সাবেকুন নাহার সনি হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি ২০০২ সালের ৮ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।[১]
সনি হত্যাকাণ্ড | |
---|---|
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহিংসতার অংশ | |
স্থান | বুয়েট, ঢাকা, বাংলাদেশ |
তারিখ | ৮ জুন, ২০০২; ২২ বছর |
ভুক্তভোগী | সাবিকুন নাহার সনি |
পরিচয়
সম্পাদনাসনির বাবার নাম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া (মৃত্যু ২০২৩)।[২] সনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।[২]
ঘটনা
সম্পাদনা২০০২ সালের ৮ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই উপদলের মধ্যে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে বন্দুকযুদ্ধ হয়।[১] সনি দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।[১] সনি সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসানউল্লাহ হলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।[৩] টেন্ডার নিয়ে দুই পক্ষের হাতাহাতির একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ক্যাম্পাস শাখার সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান এবং অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রদলের এসএম হলের নেতা মুশফিক উদ্দিন টগর।[৪]
তার মৃত্যুর পর সারা বাংলাদেশে প্রতিবাদ হয়।[৫] সনি হত্যার বিচারের দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আবিরাম আন্দোলন করে ও আন্দোলনের একপর্যায়ে ‘সন্ত্রাস বিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্য’ গঠিত হয়।[৬]
বিচার
সম্পাদনাসনির বাবা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার, পুলিশ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অভিযুক্তদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানান।[৭]
বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের নেতৃত্বে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ সনি হত্যা মামলার বিচার হয়।[৮] ২০০৩ সালের ২৯ জুন আদালত তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।[৯]
২০০৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ হাইকোর্ট আপিলের ভিত্তিতে হত্যা মামলার তিন পলাতক আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।[৯] মামলার চার আসামি কারাগারে এবং দুইজন পলাতক।[৯] যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে দুই আসামি খালাস পান।[১]
উত্তরাধিকার
সম্পাদনা৮ জুন সনি হত্যার দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।[১০] ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মহিলা ছাত্রাবাসটির নামকরণ করা হয় সাবেকুন নাহার সনি হল।[১১]
ডেইলি স্টার দুঃখ প্রকাশ করে লিখে যে আবরার ফাহাদকে হত্যার পর তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আরিফ রায়হান দ্বীপের হত্যা এবং সাবেকুন নাহার সনির মৃত্যুর পর তা হয়নি।[৭] এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে আরিফ রায়হান দ্বীপের মৃত্যুর একমাত্র আসামি গ্রেপ্তার হয়নি এবং সাবেকুন নাহার সনির মৃত্যুর দুই আসামিকে ২২ বছরেও আটক করা হয়নি।[৭] সনির মৃত্যুকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত রাখার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।[১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ইসলাম, নজরুল (২০২৪-০৬-০৮)। "কেটেছে ২২ বছর, বুয়েট ছাত্রী সনি হত্যার প্রধান দুই আসামি এখনো পলাতক"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ ক খ প্রতিবেদক, বিশেষ (২০২৩-০২-১২)। "নিহত বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনির বাবার মৃত্যু"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৯-০৬-০৮)। "সনি: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক অনির্বাণ আলোকবর্তিকা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ "আফসোস নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে গেলেন সনির বাবা"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ প্রতিবেদক (২০২২-০৬-০৮)। "বুয়েটের ছাত্রী সনি হত্যার দিনটিকে 'সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন দিবস' ঘোষণার দাবি"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ "দেড় যুগেও হয়নি বুয়েট ছাত্রী সনি হত্যাকাণ্ডের বিচার"। thedailycampus.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ ক খ গ রহমান, আসিফুর; বাপ্পি, ইমরুল হাসান (২০২১-১২-২৩)। "Sony, Dwip Murder Trials: Neglected, they see no closure"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-৩০।
- ↑ "শাহেদ নূর উদ্দিনের আলোচিত যত রায়"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২০১৮-১০-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ ক খ গ "১৯ বছর পালিয়ে আছে প্রধান দুই আসামি"। দৈনিক সমকাল। ৮ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ "বুয়েট ছাত্রী সনির ১৯তম মৃত্যুদিবস আজ"। thedailycampus.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৪।
- ↑ হক, অর্চি (৬ নভেম্বর ২০২১)। "বুয়েটে সনির নামে হল: চাপা কষ্টের মাঝেও সন্তুষ্ট মা-বাবা"। দৈনিক আজকের কাগজ।
- ↑ "বুয়েটে রাজনীতির বিরোধিতার একটি পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে"। দৈনিক আজকের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২৪।