সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান

নেপালের জাতীয় উদ্যান

সগরমাথা রাষ্ট্রীয় নিকুঞ্জ বা সগরমাথা জাতীয় উদ্যান (নেপালি ভাষায়: सगरमाथा राष्ट्रिय निकुञ्ज) নেপালের হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি উদ্যান। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট এই উদ্যানে অবস্থিত। সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান ১,১৪৮ বর্গ কিলোমিটার (৪৪৩ বর্গ মেইল) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। নেপালের সলুখুম্বু জেলার অধীন এই উদ্যান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এই উদ্যানে ২,৮৪৫ মিটার থেকে ৮,৮৪৮ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উদ্যানের উত্তরে তিব্বত এবং দক্ষিণে দুধকোশী নদী অবস্থিত। উদ্যানটির পূর্বপ্রান্তে রয়েছে মাকালু বরুন জাতীয় উদ্যান[১]

সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান
সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান
মানচিত্র সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
অবস্থাননেপাল
স্থানাঙ্ক২৭°৫৬′ উত্তর ৮৬°৪৪′ পূর্ব / ২৭.৯৩৩° উত্তর ৮৬.৭৩৩° পূর্ব / 27.933; 86.733
আয়তন১,১৪৮ কিমি (৪৪৩ মা)
স্থাপিতজুলাই ১৯, ১৯৭৬
ধরনপ্রাকৃতিক
মানকvii
অন্তর্ভুক্তির তারিখ১৯৭৯ (৩তম সেশন)
রেফারেন্স নং১২০
State Party   নেপাল
অঞ্চলএশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল

সাগারমাথা নেপালি শব্দ, যার উদ্ভব হয়েছে নেপালি শব্দদ্বয় सगर् সাগর (অর্থ "আকাশ") এবং माथा মাথা (অর্থ "মাথা") থেকে।

বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল এই উদ্যানটিকে পাখি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্ণিত করেছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই উদ্যানটি বৃহত্তর হিমালয়ান অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
উদ্যানের উঁচু স্থানের পর্বত এবং সম্পূরক অঞ্চল

১৯৭৬ সালে সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে এটা নেপালের প্রথম প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে ২৭৫ বর্গকিলোমিটারের অতিরিক্ত এলাকা এই উদ্যানে যুক্ত করা হয়।[১] নেপাল সরকার এই উদ্যানের বন, বন্যপ্রাণী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং বিকল্প শক্তির বিকাশেও সরকার গুরুত্বের সাথে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়।[৩]

১৯৬০ সাল থেকে সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান অঞ্চলে পর্যটন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যাদি আরম্ভ হয়। ২০০৩ সালে প্রায় ১৯,০০০ মানুষ এই উদ্যান ভ্রমণের আগমন করে। প্রায় ৩,৫০০ শেরপা উদ্যানের বিভিন্ন গ্রাম ও পর্যটন সম্ভাব্য এলাকাগুলোর আশপাশে বসবাস করে।[৪] নামছে বাজারের এলাকার একটি পর্বতের শীর্ষে উদ্যানের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র অবস্থিত। এই কেন্দ্র থেকে পর্যটন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সেবা প্রদান করা হয়। এলাকাটিতে নেপাল সেনাবাহিনীর একটি কেন্দ্র রয়েছে, যা উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে। লুকলা শহর থেকে একদিন পায়ে হেটে ২,৮৩৫ মিটার উচ্চতায় উদ্যানের দক্ষিণ দিকে প্রবেশপথে যাওয়া যায়।

