সিংড়া উপজেলা
সিংড়া উপজেলা বাংলাদেশের নাটোর জেলায় অবস্থিত একটি উপজেলা এবং নাটোর জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা। এই এলাকাটি মোট ১২ইউনিয়নে নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় গ্রামের সংখ্যা ৪৩৯ টি এবং মৌজা ৪৪৭ টি। উপজেলাটি বর্তমানে শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে খুব অগ্রসর হচ্ছে।[২]
সিংড়া | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে সিংড়া উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩০′ উত্তর ৮৯°৮′ পূর্ব / ২৪.৫০০° উত্তর ৮৯.১৩৩° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | নাটোর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৫৩১ বর্গকিমি (২০৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৩,৬৪,৩৮২[১] |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৬৯ ৯১ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
এই প্রাচীন জনপদের গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যের ভিন্নমাত্রিক স্মারক তার প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের গৌরবে স্থাপত্য শিল্পের এক ধরনের নান্দনিক সৌন্দর্য্য। সিংড়া এক্ষেত্রে যে মোটেই পশ্চাৎপদ নয়, কতিপয় দৃষ্টি দিলে তা স্পষ্ট হবে। ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনাদি ও প্রত্নতত্ত্ব এর মধ্যে চৌগ্রামের রাজবাড়ী, তিসিখালীর মাজার, চলনবিল ও গণকবর উল্লেখযোগ্য। [৩]
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনাসিংড়া উপজেলার উত্তরে বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে গুরুদাসপুর উপজেলা, পূর্বে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা, পশ্চিমে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা।
সিংড়া উপজেলা নাটোর জেলার অন্তর্গত এবং জেলার পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এর মোট আয়তন প্রায় ৫৩১ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার মোট ১২টি ইউনিয়নে ৪৪৯ টি মৌজায় ৪৩৯ টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলাটি প্রায় ২৪০ ৩০' ও ২৪০ ৭০' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯০ ১০' ও ৮৯০ ৩০' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।[৪]
মানচিত্রে সিংড়া- নাটোর জেলার ৭ টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম উপজেলা হলো সিংড়া উপজেলা। সুন্দর মনোরম পরিবেশ আর শ্রেষ্ঠ চলনবিল নিয়ে সিংড়া উপজেলা অবস্থিত। জলপথ ও স্থল পথে সিংড়া উপজেলায় যাওয়া আসা করা যায় ইত্যাদি। [৫]
ইতিহাস
সম্পাদনাচলনবিলের বিশাল জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো, যেমনঃ- শাপলা, পদ্ম, নলখাগড়া ও হোগলা ইত্যাদি। আরেক ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মাতো যার ফল ত্রিভুজাকৃতির, যা পানিফল নামে পরিচিত। মোঘল বাদশাহ আকবরের রাজত্বের সময় পূর্বাঞ্চল হতে কর আদায়ে চলনবিলের মধ্যদিয়ে নৌযানের সাহায্যে যাতায়াত করতে গিয়ে ঐ পানি ফলের এলাকায় এসে নৌযানগুলো বাধাপ্রাপ্ত হত। মোঘল যাত্রীগণ উক্ত পানি ফলের খোসা ছাড়িয়ে ভীত সম্ভ্রস্তভাবে কিঞ্চিত আস্বাদনে দেখলেন এটা একটা সুস্বাদু ফল বিশেষ। এরপর শুরু হয় নাম দেয়ার পালা। মোঘল দরবারে ঐতিহ্যবাহী খাবার সিঙ্গারার মত হওয়ায় এর নাম দেয়া হয় সিঙ্গার। আর বিলের এ অংশটির নাম দেয়া হয় “সিঙ্গারা চলনবিল”। কালের বিবর্তনে এর নাম সিংড়া’য় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে সিংড়া নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। ১৯৯৮ সালে উপজেলা সদর নিয়ে সিংড়া পৌরসভা গঠিত হয়।[৬]
নাটোরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় ১৭৪৮ খ্রিঃ রাজা রামাকান্তের মৃত্যুর পর রাজ্য পরিচালনায় পরামর্শদাতা মহীয়সী রানী ভবানীর হাতে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাজশাহীর (নাটোর) জমিদারীর ভার অর্পণ করেন। রানী ভবানী নিঃসন্তান স্বামীর জমিদারী প্রাপ্ত হন ও অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে ১২,৯৯৯ বর্গমাইল বিস্তৃত এই রাজশাহী (নাটোর) জমিদারী অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সহিত পরিচালনা করেন। রাণী ভবানীর এই রাজ্যের রাজধানী ছিল নাটোর।[৬]
নাটোর রাজবাড়ী থেকে বগুড়া জেলার পীঠস্থান ভবানীপুরের সংগে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রানী ভবাানী ৩০ মাইল লম্বা রাস্তা ও অনেক পুল নির্মাণ করেন। পথিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপন ও পান্থশালা নির্মাণ করেন। এ রাস্তাটি রানী ভবানী জাংগাল নামে পরিচিত। রাস্তাটি নাটোর থেকে শুরু হয়ে সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ও পাকুরিয়ার পাশ দিয়ে বিনগ্রাম, বামিহাল, রানীহাটের মধ্যেদিয়ে ভবানীপুরে গিয়ে পৌঁছেছে। তিনি পাকুরিয়াতে ৩০০ টি পুকুর খনন করেন। বিনগ্রামের নিকট রানীর জাংগালের উপর প্রতিষ্ঠিত পুলটি এখনও রানী ভবানীর কীর্তি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। অবশিষ্ট সবই ১৩০৪ বাংলা সালের প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।[৬]
কলম গ্রামের এক কৃতি সন্তান দেওয়ান দয়ারাম রায়, রাজা রমাকান্তের মন্ত্রী ছিলেন যিনি সে সময় ওয়ারেন হেষ্টিংস বলে পরিচিত ছিলেন। নানা কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে তিসিখালীর মাজার নিয়ে; সেখানে এখনও ঘাসী দেওয়ান পীর স্মরণে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চৌগ্রামের ভগ্নপ্রায় রাজদরবার এই অঞ্চলের উজ্জ্বল ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী। সিংড়ায় জন্মেছিলেন অঙ্কের যাদুকর ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত সি, আই, ই, ও স্যার উপাধী খ্যাত যদুনাথ সরকার, ভারতীয় কংগ্রেসের বঙ্গদেশ শাখার সেক্রেটারি শরবিন্দু ভট্রাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অগ্রপথিক মাদার বক্স।[৬]
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাএই উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এগুলো হলো:
- ১ নং সুকাশ ইউনিয়ন
- ২ নং ডাহিয়া ইউনিয়ন
- ৩ নং ইটালী ইউনিয়ন
- ৪ নং কলম ইউনিয়ন
- ৫ নং চামারী ইউনিয়ন
- ৬ নং হাতিয়ান্দহ ইউনিয়ন
- ৭ নং লালোর ইউনিয়ন
- ৮ নং শেরকোল ইউনিয়ন
- ৯ নং তাজপুর ইউনিয়ন
- ১০ নং চৌগ্রাম ইউনিয়ন
- ১১ নং ছাতারদিঘী ইউনিয়ন
- ১২ নং রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনাসিংড়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা - ৩,৬৪,৩৮২ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ১,৮২,৫৮৬ জন ও মহিলা ১,৮১,৭৯৬ জন ও পরিবারের সংখ্যা ৮৮,৭৯১ টি (আদমশুমারি ২০১১)।[৭]
ঐতিহ্য
সম্পাদনাএকটি প্রাচীন জনপদের গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যের ভিন্নমাত্রিক স্মারক তার প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ের গৌরবে স্থাপত্য শিল্পের নান্দনিক সৌন্দর্য। সিংড়া এক্ষেত্রে যে মোটেই পশ্চাৎপদ নয় কতিপয় দৃষ্টি দিলে তা স্পষ্ট হবে। ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনাদি ও প্রত্নতত্ত্ব এর মধ্যে চৌগ্রামের রাজবাড়ী, তিসিখালীর মাজার, চলনবিল ও গণকবর উল্লেখযোগ্য।[৮]
সিংড়া উপজেলা সংস্কৃতির এক পীঠস্থান। অধিকাংশ জনগোষ্ঠী শিল্প ও সাহিত্যের অনুরাগী। বিখ্যাত অনেক কবি সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মভূমি এই উপজেলায়। এখানকার মানুষ বাংলা ভাষা-ভাষী। মুসলমান, হিন্দু, আদিবাসী সকলে মিলে একত্রে সংস্কৃতি চর্চা করে। এখানে শিল্পকলা একাডেমীসহ বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও দল রয়েছে। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে উপজেলা চত্বরে অনেক আনন্দ ও উৎসব মূখর পরিবেশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রানবন্ত্য এ মেলায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে।[৯]
সংস্কৃতি
সম্পাদনাসিংড়া উপজেলা সংস্কৃতির এক পীঠস্থান। অধিকাংশ জনগোষ্ঠী শিল্প ও সাহিত্যের অনুরাগী। বিখ্যাত অনেক কবি সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্মভূমি এই উপজেলায়। এখানকার মানুষ বাংলা ভাষা-ভাষী। মুসলমান, হিন্দু, আদিবাসী সকলে মিলে একত্রে সংস্কৃতি চর্চা করে। এখানে শিল্পকলা একাডেমীসহ বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও দল রয়েছে। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে উপজেলা চত্বরে অনেক আনন্দ ও উৎসব মূখর পরিবেশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রানবন্ত্য এ মেলায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে।[৯]
নাটোরের লোকজ সংস্কৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্য অফুরন্ত। যে কোনো প্রাচীন জনপদ সচরাচর লোকসংস্কৃতিতে ধনী হয়ে থাকে। নাটোর জেলাও তার ব্যতিক্রম নয়।নাটোরের শহরাঞ্চলের ক্ষুদ্র গন্ডী পেরিয়ে গেলেই পাওয়া যায় লোকজ সংস্কৃতির বেগবান ধারার খোঁজ। অন্যদিকে আছে লোকজ বা গ্রাম্য ধাঁধা যাকে নাটোরের কোনো কোনো অঞ্চলে ‘মান’ বলা হয়।সাধারণ পল্লীবাসী মানুষকে মোটাবুদ্ধির বলে অবজ্ঞা করার যে স্বভাব আমাদের শহুরে পন্ডিতদের মধ্যে দৃশ্যমান, তার প্রকৃষ্ট প্রতিবাদ হচ্ছে পল্লীবাসী সাধারণ মানুষ কর্তৃক ধাঁধার সৃষ্টি। কোনো জিনিসকে বা বস্ত্তকে প্রত্যক্ষভাবে না বলে ধাঁধার মাধ্যমে প্রহেলিকা সৃষ্টি করে বলাটা একধরনের উচ্চাঙ্গের শিল্পসৃষ্টিও বটে। নাটোর জেলার ধাঁধাসমূহ শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বড়দেরও বিমল আনন্দের সামগ্রী।মানুষের, বিশেষত শিশু-কিশোরদের বুদ্ধিবৃত্তির প্রখরতা বৃদ্ধি ও জ্ঞান অনুশীলনের প্রকৃষ্ট পন্থা। গ্রামাঞ্চলের মুরুবিবরা সন্ধ্যায় সারাদিনের কর্মক্লান্ত দেহ এলিয়ে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে দাওয়ায় বা উঠোনে সপ-পাটি-মাদুর বিছিয়ে শুয়ে-বসে ধাঁধা বা মান ভান্ডারের আসর বসান। যে বা যারাই এই ধাঁধাগুলির সৃষ্টি করুক না কেন, তাদের মেধা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের কথা ভাবলে মাথাটা শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে। চকিত বুদ্ধির ঝিলিক, পরস্পর সম্পৃক্ত বস্ত্তগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক আর তীব্র কৌতূকের ঝলকানির সমন্বয় দেখা যায় এই ধাঁধাগুলিতে।
ধাঁধার পাশাপাশি নাটোর জেলার সর্বত্র লোকে মুখে মুখে অসংখ্য প্রবাদ-প্রবচন আউড়ে থাকে। এই প্রবাদ-প্রবচনে কৃষি, আবহাওয়া, সমাজতত্ত্ব, সামাজিক অবস্থাসহ জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার সারাৎসার উৎসারিত হয়েছে। সরদার আবদুল হামিদ লিখেছেন- ‘প্রবাদ প্রবচন লোকসাহিত্যের মূল্যবান সামগ্রী। সরস ছন্দবহ ভাবব্যঞ্জক বাক্য বা বাক্যসমষ্টিই প্রবাদ। অনুভূতিপ্রবণ মানবমনের অভিজ্ঞতা হতে প্রবাদের জন্ম। প্রবাদকে খন্ড জ্ঞানভান্ডার বলা চলে। এক একটি প্রবাদবাক্য হীরার টুকরার ন্যায় দামী। সাগরের বুকে যেমন মণি-মুক্তা লুক্কায়িত থাকে, তেমনি মানবমনের গহীনে যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত হয় প্রবাদরূপ রত্নরাজি। প্রবাদের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি চিরন্তন জ্ঞানের কথা, অজানা রহস্যের কথা, আনন্দঘন হাস্যরস ও কৌতুকের কথা যা মনকে সাময়িক আনন্দে উৎফুল্ল করে তোলে। তাই প্রবাদ বাক্য যেমন আনন্দের খোরাক, তেমনই এর উপদেশমালা চিন্তার খোরাকও বটে। দেখা যায়, পল্লীর প্রবীণ লোকেরা কথায় কথায় প্রবাদ আওড়ান। এগুলো যেন তাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনে তাদের মুখ দিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বেরিয়ে আসে রাশি রাশি প্রবাদ বচন।স্থান-কাল-পাত্রভেদে কোথায় কোনটি প্রযোজ্য, অন্তর-ভান্ডার খুঁজে বের করতে তাদের আদৌ বেগ পেতে হয় না। (দ্রষ্টব্য: চলনবিলের লোকসাহিত্য। প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা।)[১০]
নাটোর জেলার মাদার গান
সম্পাদনামাদারের গান বা মাদার গান নাটোর জেলার নিজস্ব লোকসঙ্গীত হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্য কোনো অঞ্চলে এই গানের আসর বসলেও তা মূলত নাটোর জেলা থেকেই ধার করা।নাটোরের সর্বত্র মাদারগানের আসর ছিল একসময় নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। মাদারের গান বা মাদার পীরের গান অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল একসময়। যদিও মাদার পীর নামক কোনো পীরের দরগা বা মাজার নেই কোথাও, তবু মাদার পীরের নামে মানত বা মানসিক করার চল আছে জেলার সর্বত্র। বিশেষ করে নাটোর জেলা সদর ও চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে। সন্তান কামনায়, রোগ-শোক থেকে নিরাময় কিংবা বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় লোকে মাদার পীরের নামে মানসিক করে। তারা পীরের দোহাই দিয়ে মানত করে যে বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে মাদারেরর গানের আসর বসাবে। একসময় এই অঞ্চলের গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, উঠোনে-দাওয়ায় আসর বসতো মাদারগানের। পথে-প্রান্তরে প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনিত হতো মাদার গানের সুর। পথ চলতে, লাঙল দিতে, জমি নিড়াতে, গরু চরাতে- সর্বত্রই মানুষের গলা চিরে বেরুত এই মাদার গানের ধূয়া। বিশেষ করে আসর বসতো মহররমের চাঁদ উঠলে, কলেরা-বসন্ত দেখা দিলে, জমিতে মড়ক দেখা দিলে। মাদার পীর কোনো বাস্তব পীর নন। তার অস্তিত্ব কাল্পনিক, মারেফতি ধরনের। কিংবদন্তি আছে যে হারুত-মারুত নামের দুই ফেরেশতা একবার পৃথিবীতে আসেন জীবন পর্যবেক্ষণ করতে। তারা এসে এক সুন্দরী নারীর প্রেমে পতিত হন। তারা সেই নারীর প্রেমে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েন যে, ভুলেই যান তারা ফেরেশতা। তাদের প্রেমের ফলেই জন্ম হয় মাদার পীরের। তার জন্মের অব্যবহিত পরেই ফেরেশতারা খোদার ইচ্ছায় নিজেদের ভুলে যাওয়া সত্ত্বার কথা মনে করতে পারেন ফের। তারা এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যান আসমানে তাদের নিবাসে ও কর্মক্ষেত্রে। একদিন হযরত আলী (রাঃ) শিকারে এসে কাপকুপের জঙ্গলে কুড়িয়ে পান শিশুকে। পুত্রের মতো লালন-পালন করেন। পরবর্তীতে মারফতি তরিকায় কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন মাদার পীর। এবং এসমে আজমের মাধ্যমে দম বা শুমার ধরে অনেক অসাধ্য সাধনের শক্তি অর্জন করেন। অর্জিত এই শক্তি বা মাহাত্ম্য মানবকল্যাণে লাগানোর জন্য তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন দেশে-দেশান্তরে। তার এক-একটি কেরামতি নিয়ে এক-একটি পালা রচিত হয়েছে। এইরকম তার কয়েকটি পালার কথা জানা যায়। যেমন জিন্দাশাহ মাদার, আসকান মাদার, তালেমুল মাদার, খাতেমুল মাদার ইত্যাদি। এক এক পালায় এক এক নামে আবির্ভাব ঘটে শাহ মাদার পীরের। যেমন- ‘সমশের গোলাব’ পালায় রুহানী বা আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে মাদার পীর পাল্লা দেন বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)-র সাথে। রাজা ছিলছত্র একবার শিশু ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন (রঃ)-কে চুরি করে নিয়ে যায় তার দেশে। রাজা ছিলছত্রের দেশ হচ্ছে আরব মুলুক থেকে অনেক দূরে- সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। হাসান-হোসেনকে মুক্ত করতে সেই দেশে যান মোহাম্মদ হানিফা। কিন্তু তিনিও বন্দী হন রাজা ছিলছত্রের সৈন্যদের হাতে। এই সংবাদে ক্রুদ্ধ হয়ে ছুটে যান মাদার পীর। তিনি বন্দী করেন রাজা ছিলছত্রকে। কিন্তু হাসান-হোসেনকে কোথায় বন্দী করে রেখেছে, তা কিছুৃতেই জানায় না রাজা ছিলছত্র। তখন মাদার পীর তার ঝোলার মধ্যে ভরে ছিলছত্রের গোটা রাজ্যটাই তুলে আনেন। তারপর মা ফাতেমা (রাঃ) এর সামনে এনে মেলে ধরেন ঝোলা এবং খুঁজে নিতে বলেন তাঁর পুত্রদের।
আর সব লোকগীতির মতো মাদার গানের আসর বসে খুব সাদাসিধেভাবে। সামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে পাটি-সপ-মাদুর বিছিয়ে বসে এই গানের আসর। কলা-কুশলীর সংখ্যাও বেশি নয়। প্রধান চরিত্র দুইজন। মাদার পীর এবং তার শিষ্য জুমল শাহ। এছাড়া আছে কয়েকজন দোহার-বাইন। দোহার-বাইনরা জটলা করে বসে আসরের মাঝখানে। তাদের হাতে থাকে খঞ্জনি। তাদের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে গান গায় মাদার পীর ও জুমল শাহ। তাদের হাঁক-গানের সাথে ধূয়া ধরে দোহাররা। সওয়াল-জবাব-বিবৃতি সবকিছু করে মাদার জুমল দুইজনই। এদের পেছনে পেছনে গান-বাজনার তালে তালে নাচে নর্তকী। মাদার গানের নর্তকীর স্থানীয় নাম ছুকরি। ধুতি-শাড়ি-থান পরে পুরুষরাই ছুকরি সাজে এই গানে। দোহারদের বা জুমল শাহের জন্য অন্য কোনো সাজ-পোশাক নেই। শুধু মাদার পীরের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ পোশাকের। তার পরনে থাকে অজানুলম্বিত আলখাল্লা, গলায় তসবিহ, মাথায় থাকে শিরস্ত্রাণ, হাতে আশা (লাঠি)।[১০]
পদ্মপুরাণ বা মনসার গান ও ভাসানযাত্রা
সম্পাদনাএই দুই পালার মধ্যে সাযুজ্য থাকলেও নাটোরের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।পদ্মপুরাণ নাটোর অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য কাব্য আলেখ্য। সাপের দেবী মনসা বা পদ্মার নাম অনুসারে এই নামকরণ। এই গান বর্ণনামূলক। স্থানীয় লোকবিশ্বাস এই যে প্রতি বছর মনসার গানের আয়োজন করলে সর্পাঘাতে পরিবারের কারো অকাল মৃত্যু ঘটবে না। মনসা পূজা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, শহরের কোনো কোনো বাড়িতে এখনো পদ্মপুরাণের আসর বসানো হয়। এটি নিতান্ত বর্ণনামূলক গান। সুতানাগের দংশনে লক্ষীন্দরের মৃত্যু থেকে শুরু করে আগাগোড়া বেহুলারই কাহিনী। প্রথম দিকে একটানা সাপের গীত আর সাপের বর্ণনা। নানা প্রকার ও নানা জাতের বাস্তব ও কাল্পনিক সাপের বর্ণনায় পূর্ণ এই গানের প্রথম অংশ। শেষে বর্ণনা করা হয় ভুরা বা ভেলা ভাসিয়ে বেহুলার ইন্দ্রপুরীতে গমন ও মৃত স্বামীর প্রাণ ফিরে পাওয়ার বর্ণনা।
অন্যদিকে ভাসান গান মূলত চলনবিল অঞ্চলের পদ্মপুরাণের একটি রূপান্তর। জনশ্রুতি আছে যে চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা মধুকর যে কালীদহ সাগরে নিমজ্জিত হয়, চলনবিলই সেকালের সেই কালীদহ সাগর। ভাসান গানের মূল পর্ব বেহুলা আর লক্ষীন্দরের গীতগাথা হলেও এই কাহিনীর শাখা-প্রশাখা আছে অনেক। যেমন- ধন্মন্ত সওদাগর, শ্রীমন্ত সওদাগর, কুটিশ্ সওদাগর, কুটিশ্ সওদাগরের স্ত্রী কমলা সুন্দরী প্রভৃতি।[১০]
বিয়ের গীত
সম্পাদনাবিয়ের সময় নাটোরের গ্রামাঞ্চলে মেয়ে মহলে নৃত্য-গীতের প্রচলন খুবই বেশি।গ্রামাঞ্চলে বিয়ের গান এখনো স্বমহিমায় তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। বিয়ের গীত শুরু হয় পাত্র ও কন্যাপক্ষের কথা পাকাপাকি হওয়ার সময় থেকে। চলতে থাকে বিবাহের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত। কখনো কখনো সাতদিন যাবৎ চলতে থাকে এই ধরনের অনুষ্ঠানমালা।বিবাহের তারিখের তিন দিন আগে বর ও কনের বাড়িতে প্রথমে ‘ঢেঁকিপূজা’, তারপরের দিন ‘হেঁসেল পূজা’ এবং পরের দিন ‘খরতাগা’ করা হয়। উল্লেখ্য হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বিয়ে বাড়িতে এই অনুষ্ঠানগুলি করা হয়। এখন হয়তো মুসলমান পরিবারে পূজা শব্দটি উচ্চারণ করা হয় না, কিন্তু সকল উপাচার পালন করা হয় সবিস্তারে।
নাটোরের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে একাধিক নৃত্য-গীতের সমাহার দেখা যায়।খরতাগার দিন বর ও কনের দাদি, নানি, সম্পর্কিত ভাবীরা, জেলেনী ও মেথরানীর সাজে সঙ সেজে নাচে আর গীত গায়। জেলেনীর মাথায় থাকে মাছের ডালি, মেথরানীর মাথায় বালতি, কোমড়ে বাঁধা ঝাঁটা। বরযাত্রী এসে পড়লে বরের পাশে সবসময় বসে থাকে বরের ভগ্নিপতি স্থানীয় কেউ, যার সাথে ঠাট্টার সম্পর্ক চালু। স্থানীয় ভাষায় তাকে বরের ‘কোলদারা’ বলা হয়।
এছাড়াও নাটোর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মুর্শিদী গান, ধূয়া গান, বারমাসি গান, জারিগান, নৌকা বাইচের গান, লোককাহিনী, মুখা খেলা, বিচ্ছেদ গান, টপ্পা গান, কবি গান, যোগীর গান, হাপু গানসহ লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান। কিছু কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কিছু দ্রুত বিলীয়মান। সেগুলি সম্পূর্ণরূপে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক ও ধারাবাহিক কর্মযজ্ঞ। আমাদের সার্বিক সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তির লক্ষ্যে এই লোকজ সংস্কৃতি পালন করতে পারে প্রভাবকের ভূমিকা। শুধু সেই কারণে হলেও আমাদের অগ্রসর হতে হবে লোকজ সংস্কৃতির যাবতীয় উপাদানের সংগ্রহে ও সংরক্ষণে। লোকসংস্কৃতির অন্তর্গত পালা-গান-নৃত্য-খেলা প্রভৃতি শুধু লিখিতভাবে সংগ্রহ করলে তা অনেকটা মূল্যহীন হবে। কেননা লিখিতভাবে শুধু বাণীগুলিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব।এইসব গীতের কোনো স্বরলিপি না থাকায় শুধু বাণী থেকে সুর করা অসম্ভব। তাই সংরক্ষণের জন্য লিখিত পান্ডুলিপির পাশাপাশি অডিও-ভিজুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।[১০]
শিল্পীগণ
সম্পাদনানাটোরের লোকজ সংস্কৃতিকে যারা লালন করছে সেইসব শিল্পীদের নাম, ঠিকানা নিম্নে উদ্ধৃত হলোঃ[১০]
মনসার গান বা ভাসান যাত্রা
সম্পাদনা- বিপদ হালদার (দলনেতা), আকবর কবিরাজ, সিধু কবিরা, অনুপ ঘোষ (বায়েন), গ্রাম- দিঘাপতিয়া, নাটোর সদর উপজেলা
- গজেন্দ্র মন্ডল (দলনেতা), নরেন্দ্র মন্ডল, শ্রীদাম মন্ডল, অজিত দাস, গ্রাম- ভূষণগাছা, নাটোর সদর উপজেলা
- ইদু কবিরাজ (দলনেতা), আকবর কবিরাজ, হযরত কবিরাজ, আনিসুর রহমান, আলাল, দুলাল, গ্রাম- দিঘাপতিয়া, নটোর সদর উপজেলা
মাদারের গান
সম্পাদনা- আলন ও তার দল, দিঘাপতিয়া, নাটোর সদর উপজেলা
- ইছারুদ্দিন, বনবেলঘরিয়া, নাটোর সদর উপজেলা
- সোনা মিয়া, তেলটুপি, চাপিলা, গুরুদাসপুর
- রমজান, চকপুর, সিংড়া
- রোজিনা বেগম, খাজুরা, নাটোর সদর
বারোসা গান
সম্পাদনা- রিয়াজ পাগল ও তার দল, রশিদপুর, চাপিলা, গুরুদাসপুর
মুর্শিদী গান
সম্পাদনাআব্দুল মালেক দেওয়ান, বিনগ্রাম, সিংড়া | আব্দুল খালেক দেওয়ান, বিনগ্রাম, সিংড়া আশরাফ, রমজান, সাঁঐল, নাটোর সদর
নাটোরের আদিবাসী সম্প্রদায়
সম্পাদনাবাংলাদেশের প্রাচীন জনগোষ্ঠী হলো আদিবাসী সম্প্রদায় । কোন দেশের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাহক হলো সেদেশের আদিবাসীরা । এদেশের প্রতিটি জেলাতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । নাটোরেওরয়েছে তাদের অবস্থান ।এখানে আদিবাসী সম্প্রদায় আছে ২২/২৩ টি। বাংলাদেশের অন্যান্য অনেক অঞ্চলের তুলনায় নাটোরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ।তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান। সময়ের পরিক্রমায় ও অন্যান্য সংস্কৃতির চাপে হারিয়ে যেতে বসেছে সহস্র বছরের পুরনো এ ঐতিহ্য তাদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও আজ সে ভাষা তারা ভুলতে বসেছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এগুলোর বেশিরভাগেরই কোন লিখিত রূপ তথা বর্ণমালা নেই এবং এসব ভাষা সংরক্ষণের জন্য পূর্বে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কিন্তু তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ আমাদের জাতীয় কর্তব্য । নাটোরের ৬টি উপজেলাতে বসবাসরত মোট আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রায় ৪৫ হাজার । এদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নাটোরে আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা(আসউস) নামে একটি সংগঠন রয়েছে ।[১০]
নাটোরের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো হচ্ছে : ওঁরাও, পাহান, পাহাড়ী, সিং, মাহাতো, মুন্ডারী, সাঁওতাল, লোহার, তেলী, রায়, চৌহান, মাল পাহাড়ী, বাগতি, রামদাস, রবিদাস, মল্লিক, গারো, হাড়ী, তুড়ি, ভান্ডারী, ঋষি, কোনাই, মালো প্রভৃতি।
উপজেলাভিত্তিক আদিবাসীদের বসবাস
সম্পাদনাউপজেলা | আদিবাসীদের নাম |
সদর | ওঁরাও, পাহান, সিং, মাহাতো, মুন্ডারী, সাঁওতাল, পাহাড়ী, লোহার, তেলী, রায়, চৌহান, মাল পাহাড়ী ভান্ডারী, বাগতি |
বড়াইগ্রাম | ওঁরাও, মাহাতো, পাহাড়ী, মাল পাহাড়ী, রামদাস, রবিদাস, মালো |
বাগাতিপাড়া | বাগতি, রামদাস, রবিদাস, ওঁরাও, পাহাড়ী, সাঁওতাল |
গুরুদাসপুর | ওঁরাও, পাহান, সিং, মাহাতো, রায়, মুন্ডারী, মল্লিক |
লালপুর | বাগতি, পাহাড়ী, মাল পাহাড়ী, রামদাস, রবিদাস, সিং |
সিংড়া | সিং, ওঁরাও, মাহাতো, লোহার, কোনাই |
ধর্ম ও সংস্কৃতি
সম্পাদনাআদিবাসীরা মূলতঃ প্রকৃতি পূজারী। প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে তারা বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে। এসব উৎসবের সাথে জড়িয়ে থাকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, শুভ-অশুভ বোধ। তারা মূলত: সনাতন ধর্মের অনুসারী। এছাড়াও অল্প কিছু সংখ্যক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী রয়েছে। আদিবাসীদের নিজস্ব কিছু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। এরা মূলত: প্রকৃতির সাথে মিল রেখে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। বিশেষ কিছু কাজের প্রারম্ভে তারা এসব উৎসব করে থাকে। আবার জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ, পরিবারের শান্তির উদ্দেশ্যেও তারা বিশেষ কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। বিবাহ,মৃত্যু, শ্রাদ্ধ, সন্তানের জন্ম ইত্যাদি উপলক্ষ্যে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করেন । এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কারাং উৎসব, ধান বান গাড়ী, শহরাই উৎসব, পুংটাডী, ডান্ডা-কাটনা, ফাগুয়া। এছাড়াও সনাতন ধর্মের পূজা পার্বণ পালন করে থাকে ।
ধান বান গাড়ি উৎসব
সম্পাদনাধান লাগানো ও কাটার সময় তারা এ উৎসব পালন করে থাকে । এসময় তারা মাদল-ঢোলক ও নিজস্ব কিছু বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নিজস্ব ভাষায় নৃত্য-গীত উৎসবে মেতে উঠে । অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব । এসময় তারা বিভিন্ন আড্ডায় মেতে উঠে । এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার হারিয়া পান করে ।যেসব আদিবাসী এসব উৎসব পালন করে থাকে তারা হলো ওরাও, পাহান, মুন্ডারী, মাহাতো, সিং, লোহার ।
কারাম উৎসব
সম্পাদনাএটি মূলতঃ ডাল পূজা । প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এ পূজা করা হয়ে থাকে । তারা বিশ্বাস করে প্রকৃতি দেবী সন্তুষ্ট হয়ে ফুলে ফলে ভরিয়ে তুলবে তাদের চারপাশের গাছপালা । ভাদ্র আশ্বিন মাসে গাছের ডাল কেটে পূজা দেয়ার মাধ্যমে তারা এ উৎসব পালন করে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা বিভিন্ন নাচ-গানের আয়োজন করে । আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে এ উৎসব পালন করে থাকে । যেসব আদিবাসী এসব উৎসব পালন করে থাকে তারা হলো ওরাও, পাহান, মুন্ডারী, মাহাতো, সিং, লোহার ।
সহরাই উৎসব
সম্পাদনাঅধিক ফলনের আশায় আদিবাসীরা সহরাই উৎসব পালন করে । কার্তিক মাসে এই উৎসব পালিত হয় । এই উৎসবে কৃষি কাজের যন্ত্রপাতি যেমন কাস্তে, কোদাল, নিড়ানী, লাঙল ও গরুকে পূজা করা হয় । এ পূজা হয়ে থাকে গোয়াল ঘরে । পূজা উপলক্ষ্যে গরুর জন্য বিশেষ খাদ্য প্রস্ত্তত করা হয় । এসকল রান্নার কাজ গোয়াল ঘরে করা হয়ে থাকে । পূজা শেষে প্রসাদ হিসাবে সকলের মধ্যে সে খাবার বিতরণ করা হয় । যেসব আদিবাসী এসব উৎসব পালন করে থাকে তারা হলো ওরাও, পাহান, মুন্ডারী, মাহাতো, সিং, লোহার ।
পুংটাডী
সম্পাদনাগাছের নিচে সকলে একত্রিত হয়ে আদিবাসীরা এ পূজা করে থাকে । পূজার সময় তারা হাঁস, মুরগী, কবুতর,কুমড়ো, ঝিঙা ইত্যাদি বলি দিয়ে থাকে । এ পূজার উদ্দেশ্য প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করা । শুধুমাত্র পাহাড়ী আদিবাসীরা এ পূজা করে থাকে ।
ডান্ডা-কাটনা
পরিবারের শান্তির উদ্দেশ্যে এ পূজা দেয়া হয়ে থাকে । বিয়ে-শাদী, সন্তানের জন্ম, নতুন গরু-ছাগল ক্রয় উপলক্ষ্যে এ পূজার আয়োজন করা হয় । ডিম দিয়ে এ পূজা সম্পাদিত হয় । যেসব আদিবাসী এসব উৎসব পালন করে থাকে তারা হলো ওরাও, পাহান, মুন্ডারী, মাহাতো, সিং, লোহার ।
ফাগুয়া
দোল পূর্ণিমাতে সকল আদিবাসী সম্প্রদায় এ আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে । ডিম ও কবুতর দিয়ে এ পূজা করা হয় । এ পূজা উপলক্ষ্যে নাচ-গানের আয়োজন করা হয় । আগের রাতে পূজা হয় এবং পরের দিন তারা শিকারে বের হয় ।শিকারে গিয়ে খরগোশ শিকার করা হয ।
বিয়ে
তারা সাধারণতঃ নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করে না । প্রতিটি আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত । তারা নিজ গোত্রে বিয়ে করে না । বিয়ের সময় ছেলেপক্ষ হতে মেয়ের বাবাকে পণ দিতে হয় ।
খাদ্য
আদিবাসীদের নিজস্ব খাদ্যভ্যাস থাকলেও তারা বাঙালীদের সকল খাদ্যই গ্রহণ করে থাকে । তারা খরগোশ, শুকর, কুইচ্চা, ব্যাঙ, কচ্ছপ, কাকড়া, বনমোরগ, শামুক ইত্যাদি বিশেষভাবে পছন্দ করে থাকে ।
ভাষা
প্রায় প্রতিটি আদিবাসীর নিজস্ব ভাষা রয়েছে । আবার কতগুলো আদিবাসী মিলে একটি নির্দিষ্ট ভাষাতেও কথা বলে। বর্তমানে প্রতিটি আদিবাসী সম্প্রদায়ই তাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় কথা বলে । বর্তমান প্রজন্মেও অনেকেই মাতৃভাষা ভুলতে বসেছে । নাটোরের আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত ভাষাসমূহের মধ্যে রয়েছে সাদ্রি, কুরুখ,সাঁওতালি, ফারসী, নাগরী(পশ্চিমা), উড়িয়া, পাহাড়ী ইত্যাদি ।
ভাষার নাম | আদিবাসীদের নাম |
সাদ্রি | ওরাও, পাহান, মাহাতো, সিং,লোহার,তেলী, মুন্ডারী, মল্লিক |
কুরুখ | ওঁরাও(কুরুখ ওরাওদের নিজস্ব ভাষা) |
সাঁওতালি | সাঁওতালরা ফারসী ভাষায় কথা বলে । তাদের হরফ রোমান |
নাগরী(পশ্চিমা) | রবিদাস |
উড়িয়া | লোহার |
পাহাড়ী | পাহাড়ী |
আদিবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা
- আদিবাসীদের জমি বিক্রয় করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়
- বিভিন্ন সরকারি চাকুরীতে আদিবাসীদের জন্য কোটা বরাদ্দ করা আছে
- উপজেলা ভিত্তিক আদিবাসীদের সংখ্যা অনুপাতে তাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ।
আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন এনজিও কাজ করে যাচ্ছে। আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (আসউস) নাটোর জেলায় বসবাসরত আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে কাজ করে আসছে। বর্তমানে নাটোর জেলার ছয়টি উপজেলায় আসউস কাজ করে যাচ্ছে। অক্সফাম জিবির সহায়তায় আদিবাসী সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প, ব্র্যাকের সহায়তায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, অক্সফামের সহায়তায় জেন্ডার প্রকল্পসহ আসউসের সহায়তায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আদিবাসী সমাজের শিক্ষার হার বৃদ্ধি, নিজেদের অধিকার আদায়, নিজ ভাষা রক্ষা, নিজ ভূমি রক্ষা, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, আন্ত-সম্প্রদায় সমন্বয় সাধন, এ্যাডভোকেসি কার্যক্রম, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মিছিল, আদিবাসীদের ভূমি জবর-দখলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, স্যানিটারী ল্যাট্রিন স্থাপন, বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম, কিশোর-কিশোর শিক্ষা কার্যক্রম, এইচআইভি/এইডস সচেতনতা বৃদ্ধিসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আসউস কাজ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক কার্যালয় নাটোরের বঙ্গোঁজ্জ্বলে অবস্থিত ।
নাটোরের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনানাটোরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধশালী কিংবা প্রাচুর্যপূর্ণ বলা না গেলেও এই ছোট্ট শহরটিতে নিরমত্মর সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রেখেছে নিজেদের। নানা সমস্যা ও প্রতিকুলতার মধ্যেও ধরে রাখতে চেয়েছে সংস্কৃতির সুবাতাস শুধু তাই নং, উত্তরোত্তর এগিয়ে যেতে চেয়েছে উৎকর্ষর দিকে। এইসব বিবেচনায় সেই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করা দরকার। নাটোরের শিশু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো ঐকামিত্মক ভালবাসায় নীরবে কাজ করছে কিন্তু রয়ে গেছে পরিচিতির বাইরে। আমরা চাই সেগুলো পরিস্ফুটিত হোক বৃহত্তর বাইরে, উদ্ভসন ঘটুক তাদের স্বকীয় সত্তার।[১০]
মনোবীণা সংঘঃ মনোবীণা সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে জড়িত থেকে সহায়তা করছেন সর্বজনাব মীর আতাউর রহমান, মাঈদুল ইসলাম, অজিত নাথ (শংকর) দাস, প্রফেসর এম জুনাইদ, আনোয়ার হোসেন মানিক, রনেন রায়, বিমল নাথ, লুলু মিয়া প্রমূখ। প্রায় পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থী এখানে সংগীত ও তবলা বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নিয়মিত সাপ্তাহিক জলসা অনুষ্ঠিত হয়। উৎকর্ষ বৃদ্ধি বিষয়ে নানা রকম চিমত্মাভাবনা থাকলেও নানা প্রতিকূলতা সে আগ্রহকে পিছিয়ে দিয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কক্ষের অপ্রতুলতা, অনুষ্ঠানের জন্য নিজস্ব অডিটোরিয়ামের অভাব সংগঠনটির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে।
সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানঃ ১৯৭২ সালের ২ ফেব্রম্নয়ারি নাটোর শহরের শুকুলপট্টিতে সাকাম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে। মরহুম আমিনুল হক গেদু সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শ্রী প্রদ্যোত কুমার লাহিড়ী। সাকাম এর কার্যক্রম যথেষ্ট গতিশীল। নিজস্ব মঞ্চে নাটক মঞ্চায়নসহ সঙ্গীত ও অঙ্কন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর্থিক সমস্যার কারণে প্রতিষ্ঠানের মেরামত এবং উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। নাটক মঞ্চায়নের জন্য আলো, শব্দ, সেট, পোশাক, বসার আসন সংকট এবং প্রতি বছর ভাড়ার অর্থ যোগান দেওয়াই মূল সমস্যা হয়ে আছে।
শিল্পকলা একাডেমীঃ ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ললিতকলা একাডেমী পরিবর্তিত হয়ে শিল্পকলা একাডেমী নামে পরিচিত হয়। বর্তমান কার্যালয় কানাইখালীতে। পদাধিকার বলে শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি জেলা প্রশাসক। শিল্পকলা অব্যাহত রেখেছে শিল্পিত কার্যক্রম। নাচ, গান, নাটক, তবলায় উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে।
নাটোর সঙ্গীত বিদ্যালয়ঃ ১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রম্নয়ারি নাটোর সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। নাটোর জেলা পরিষদ হল সংলগ্ন আলাইপুরে সংগঠনটির কার্যালয়। তদানিমত্মন জেলা প্রশাসক জনাব শেখ আকরাম আলী বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং অধ্যক্ষ হিসেবে জনাব মাওলা বক্স আলো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঊষা খেলাঘর আসরঃ ১৯৮৯ সালের ৫ নভেম্বর গাড়িখানা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত ঊষা খেলাঘর আসর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই নন্দিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন এবং সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে সংগঠনটির কার্যক্রম সচল রয়েছে।
সেতু বন্ধনঃ সেতু বন্ধন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। বর্তমান কার্যালয় শহরের কানাইখালীতে। সাংগঠনিক সূচনায় ছিলেন সর্বজনাব মীর আতাউর রহমান, মাঈদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন মানিক, মোঃ সেদরম্নল হুদা ডেভিড, শহীদুল ইসলাম চুনী প্রমূখ। ভাড়া ঘরে সংগঠনটির কার্যক্রম চলছে। মূলত অর্থনৈতিক সমস্যাই সংগঠনটির বিকাশে প্রধান অমত্মরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলামন বাউল সংগঠনঃ ১৯৯৬ সালের ১৪ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে ভোলামন বাউল সংগঠন। এর সাংগঠনিক দপ্তর হাজরা নাটোরে। সংগঠনের নিজস্ব জমি এবং ঘর আছে। সংগঠনটি লোকজ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও কল্যাণমূলক নানা কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদন করে আসছে। বার্ষিক সাধুর প্রেম বাজার (বাউল মেলা) আয়োজন করে থাকে নভেম্বরের ২৭ তারিখে।
সপ্তক সুর তরঙ্গঃ ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি সপ্তক সুর তরঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন কার্তিক চন্দ্র মন্ডল। উত্তর পটুয়াপাড়ায় অবস্থিত সপ্তক সুর তরঙ্গের কার্যালয়।
নৃত্যাঙ্গনঃ নাটোরের সুপরিচিত নৃত্যাঙ্গনের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা নৃত্যশিল্পী সুশামত্ম কুমার দাস পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। নৃত্যাঙ্গনে নৃত্যের পাশাপাশি নৃত্যাঙ্গনে গিটার ও চিত্রাংকণ প্রশিক্মণ দেওয়া হয়।
ইছলাবাড়ি বাউল সংগঠনঃ সামাজিক ও লোকজ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ইছলাবাড়ি বাউল সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। বাউল আব্দুল খালেক সরদার গড়ে তোলেন সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বাউল আব্দুল খালেক সরকার। বর্তমানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের বাড়িতে একটি টিনের ঘর তৈরী করে সেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জলসার আয়োজন করা হয়।
ডিং ডং ড্যান্স ক্লাবঃ ২০০৩ সালের ১ মার্চ ডিং ডং ড্যান্স ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। মোঃ সালেহ আখতার শাওন প্রতিষ্ঠা করেন ডিং ডং ড্যান্স কস্নাব। মীরপাড়ায় সংগঠনটির বর্তমান কার্যালয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লিপি রহমান। সম্পাদক হিসেবে আছেন মোঃ সাখাওয়াত হোসেন (সোহাগ)। বর্তমানের এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২৩ জন। ইতোমধ্যেই নিজস্ব উদ্যোগে মিউজিক ভিডিও তৈরী করা হয়েছে।
দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠনঃ দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠনটির যাত্রা শুরম্ন ২০০৬ সালের ৬ মে। বিশ্বজিৎ কুমার পাল এই নৃত্যনির্ভর সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুকুলপট্টিতে সংগঠনটির অস্থায়ী সাংগঠনিক দপ্তর। সভাপতি হিসেবে মোঃ ফয়সল ইসলাম এবং সম্পাদক হিসেবে বিশ্বজিৎ কুমার পাল দায়িত্ব পালন করছেন। মাত্র দুই বছর বয়সী এই সংগঠনটি যাত্রার শুরম্ন থেকেই ভাল সাড়া পেয়ে আসছে।
বাংলার চিরায়িত সংস্কৃতি ধারাকে প্রবাহমান রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা রাখবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে সংগঠনটি।
স্মৃতি নৃত্য স্কুলঃ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্মৃতি নৃত্য স্কুল। স্কুলের সাংগঠনিক কার্যালয় কান্দিভিটায়। নিশাত সুলতানা দোলনের প্রতিষ্ঠিত নৃত্য স্কুলটিতে বর্তমানে স্মৃতি নৃত্য স্কুলে ৭৭ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাসিংড়া উপজেলা নাটোর জেলা সদর হতে প্রায় ২২ কি.মি দূরে অবস্থিত। নাটোর থেকে সরাসরি বাসে বা অন্য সড়কপথে চালিত যানবাহনে সিংড়া আসা যায়। এছাড়াও বগুড়া থেকে সরাসরি বাসে বা অন্যান্য সড়কপথে চলার মতো যানবাহনে সিংড়া আসা যায়। এছাড়াও আকাশপথে হেলিকপ্টার দিয়ে সিংড়া উপজেলায় আসতে হবে। কোন হেলিপ্যাড না থাকলেও হেলিকপ্টার নামার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও বর্ষার মৌসুমে চলনবিল এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় সবদিক হতে সিংড়া উপজেলায় আসা যায়। এছাড়াও তাড়াশ থেকে চলনবিলের ভিতর দিয়ে সিংড়া আসার রাস্তা আছে।[১১]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
সম্পাদনা- জুনাইদ আহমেদ পলক –– রাজনীতিবিদ, বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী।
- মাদার বখশ –– রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক।
- স্যার যদুনাথ সরকার –– ইতিহাসবিদ।
- ওমর সানি বাদল –- লেখক ও কবি।
দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
সম্পাদনাআরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে সিংড়া উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২২ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "উপজেলার পটভূমি"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "উপজেলার ঐতিহ্য"। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "ভৌগোলিক পরিচিতি"। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "মানচিত্রে সিংড়া"। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ "পটভূমি"। ২৪ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "এক নজরে সিংড়া"। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "ঐতিহ্য"। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "ভাষা ও সংস্কৃতি"। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "সংষ্কৃতি"। ১২ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "যোগাযোগ ব্যবস্থা"। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০২০।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- বাংলাপিডিয়ায় সিংড়া উপজেলা
- সিংড়া উপজেলা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ মার্চ ২০১৪ তারিখে - জাতীয় তথ্য বাতায়ন