ফিল্ড মার্শাল সাদ খাইর জর্দানের একজন প্রভাবশালী নিরাপত্তা ব্যক্তিত্ব এবং দেশটির প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডাইরেক্টোরেট (জিআইডি)-র প্রধান ছিলেন। বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জর্দান সরকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি গঠন করলে খাইর তার প্রধানের দায়িত্মও লাভ করেন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

সাদ খাইর ২০০০ সালে জিআইডির প্রধান নিযুক্ত হন। এই পদে চার বছর দায়িত্ম পালন করার পর ২০০৪ সালে তাকে ফিল্ড মার্শাল পদবী প্রদান করা হয়। একই সময়ে জর্দানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ তাকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি গঠনের দায়িত্ম দেন। নব্য এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ও করণীয় বিষয়ে কখনও সরকারের তরফ থেকে কিছু জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হত এর উদ্দেশ্য ছিল দেশটির সকল নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহের গোয়েন্দা তৎপরতাকে সমন্বয় করা।

সাদ খাইরের পিতামহ সাঈদ পাশা খাইরকে জর্দানের আধুনিক শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়, যিনি ১৯২০ সাল থেকে ১০২৫ পর্যন্ত আম্মানের মেয়র হিসেবে দায়িত্ম পালন করেন। সাদের পিতা বাশির খাইর রাজা প্রথম আব্দুল্লাহের শাসনামলে একাধারে জর্দানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, জাতীয় প্রতিনিধি সভার স্পিকার এবং রাজকীয় আদালতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ম পালন করেন।

সাদ খাইর ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর তারিখে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার একটি হোটেলে রহস্যজনক ভাবে মারা যান। আনুষ্ঠানিক ভাবে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কথা বলা হয়। ১০ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে তার মৃতদেহ আম্মানে এনে সেখানে সমাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়। মৃত্যুর সময়ে সাদের বয়স ছিল ৫৮।

জনসংস্কৃতি সম্পাদনা

জানা যায় ওয়াশিংটন পোস্টের নিয়মিত কলামিস্ট ও মার্কিন ঔপন্যাসিক ডেভিড ইগনাটিয়াসের উপন্যাস বডি অফ লাইজব্রিটিশ চিত্রনির্মাতা স্যার রিডলি স্কটের একই নামের চলচ্চিত্রের চরিত্র ‘হানি সালাম’-কে অনেকটাই সাদ খাইরের আদলে তৈরি করা হয়েছে।[২]

ডেভিড ইগনাটিয়াস উপন্যাসটি রচনার অভিজ্ঞতা নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে তার লেখা এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, হানি পাশা ওরফে হানি সালাম, যাকে জর্দানের গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে দেখানো হয়েছে, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে তাকে ঘিরে ঘটা ঘটনাসমূহ মূলত ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত জিআইডি প্রধান হিসেবে সাদ খাইরের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ইগনাটিয়াস জানান তৎকালীন সিআইএ প্রধান জর্জ টেনেটের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি জর্দানে গিয়ে সাদ খাইরের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান এবং তার কাছ থেকে জানা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাগুলো বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে এক জর্দানিয়ান জঙ্গিকে তার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে আবেগের ফাঁদে ফেলা, আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের পদ্ধতি পরিহার করার মত কয়েকটি ঘটনা সাদ খাইরের সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া হয়েছে।[২]

একই নিবন্ধে ইগনাটিয়াস আরও উল্লেখ করেন রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সাথে মূলত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক মতবিরোধের জের ধরে খাইর ২০০৫ সালে জিআইডি থেকে ও ২০০৬ সালে রাজকীয় প্রশাসনের সব ধরনের পদ থেকে বিতাড়িত হন, এবং এই ক্ষমতা হারানোর জের ধরে এক সময়ের তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা মহলে সমাদৃত এই গোয়েন্দা প্রধান উচ্ছৃংখল ও দৃষ্টিকটু জীবন যাপন শুরু করেন, যা ২০০৯ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহাল ছিল। ইগনাটিয়াসের নিবন্ধটি খাইরের মৃত্যুর চার দিন পর ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়।[২]

বডি অফ লাইজে হানি সালামের চরিত্রে অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেতা মার্ক স্ট্রং, যিনি চরিত্রটির জন্য লন্ডন ক্রিটিকস সার্কেল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের ‘শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা’ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. King Abdullah II of Jordan, Our Last Best Chance, New York, New York: Viking Press, 2011, p. 221
  2. Ignatius, David (২০০৯-১২-১৩)। "Jordan's ex-spy chief wasn't too good to be true"MTV.com। Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-২৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা