁর মা কুদসিয়া বেগমের মতো, সিকান্দারও একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন; তবে, তিনি নিকাব (মুখের পর্দা) পরিধান করতেন না বা পর্দা (মহিলাদের নির্জনতা) অনুশীলন করতেন না। তিনি বাঘ শিকার করতেন, পোলো খেলতেন এবং একজন তরবারিধারী, তীরন্দাজ ও অশ্বারোহী ছিলেন। সিকান্দার সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আদালত, অফিস, টাঁকশাল এবং কোষাগার পরিদর্শন করতেন।

১৮৬৮ সালের ৩০শে অক্টোবর কিডনি বিকল হয়ে সিকান্দার বেগম মারা যান। তাঁকে ফারহাত আফজা বাগে সমাহিত করা হয় এবং তাঁর কন্যা ভোপালের নবাব হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Begums Of Bhopal - Saris and a scabbard"The Telegraph। ১৬ মে ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৯ 
  2. Kashif-ul-Huda (১৪ মার্চ ২০১০)। "Nawab Sikandar Begum's Hajj memoir"Two Circles। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৯ 
  3. Podder, Tanushree (১১ নভেম্বর ২০১০)। "Fascinating Bhopal: City of Begums"The Economic Times। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৯ 
  4. "Nawab Sikander Begum"। Governor of Madhya Pradash। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা