সভান্তে প্যাবো

চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (২০২২) সুয়েডীয় বংশাণুবিজ্ঞানী
(সাভান্তে পাবো থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সভান্তে প্যাবো (Svante Pääbo; আ-ধ্ব-ব: [ˈsvanːtɛ ˈpæːbo]; জন্ম ২০শে এপ্রিল, ১৯৫৫) একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সুয়েডীয় বংশাণুবিজ্ঞানী, যিনি বিবর্তনীয় বংশাণুবিজ্ঞান ক্ষেত্রের একজন বিশেষজ্ঞ।[৩] প্যাবো জীবাশ্ম বংশাণুসমগ্রবিজ্ঞান ক্ষেত্রের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিয়ান্ডারথাল বংশাণুসমগ্র (জিনোম) বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা সম্পাদনা করেছেন।[৪][৫][৬][৭][৮][৯] তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে অদ্যাবধি জার্মানির লাইপৎসিশ শহরে বিবর্তনীয় নৃবিজ্ঞানের মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের বংশাণুবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালকবৃন্দের একজন।[১০][১১][১২][১৩][১৪] এছাড়া তিনি জাপানের ওকিনাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক।[১৫]

সভান্তে প্যাবো
Svante Pääbo
২০১৬ সালের জুলাই মাসে রয়াল সোসাইটিতে অন্তর্ভুক্তির দিন প্যাবো
জন্ম (1955-04-20) ২০ এপ্রিল ১৯৫৫ (বয়স ৬৮)
জাতীয়তাসুইডেন
মাতৃশিক্ষায়তনউপসালা বিশ্ববিদ্যালয় (ডক্টরেট উপাধি)
পরিচিতির কারণজীবাশ্ম বংশাণুসমগ্রবিজ্ঞান
দাম্পত্য সঙ্গীলিন্ডা ভিগিলান্ট (বি. ২০০৮)
সন্তান
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রবংশাণুবিজ্ঞান
বিবর্তনীয় নৃবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহবিবর্তনীয় নৃবিজ্ঞানের জন্য মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট
ওকিনাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট
অভিসন্দর্ভের শিরোনামহাও দ্য ই১৯ প্রোটিন অভ অ্যাডিনোভাইরাসেস মডিউলেটস দ্য ইমিউন সিস্টেম, How the E19 protein of adenoviruses modulates the immune system, "কীভাবে অ্যাডিনোভাইরাসগুলির ই১৯ প্রোটিন অনাক্রম্যতন্ত্রে উপযোজন সাধন করে" (১৯৮৬)
ওয়েবসাইটwww.eva.mpg.de/genetics/staff/paabo/

সভান্তে প্যাবো তাঁর গবেষণাকর্মের জন্য একাধিক সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেছেন এবং বহুসংখ্যক পুরস্কার ল্ভা করেছেন। ২০২২ সালে তিনি শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বিলুপ্ত হোমিনিনদের বংশাণুসমগ্র ও মানব বিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।[১৬] প্যাবো আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব একটি কীর্তি সম্পাদন করেছেন। তিনি নিয়ান্ডার্থাল মানবের বংশাণুসমগ্রের অনুক্রম নির্ণয় করেছেন, যারা ছিল আধুনিক মানবের আদিপুরুষদের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু বর্তমানে বিলুপ্ত এক মানব প্রজাতি। এছাড়া তিনি সম্পূর্ণ অজানা এক ধরনের হোমিনিন আবিষ্কার করেন, যার নাম দেনিসোভা। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্যাবো দেখাতে সক্ষম হন যে আজ থেকে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে এইসব বিলুপ্ত হোমিনিনদের থেকে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্স মানবদের কাছে বংশাণুর হস্তান্তর হয়েছিল, যে সময় হোমো স্যাপিয়েন্স আফ্রিকা থেকে বিশ্বের অন্যত্র অভিবাসী হওয়া শুরু করেছিল। বংশাণুর এই সুপ্রাচীন প্রবাহ বর্তমান যুগের মানুষের শারীরবিদ্যায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি ঘটনা। যেমন মানুষের অনাক্রম্যতন্ত্র কীভাবে জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সে ব্যাপারটির সাথে এটি সম্পর্কিত। প্যাবোর মৌলিক ভিত্তিস্বরূপ গবেষণা একটি সম্পূর্ণ নতুন বৈজ্ঞানিক শাস্ত্রের জন্ম দেয়, যার নাম জীবাশ্ম বংশাণুসমগ্রবিজ্ঞান। তাঁর গবেষণা আধুনিক জীবিত মানবদের সাথে বিলুপ্ত হোমিনিনদের বংশাণুগত পার্থক্য উন্মোচন করেছে, ফলে মানুষের বংশাণুগতভাবে অনন্য পরিচয়ের ভিত্তি বের করা সম্ভব হয়েছে।

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

প্যাবো ১৯৫৫ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন ও তাঁর মা এস্তোনীয় রসায়নবিদ কারিন প্যাবোর কাছে বড় হন। [১৭] তাঁর বাবা ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রাণরসায়নবিদ সুন্যা বারিস্ট্রম, [১৭] [১৮] যিনি ১৯৮২ সালে বেংট আই. স্যামুয়েলসন এবং জন আর. ভেনের সাথে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। প্যাবো মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর মায়ের সাথে ছুটিতে মিশরে ভ্রমণ করেছিলেন এবং সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়গুলি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেনে যে বড় হয়ে মিশরবিদ হবেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালে তিনি উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশরবিদ্যা বিভাগে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে তাঁকে মূলত মিশরীয় চিত্রলিপি ও কপ্টীয় ভাষা নিয়ে গবেষণা করতে হয়েছিল, যার সাথে তাঁর প্রত্যাশার কোনও মিল ছিল না। তাই তিনি দুই বছর পরে ঐ বিভাগ ত্যাগ করে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়া শুরু করেন।[১৯] ১৯৮০ সালে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনায় বিরতি দিয়ে আণবিক বংশাণুবিজ্ঞানে ডক্টরেট পর্যায়ের গবেষণা শুরু করেন। এরপর তিনি ১৯৮৬ সালে সেখানকার কোষ গবেষণা বিভাগ থেকে পিএইচডি উপাধি অর্জন করেন। কীভাবে অ্যাডেনোভাইরাসের ই১৯ প্রোটিনটি অনাক্রম্যতন্ত্রতে (দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) পরিবর্তন সাধন করে তা নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি এই উপাধি লাভ করেন।[২০]

গবেষণা ও কর্মজীবন সম্পাদনা

উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট গবেষণার সময় অ্যাডেনোভাইরাস ও অনাক্রম্যতন্ত্রের সাথে এগুলির আন্তঃক্রিয়া নিয়ে কাজ করার সময় প্যাবোর মনে অভিনব একটি ধারণা আসে। তিনি বুঝতে পারেন যে ডিএনএ-র অনুকৃতি তৈরি করার জন্য বিজ্ঞানীদের কাছে যেসব প্রযুক্তি ছিল, সেগুলি তখন পর্যন্ত কেউ প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষগুলির বিশ্লেষণে, বিশেষ করে মিশরীয় মমির উপরে কাজে লাগায়নি। তাই ডক্টরেট পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি পার্শ্ব প্রকল্প হিসেবে তাঁর মিশরবিদ শিক্ষকের সহায়তায় গোপনে ও তাঁর ডক্টরেট পরামর্শদাতার অগোচরে রাতে ও সপ্তাহান্তের ছুটির দিনগুলিতে বিভিন্ন মমি নিদর্শনের থেকে নরম দেহকলার নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলি থেকে ডিএনএ পৃথক করার চেষ্টা করেন। ১৯৮৪ সাল নাগাদ তিনি এভাবে একটি প্রাচীন মিশরীয় মানুষদের ডিএনএ অনুক্রম সংগ্রহ গড়ে তোলেন। ১৯৮৬ সালে ডক্টরেট লাভের পরে প্রথমে তিনি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং আণবিক জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কাজ করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে তিনি বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যালান উইলসনের সাথে ডক্টরেট-পরবর্তী গবেষণায় যোগদান করেন। উইলসনের গবেষণাগারটি ছিল বিশ্বের একমাত্রা গবেষণাগার যেটিতে প্রাচীন ডিএনএ নিয়ে গবেষণাকর্ম সম্পাদিত হচ্ছিল। তিনি এমন এক সময়ে যোগ দেন, যখন মাত্র পিসিআর (পলিমারেজ শৃঙ্খল বিক্রিয়া) প্রযুক্তিটি উদ্ভাবিত হয়। এই প্রযুক্তিটি প্রাচীন ডিএনএ পৃথক করার জন্য আদর্শ ছিল, কেননা এটির মাধ্যমে কোনও পছন্দনীয় ডিএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থান বের করে সেটিকে বিবর্ধিত করা যায়, ফলে সিংহভাগ প্রাচীন দেহাবশেষে যে ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের ডিএনএ থাকে, সেগুলি থেকে পছন্দনীয় ডিএনএ-টিকে পৃথক করা সম্ভব হয়। প্যাবো ও উইলসন পিসিআর ব্যবহার করে প্রাচীন ডিএনএ নিষ্কাশন করেন এবং একটি সুসংরক্ষিত ৭০০০ বছরের পুরনো মানব মস্তিষ্কের মাইটোকন্ড্রীয় ডিএনএ বিবর্ধিত করতে সক্ষম হন।[১৯]

১৯৯০-এর দশকে প্যাবো নিয়ান্ডার্থাল মানবদের ডিএনএ গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে তিনি শীঘ্রই বুঝতে পারেন যে এ ধরনের গবেষণাতে প্রযুক্তিগত সমস্যা চরম আকার ধারণ করে, কেননা সময়ের সাথে সাথে ডিএনএ-তে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং সেগুলি নষ্ট হয়ে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। হাজার হাজার বছর পরে ঐসব ডিএনএ-র মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অপেক্ষাকৃত নতুন মানুষদের ডিএনএ-র মিশ্রণ ও দূষণ ঘটে।[১৬] ১৯৯০ সালে প্যাবো জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি প্রাচীন ডিএনএ নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখেন। এখানেই তিনি নিয়ান্ডার্থাল মানবদের দেহকোষের একটি অঙ্গাণু মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত নেন। কোষকেন্দ্রীয় বা নিউক্লিয়াসের ডিএনএ-র তুলনায় মাইটোকন্ড্রীয় ডিএনএর বংশাণুসমগ্রের আকার ছোট হলেও এটি বহু হাজার অনুলিপিতে বিদ্যমান থাকে, তাই এটি বিশ্লেষণে সফল হবার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। প্যাবো তার পদ্ধতিগুলি পরিশীলিত করতে থাকেন এবং একটি ৪০ হাজার বছর পুরনো হাড়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-র একটি অঞ্চলের অনুক্রম নির্ণয়ে সফল হন। ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মানবজাতির এক বিলুপ্ত পূর্বসূরী আত্মীয় প্রজাতির ডিএনএ অনুক্রম আমাদের করায়ত্ত হয়।[১৬]

১৯৯৭ সাল থেকে তিনি জার্মানির লাইপৎসিশ শহরের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের একজন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাম্প্রতিককালে তিনি লাইপৎসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশাণুবিজ্ঞান ও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বিষয়ে একজন সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। এর আগে ২০০৩ সালে তিনি সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক বংশাণুসমগ্রবিজ্ঞান বিষয়ে একজন অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।[২১]

প্যাবো জীবাশ্ম বংশাণুবিজ্ঞান (প্যালিওজেনেটিকস) ক্ষেত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে পরিচিত। এই শাস্ত্রটিতে আদি মানব এবং অন্যান্য প্রাচীন জনসমষ্টি অধ্যয়নের জন্য বংশাণুবিজ্ঞানের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। [২২] [২৩] প্যাবো এমন সব কৌশল ও দিক উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিক ও জীবাশ্ম অবশেষ থেকে ডিএনএ অনুক্রম নির্ণয় করা সম্ভব। এর ফলে বিলুপ্ত জীব, মানুষ, প্রাণী ও রোগজীবাণুর প্রাচীন ডিএনএ অধ্যয়ন করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্যাবো ও তাঁর সহকর্মীরা নিয়ানডার্থাল মানবের মাইটোকন্ড্রীয় ডিএনএ-র(এমটিডিএনএ) উচ্চমানের অনুক্রম নির্ণয়ে সফল হওয়ার ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাঁরা নিয়ান্ডারটাল উপত্যকার ফেল্ডহোফার গুহাতে পাওয়া একটি নমুনা থেকে এটি নির্ণয় করেন। [২৪] [২৫] প্যাবোর এই গবেষণার সুবাদে মানব প্রজাতির সাম্প্রতিক বিবর্তনীয় ইতিহাস পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়। এটিও প্রতিষ্ঠিত হয় যে বর্তমান মানবদের যে পূর্বসূরীরা আফ্রিকার বাইরে বসবাস করা শুরু করে, তাদের ডিএনএ-তে নিয়ান্ডার্থাল মানবদের অবদান ছিল। এছাড়া প্যাবো সাইবেরিয়াতে প্রাপ্ত একটি ছোট হাড়ের ডিএনএ অনুক্রম অধ্যয়ন করে দেনিসোভা মানব নামের সম্পূর্ণ নতুন একটি হোমিনিন দলের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন, যারা কি না ছিল নিয়ান্ডার্থালদের এক ধরনের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। এছাড়া প্যাবো মানুষ ও এপ জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে তুলনামূলক ও ক্রিয়ামূলক বংশাণুসমগ্রবিজ্ঞান (comparative and functional genomics) নিয়ে কাজ করছেন। বিশেষ করে তিনি কিছু নির্দিষ্ট বংশাণুগত বৈশিষ্ট্য যেমন ফক্সপি২ নামক "বাচন ও ভাষা"র জন্য দায়ী বংশাণু (জিন) নিয়ে তিনি আগ্রহী, যেগুলি মানুষের একান্তই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।

গুরুত্ব সম্পাদনা

প্যাবোর আবিষ্কারগুলি মানবজাতির বিবর্তনীয় ইতিহাস বিষয়ে নতুন উপলব্ধির জন্ম দিয়েছে। যখন বর্তমান মানবজাতি অর্থাৎ হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতিটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিশ্বের অন্যত্র অভিবাসী হওয়া শুরু করে, তখন একই সময় ইউরেশিয়া অতিমহাদেশে কমপক্ষে আরও দুইটি হোমিনিন প্রজাতির জনসমষ্টি বাস করত, যার হল নিয়ান্ডার্থাল মানব ও দেনিসোভা মানব। নিয়ান্ডার্থাল মানবেরা ইউরেশিয়ার পশ্চিম পার্শ্বে বাস করত, অন্যদিকে দেনিসোভা মানবেরা এর পূর্ব পার্শ্বে বাস করত। যখন হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানব আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পূর্বদিকে সম্প্রসারিত হতে শুরু করে, তখন তারা কেবলমাত্র নিয়ান্ডার্থাল নয়, বরং দেনিসোভা মানবদেরও দেখা পায় এবং তাদের উভয়ের সাথেই সংকর প্রজনন সম্পাদন করে। প্যাবোর আবিষ্কারগুলির কারণে কীভাবে মানবজাতির প্রাচীন কিন্তু বিলুপ্ত আত্মীয় মানব প্রজাতিগুলির বংশাণু অনুক্রম বর্তমান যুগের মানবদেহের শারীরবিদ্যায় প্রভাব ফেলেছে, সে ব্যাপারটি আরও ভালভাবে বুঝতে পারা সম্ভব হয়েছে। যেমন দেনিসোভা মানবের দেহকোষে ইপিএএস১ বংশাণুটির যে সংস্করণটি আছে, সেটি মানুষকে বেশি উচ্চতায় কম অক্সিজেন সমৃদ্ধ বায়ুতে টিকে থাকতে সাহায্য করে এবং বর্তমান যুগের তিব্বতি নৃগোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে বংশাণুটির ঐ একই সংস্করণ আবিষ্কৃত হয়েছে। আবার নিয়ান্ডার্থাল মানবদের বংশাণুগুলি মানব বংশাণুসমগ্রে উপস্থিত থাকলে সেগুলি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগের প্রতি মানব অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে।[১৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Professor Svante PÄÄBO | Jeantet"। ১ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  2. "Svante Paabo"। London: Royal Society। ২০১৬। ২৯ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  One or more of the preceding sentences incorporates text from the royalsociety.org website where:

    “All text published under the heading 'Biography' on Fellow profile pages is available under Creative Commons Attribution 4.0 International License.” --"Royal Society Terms, conditions and policies"। Archived from the original on সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-০৯ 

  3. গুগল স্কলার দ্বারা সূচীবদ্ধ সভান্তে প্যাবোর প্রকাশনাসমূহ  
  4. Pääbo, Svante (নভেম্বর ১৯৯৩)। "Ancient DNA"Scientific American269 (5): 60–66। এসটুসিআইডি 5288515ডিওআই:10.1038/scientificamerican1193-86পিএমআইডি 8235556বিবকোড:1993SciAm.269e..86P 
  5. Candee, Marjorie Dent; Block, Maxine; Rothe, Anna Herthe (২০০৭)। Current biography yearbook । New York: H. W. Wilson। আইএসবিএন 978-0-8242-1084-7 
  6. Harold M. Schmeck Jr (১৬ এপ্রিল ১৯৮৫)। "Intact Genetic Material Extracted from an Ancient Egyptian Mummy"New York Times  (This article shows Pääbo to be the first one to extract DNA from a thousands year dead human—not Bryan Sykes who claimed to be in his books)
  7. Kolbert, Elizabeth"Sleeping with the Enemy: What happened between the Neanderthals and us?"The New Yorker। নং 15 & 22 August 2011। পৃষ্ঠা 64–75। 
  8. Pääbo, Svante (২০১৪)। Neanderthal Man: In Search of Lost Genomes। Basic Books। আইএসবিএন 978-0-465-02083-6 
  9. "A Neanderthal Perspective on Human Origins" (video lecture)। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৪ 
  10. Gitschier, J. (২০০৮)। "Imagine: An Interview with Svante Pääbo"PLOS GeneticsPLOS4 (3): e1000035। ডিওআই:10.1371/journal.pgen.1000035পিএমআইডি 18369454পিএমসি 2274957  
  11. Zagorski, N. (২০০৬)। "Profile of Svante Pääbo"Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America103 (37): 13575–13577। ডিওআই:10.1073/pnas.0606596103 পিএমআইডি 16954182পিএমসি 1564240 বিবকোড:2006PNAS..10313575Z 
  12. Dickman, S. (১৯৯৮)। "Svante Pääbo: Pushing ancient DNA to the limit"। Current Biology8 (10): R329–R330। ডিওআই:10.1016/S0960-9822(98)70212-X পিএমআইডি 9601629 
  13. Shute, N. (২০০৩)। "Portrait: Svante Paabo. The human factor"U.S. News & World Report134 (2): 62–63। পিএমআইডি 12561700 
  14. "Svante Paabo at the Max Planck Institute for Evolutionary Anthropology"। ১৯ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১১ 
  15. Svante Pääbo | OIST Groups
  16. "Press release: The Nobel Prize in Physiology or Medicine 2022"। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২২ 
  17. Kolbert, Elizabeth। https://www.newyorker.com/magazine/2011/08/15/sleeping-with-the-enemy  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  18. Peter Forbes (20 February 2014) Neanderthal Man: In Search of Lost Genomes by Svante Pääbo – review
  19. https://www.pnas.org/doi/10.1073/pnas.0606596103। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২২  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  20. (গবেষণাপত্র)।  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  21. "Svante Paabo - Biography"। ৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২২  অজানা প্যারামিটার |site= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  22. "Svante Paabo publications in PubMed"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১১ 
  23. "Edge: Mapping the Neanderthal Genome – A Conversation With Svante Pääbo"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১১ 
  24. Krings, M; Stone, A (১৯৯৭)। "Neandertal DNA sequences and the origin of modern humans": 19–30। আইএসএসএন 0092-8674ডিওআই:10.1016/S0092-8674(00)80310-4পিএমআইডি 9230299  |hdl-সংগ্রহ= এর |hdl= প্রয়োজন (সাহায্য)
  25. Rincon, Paul (১১ এপ্রিল ২০১৮)। "How ancient DNA is transforming our view of the past"BBC। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৮