সাইপ্রাস
সাইপ্রাস (গ্রিক: Κύπρος [ˈcipros]; তুর্কি: Kıbrıs [ˈkɯbɾɯs]}} (/ˈsaɪprəs/ ( )), আনুষ্ঠানিকভাবে সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র (গ্রিক: Κυπριακή Δημοκρατία, তুর্কি: Kıbrıs Cumhuriyeti) ভূমধ্যসাগরের একটি দ্বীপ দেশ। ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এটি। এর পশ্চিমে গ্রিস, পূর্বে লেবানন, সিরিয়া এবং ইসরাইল, উত্তরে তুরস্ক ও দক্ষিণে মিশর। ভৌগোলিক দিক দিয়ে সাইপ্রাস ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত হলেও দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সদস্য।
সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র | |
---|---|
![]() ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে দেশটির অবস্থান | |
![]() দেশটির এমওডিআইএস কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্র | |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | নিকোসিয়া |
সরকারি ভাষা | গ্রিক, তুর্কী |
সরকার | প্রজাতন্ত্র |
নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডস | |
পদ শূন্য | |
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে | |
• তারিখ | ১৬ আগস্ট ১৯৬০ |
আয়তন | |
• মোট | ৯,২৫১ কিমি২ (৩,৫৭২ মা২) (১৬২তম) |
• পানি (%) | ০.১১ |
জনসংখ্যা | |
• ২০২১ আদমশুমারি | ৯২৩,২৭২ |
• ঘনত্ব | ১২৩.৪[১]/কিমি২ (৩১৯.৬/বর্গমাইল) (৮২তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২৪ আনুমানিক |
• মোট | $৫৫.১৪০ বিলিয়ন (১২৪তম) |
• মাথাপিছু | ৫৯,৮৫৮ (৩১তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২৪ আনুমানিক |
• মোট | $৩৪.৭৯০ বিলিয়ন (১০৫তম) |
• মাথাপিছু | $৩৭,৭৬৭ (২৮তম) |
জিনি (২০২২) | ![]() নিম্ন |
মানব উন্নয়ন সূচক (2015) | ![]() অতি উচ্চ · 33rd |
মুদ্রা | ইউরো (সিওয়াইপি) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+০২:০০ (ইইটি) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+০৩:০০ (ইইএসটি) |
কলিং কোড | +৩৫৭ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .সিওয়াই৩ |
|
ইতিহাস
সম্পাদনাসাইপ্রাসকে বলা হয় দেবী আফ্রোদিতির জন্মস্থান। এখানে মানব বসতির আদিভূমি হচ্ছে দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা ‘ইতোকরেমনস’। খ্রিষ্টজন্মের ১০ হাজার বছর আগে এখানে শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারীদের বসতি ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা খ্রিষ্টপূর্ব আট হাজার ২০০ বছর আগে স্থায়ীভাবে গ্রামীণ জীবনের আওতায় আসে। এখানে প্রথম সভ্য মানুষ আসে আনাতোলিয়া থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২ হাজার ৪০০ বছর আগে। আর গ্রিকরা আসে খ্রিষ্টপূর্ব এক হাজার ৬০০ বছর আগে। এর পর আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন সময় নানা জাতি ও বর্ণের লোক এখানে এসেছে। সাইপ্রাস ইতিহাসের বিভিন্ন সময় গ্রিক, রোমান, পারসীয় এবং মিসরীয় শাসকদের অধীনে শাসিত হয়। ৩৯৫ সালে এ দ্বীপটি বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। আরবরা এটি দখল করে ৬৪৩ সালে। ১১৯১ সালে তৃতীয় ক্রুসেডের সময় এটি দখল করে ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড। ১৫৩৯ সালে অটোমানরা এটি দখলে নেয়। ১৮৭৮ সালে দ্বীপটি ব্রিটেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ১৯২৫ সালে দ্বীপটিকে ব্রিটিশরা নিজেদের একটি কলোনি বলে দাবি করে। অবশেষে ১৯৬০ সালের ১৬ আগস্ট এক চুক্তির মাধ্যমে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।[৪]
রাজনীতি
সম্পাদনাসাইপ্রাসের রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত, বহুদলীয়, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন একাধারে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। সরকার ও আইনসভা একত্রে আইন প্রণয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত। বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন।
সাইপ্রাস বর্তমানে একটি বিভক্ত রাষ্ট্র। ১৯৭০-এর দশক থেকে দ্বীপের উত্তরের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তুর্কি সাইপ্রিটরা। এই ঘটনাটি সাইপ্রাসের রাজনীতিতে আজ অবধি গভীর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
সরকার পদ্ধতি
সম্পাদনাদেশটির সরকারব্যবস্থা হচ্ছে রাষ্ট্রপতিশাসিত। দেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। যিনি প্রতি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করেন সরকার, আইন বিভাগ পরিচালনা করেন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ১৯৬০ সালে প্রণীত সংবিধানে বলা হয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট হবেন অবশ্যই একজন গ্রিক সাইপ্রিয়ট বা জাতিগত গ্রিক এবং তুর্কি সাইপ্রিয়ট একজন হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট যিনি ওই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। ১৯৮৩ সালে তুর্কি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অংশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে এ পর্যন্ত তুরস্ক ছাড়া আর কোনো দেশে তাদের সমর্থন করেনি। দেশটির হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্যসংখ্যা ৫৯ জন। এর মধ্যে ৫৬ জন সরাসরি নির্বাচিত হন এবং বাকি তিনটি আসন মেরোনাইট, আর্মেনিয়ান এবং ল্যাটিন সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত।[৪]
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
সম্পাদনাসাইপ্রাস এর রাজধানী নিকোসিয়া। এই শহরটি দুই ভাগে বিভক্ত।
ভূগোল
সম্পাদনাএখানকার আবহাওয়া সাধারণত গরম এবং শুষ্ক। নভেম্বর থেকে মার্চ অর্থাৎ শীতকাল হচ্ছে চাষাবাদের মৌসুম। শীতের এ মৌসুমে এখানে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে এখানে নানা ধরনের সাইক্লোনও দেখা দেয়। এ সাইক্লোনগুলো উৎপন্ন হয় ভূমধ্যসাগরে। আর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এখানকার আবহাওয়া থাকে শুষ্ক। এখানকার গড় বৃষ্টিপাত ৫৫০ মিলিমিটার। গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তাপমাত্রার এ অবস্থা দেশটিতে বিশাল পর্যটন শিল্প বিকাশে ভূমিকা রেখেছে।[৪]
অর্থনীতি
সম্পাদনাসাইপ্রাসের অর্থনীতি দক্ষিণের সাইপ্রীয় গ্রিক সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং উত্তরের তুর্কি সাইপ্রীয় নিয়ন্ত্রিত এলাকার দ্বিবিধ অর্থনীতি নিয়ে গঠিত। গ্রিক নিয়ন্ত্রিত এলাকাটির অর্থনীতি উন্নত বলে স্বীকৃত।[৪] আইএমএফ’র মতে, দেশটির মাছাপিছু আয় হচ্ছে ২৮ হাজার ৩৮১ ডলার। তারা অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি অনুসরণ করছে। ২০০৭ সালের ১লা মে থেকে তারা ইউরো মুদ্রাকে তাদের নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে। এ ছাড়া দেশটির আয়ের প্রধান খাতগুলো হচ্ছে পর্যটন, শিক্ষা, বাণিজ্য ইত্যাদি।
পর্যটন
সম্পাদনাদেশটির আয়ের অন্যতম উৎস পর্যটন। সাইপ্রাসে প্রতি বছর গড়ে ২৪ লাখ বিদেশী পর্যটক আসেন। ২০০৬ সালে মোট জিডিপি’র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ এসেছে পর্যটন শিল্প থেকে। ১ লাখ ১৩ হাজারের বেশি লোকের অর্থাৎ দেশের মোট চাকরীজীবীর ২৯ দশমিক ৭ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে এ শিল্পে। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম এর ২০০৭ সালের সূচকে পর্যটন শিল্পে সাইপ্রাসের অব¯'ান বিশ্বে ২০তম। দ্য সাইপ্রাস ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (সিটিও) নামের একটি সংগঠন সরকারের পক্ষে সাইপ্রাসের পর্যটন শিল্পের তত্ত্বাবধানে করে থাকে।[৪]
প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
সম্পাদনাদেশটির প্রধান প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘সাইপ্রিয়ট ন্যাশনাল গার্ড’। স্থল, নৌ এবং বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে এটি একটি যৌথ প্রতিরক্ষা বাহিনী। সাইপ্রিয়ট ন্যাশনাল গার্ডের বর্তমান প্রধান হচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কনস্টান্টিনস বিসবিকাস।[৪]
জনসংখ্যা
সম্পাদনাধর্ম
সম্পাদনাগ্রিক সাইপ্রিয়টদের বেশিরভাগই গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের সদস্য এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের বেশিরভাগই মুসলিম। ইউরোবেরোমিটার ২০০৫ অনুসারে, সাইপ্রাস হচ্ছে ইউরোপের প্রধান পাঁচটি ধার্মিক দেশের একটি। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যে পাঁচটি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে সাইপ্রাস তাদেরও একটি। সাইপ্রাসের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ‘সাইপ্রিয়ট অর্থোডক্স চার্চ’।
শিক্ষা
সম্পাদনাসাইপ্রাসের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। সাইপ্রাসের মোট জিডিপি’র ৭ শতাংশ ব্যয় হয় শিক্ষার জন্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। সাইপ্রাসে একাধিক বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে সাইপ্রাসের উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের অনেকেই গ্রিস, ব্রিটেন, তুরস্ক, ইউরোপের অন্যান্য দেশ এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।[৪]
সংস্কৃতি
সম্পাদনাখেলাধুলা, গান, সাহিত্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ পদ্ধতি এবং পরিবহনব্যবস্থাসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে সাইপ্রিয়টদের রয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব ঐতিহ্য।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ United Nations, Department of Economic and Social Affairs, Population Division (২০১৩)। "World Population Prospects: The 2012 Revision, DB02: Stock Indicators"। New York।
- ↑ "Gini coefficient of equivalised disposable income – EU-SILC survey"। Luxembourg: Eurostat। ২৮ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ "Table 1: Human Development Index and its components"। Human Development Reports। Stockholm: United Nations Development Programme। ২১ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Qposter। "সাইপ্রাস – Country Information"। www.qposter.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৫।
টীকা
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |