সাতবাড়িয়া গণহত্যা

সাতবাড়িয়া গণহত্যা বলতে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায় ১২ মে ১৯৭১ সালে সংঘঠিত পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যাকে বুঝায়। ঐ দিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও নিকটস্থ গ্রামে চালানো নির্মম হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও লুটপাট চালানো হয়। এতে প্রায় ১৫-২০ টি গ্রামে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে প্রায় ৫০০-৬০০ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং এদের মধ্যে ২০০ লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।[][][]

সাতবাড়িয়া গণহত্যা
সাতবাড়িয়া গণহত্যা বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
সাতবাড়িয়া গণহত্যা
স্থানসাতবাড়িয়া ইউনিয়ন, সুজানগর, পাবনা জেলা, পূর্ব পাকিস্তান
তারিখ১২ মে ১৯৭১
লক্ষ্যবাঙ্গালী হিন্দু, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ যুবক পুরুষ
হামলার ধরনগণহত্যা, হত্যাকাণ্ড
ব্যবহৃত অস্ত্রহালকা মেশিনগান
নিহত৫০০-৮০০
হামলাকারী দলপাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার

পটভূমি

সম্পাদনা

সাতবাড়িয়া অঞ্চল পাবনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অঞ্চল। সাতবাড়িয়া অঞ্চল ৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক পটভূমিতে সোচ্চার ছিলো।[] এবং পাবনা-২ সংসদ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য আহমেদ তফিফ উদ্দিনের বাড়ি ছিলো এই ইউনিয়নে। এসমস্ত কারণে পাকিস্তানি বাহিনীর নজরে পরেছিলো এই এলাকা। সাতবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফজলুল হক এবং সাতবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামসুল আলম বলেন, এই গণহত্যার পরে এই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ যোগদানে জোয়ার দেখা দিয়েছিলো।[][]

আক্রমণের ব্যাপ্তি

সম্পাদনা

পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১২ মে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কুড়িপাড়া,শ্যামনগর, নিশ্চিন্তপুর, কাচুরী, তারাবাড়ীয়া, ফকিৎপুর, সাতবাড়ীয়া, নারুহাটি, সিন্দুরপুর, হরিরামপুর, ভাটপাড়া,বর্তমানে পদ্মা নদীতে বিলীন হওয়া কন্দর্পপুর এবং গুপিনপুর সহ প্রায় ১৫-২০টি গ্রামে অপারেশন চালিয়ে গণহত্যা চালায়, নারীদের ধর্ষণ করে, বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়।[][]

তারা ঐ দিনের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আওয়ামি লীগ নেতা মহির উদ্দিন, ফকর উদ্দিন, সমির সাহা, ওয়াজেদ আলী, গোপাল শেখ, অসিত সাহা, খিতিশ সাহা, বাসুদেব বিশ্বাস, চেতনা শেখ, আব্দুল কদ্দুস এবং সেকেন্দার আলিসহ নাম অজানা প্রায় ৫০০-৬০০ নারী ও পুরুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এবং এদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনের লাশ পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এবং হানাদার বাহিনী গণহত্যা করার পাশাপাশি গোটা ইউনিয়নে ব্যাপক লুটপাট, ধর্ষণ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ চালায়।[]

প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

এই এলাকার মানুষ প্রতি বছর ১২ মে এই দিবস পালন কর আসছে। তারা স্কুল-কলেজে প্রোগ্রাম করে এই গণশহীদদের স্মরণ করে থাকে।

স্মৃতিস্তম্ভ

সম্পাদনা

২০১৩ সালে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নিমার্ণ প্রকল্পের আওতায় গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস আজ"NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৫-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭ 
  2. "সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস আজ"সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭ 
  3. "maps.genocidemuseumbd.org | genocide 1971 in map"www.mapsgenocidemuseumbd.org। ২০২০-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭ 
  4. "১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় গণহত্যা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭ 
  5. "আজ পাবনার সাতবাড়ীয়া গণহত্যা দিবস" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭ 
  6. "দৈনিক জনকন্ঠ || সাতবাড়িয়ায় গণহত্যা দিবস পালিত"দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭ 
  7. Sujanagar, Daily। "সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস আজ"সুজানগর (Sujanagar)। ২০২০-০৬-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-০৪ 
  8. hrsoftbd। "আজ পাবনার সুজানগর সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস"crimenewsnetwork24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২৭