ভূপ্রকৃতি সম্পাদনা

 
ধুবলা থেকে দৃশ্যমান আবাদাবলাম পর্বত।

দুধকোশী নদীর উচ্চ স্থান, ভোটেকোশী নদীড় অববাহিকা এবং গোকিও হ্রদ সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত। উদ্যানটি প্রধানত রুক্ষ ভূক্ষন্ড এবং উঁচু হিমালয় পর্বতমালার গিরিসঙ্কট দ্বারা গঠিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা মোনজো অঞ্চলে ২,৮৪৫ মিটার থেকে এভারেস্ট পর্বতশীর্ষে ৮,৮৪৮ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। ৬,০০০ মিটারের উর্ধ্বে পর্বতের মধ্যে আছে লোৎসে, চো ওইয়ু, থামসেরকু, নুপসে, আমাদাবলাম এবং পুমোরি। ৫,০০০ মিটার উপরের ভূখণ্ড উদ্যানের ৬৯% এলাকা গঠন করে। ২৮% চারণযোগ্য ভূমি এবং অবশিষ্ট ৩% বনাঞ্চল দ্বারা উদ্যানের বাকি এলাকা গঠিত। উচ্চতাজনিত কারণে এই উদ্যানে কয়েক ধরনের জলবায়ু অঞ্চল দেখা যায়: আলপাইন তুন্দ্রা, সাবআলপাইন অঞ্চল (৩,৫০০ মিটারের উর্ধ্বে) এবং আলপাইন অঞ্চল (৪,০০০ মিটারের উর্ধ্বে)। আলপাইন অঞ্চলে গাছপালা বেশি জন্মাতে পারে না, কারণ তাপমাত্রা অতি কম এবং বাতাসে আদ্রতা নেই। ৫,০০০ মিটারের উপর থেকে তুষার আবৃত ভূমি দেখা যায়।[১]

উদ্ভিদ সম্পাদনা

কম উচ্চতার স্থানে বির্চ, জুনিপার, ব্লু পাইন, বাশ এবং রোডোডেন্ড্রন উদ্ভিদ জন্মে। এর থেকে উঁচু স্থানগুলোতে বৃক্ষরাজির পরিমাণ কম এবং মূলত গুল্মজাতীয় গাছের দেখা মেলে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উদ্ভিদের পরিমাণ ও বিস্তৃতি কমতে থাকে। হিমালয় অঞ্চলে ৫,৭৫০ মিটার পর্যন্ত উদ্ভিদ জন্মে। এর উপরে আর উদ্ভিদ জন্মাতে পারেনা। উদ্যানের নিচু স্থানে প্রধানত পাইন ও হেমলক জন্মে।

প্রাণী সম্পাদনা

সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানে কমপক্ষে ১১৮ প্রজাতির পক্ষী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিমালায়ান মোনাল, লাল ও হলুদ পাবিশিষ্ট কাক। এই উদ্যানে বেশ কিছু বিপন্নপ্রায় প্রজাতির প্রাণী বাস করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে মাস্ক ডিয়ার, তুষার চিতা, হিমালায়ান কাল ভাল্লুক, লাল পান্ডা, লাঙ্গুর বানর, নেকড়ে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই উচ্চ স্থানের প্রাণীসমূহ কম অক্সিজেনে ও অতি ঠান্ডায় টিকে থাকায় সমর্থ। তাদের দেহে চর্বির পুরু আস্তরণ থাকে যাতে দেহের তাপ বেরিয়ে না যায়। এছাড়া তাদের অঙ্গগুলোও ছোট হয়ে থাকে। কাল ভাল্লুক শীতকালে যখন খাদ্য পর্যাপ্ত পাওয়া যা না, তখন গুহায় বাস করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bhuju, U. R., Shakya, P. R., Basnet, T. B., Shrestha, S. (2007). Nepal Biodiversity Resource Book. Protected Areas, Ramsar Sites, and World Heritage Sites ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে. International Centre for Integrated Mountain Development, Ministry of Environment, Science and Technology, in cooperation with United Nations Environment Programme, Regional Office for Asia and the Pacific. Kathmandu, Nepal. আইএসবিএন ৯৭৮-৯২-৯১১৫-০৩৩-৫
  2. "Sacred Himalayan Landscape"। Government of Nepal – Department of National Parks and Wildlife Conservation। ১২ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  3. Heinen, J. T. and J. N. Mehta (2000). Emerging Issues in Legal and Procedural Aspects of Buffer Zone Management with Case Studies from Nepal. Journal of Environment and Development 9 (1): 45–67.
  4. Byers, A. (2005). Contemporary human impacts on Alpine ecosystems in the Sagarmatha (Mt. Everest) national park, Khumbu, Nepal. Annals of the Association of American Geographers 95 (1): 112–140.

আরো পড়ুন সম্পাদনা

  • Jefferies, M. (1991). Mount Everest National Park, Sagarmatha Mother of the Universe. Seattle: The Mountaineers. 192 pp.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা