সরস্বতী নদী ভাগীরথী নদীর একটি শাখানদী, যা ১৬ শতক পর্যন্ত সক্রিয় ছিল, কিন্তু বর্তমানে এর প্রায় অস্তিত্ব নেই।[]

সরস্বতী নদী
হুগলির সপ্তগ্রামে সরস্বতী নদী
হুগলির সপ্তগ্রামে সরস্বতী নদী
হুগলির সপ্তগ্রামে সরস্বতী নদী
দেশ ভারত
রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
জেলা হুগলি জেলা
উৎস ভাগীরথী নদী
মোহনা হুগলি নদী
১৬৬০ সালের ভ্যান ডেন ব্রুকের মানচিত্র
ত্রিবেণীতে সরস্বতী নদীর মোহনা।

প্রবাহ

সম্পাদনা

উচ্চ প্রবাহ

সম্পাদনা

সরস্বতী নদীটি হুগলি জেলার উত্তর-পূর্বাংশে উৎপন্ন হয়েছে, যা কুন্তি নদীতে প্রবাহিত হয়। সরস্বতীর উচ্চ প্রবাহ শুরু হয় বাঁশবেড়িয়ার কাছে, ত্রিবেণী সঙ্গমে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

হুগলির সপ্তগ্রাম ছিল প্রধান নদীবন্দর, প্রধান শহর, ত্রিবেণী হোল গঙ্গা ও তার দুই প্রধান শাখানদী যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল। ষোড়শ শতকেও ত্রিবেণী থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিক ধরে সপ্তগ্রাম হয়ে বয়ে চলত সরস্বতী নদী। যমুনা নদী বইত দক্ষিণ পূর্ব দিক ধরে। যমুনা বর্তমানেও বইছে খালের আকারে, ইচ্ছামতী থেকে বেরিয়ে গোবরডাঙা-গাইঘাটা-হরিণঘাটা হয়ে কোথাও হারিয়ে গেছে, কোথাও আবার নালার আকারে ইতস্তত গংগায় পড়েছে। সপ্তম শতাব্দী থেকে ধীরে ধীরে সরস্বতীর উৎপত্তিস্থলে পলি জমতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে ষোড়শ শতক নাগাদ প্রায় শুকিয়ে যায়।[] সেই সরস্বতীর অবশেষ এখন নিতান্তই খাল, ক্ষীণজলের ধারা, দূষিত জলাশয় আকারে ত্রিবেণী থেকে বেরিয়ে শঙ্খনগর, সপ্তগ্রাম পার করে হারিয়ে গেছে প্রবাহপথ। একটি মজে যাওয়া শাখা আন্দুল কলেজের পাশ হয়ে এখনও বইছে।[] তারপর বুজে গেছে অথবা আটকে গেছে জনবসতির চাপে, কচুরিপানায় কিংবা মাছের ভেরিতে, নদী গিলে ফেলা ইট ভাটায়। অতীতে সরস্বতী বাংলার নদী বন্দর নগরের উন্নয়ন ও পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রাথমিকভাবে, প্রধান সমুদ্র বন্দর নগর তাম্রলিপ্ত ছিল, যার পতনের পর সপ্তগ্রাম আসে, এবং পরিশেষে কলকাতা[]

এটা মনে করা হয় যে সরস্বতী নদী একটি স্বতন্ত্র পথ বেয়ে সমুদ্রের সাথে মিশত।[][]

মনসামঙ্গল কাব্য

সম্পাদনা

বাংলার নদী সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ মনসামঙ্গল কাব্যে।[] মনসামঙ্গল অনুসারে চাঁদ সওদাগর ছিলেন প্রভাবশালী বণিক। চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যপোতের সাগরযাত্রার পথটি ছিল – সপ্তগ্রাম থেকে উজানে ত্রিবেণী হয়ে সাগর। বিশ্বাস করা হয় সরস্বতী অধুনা রূপনারায়নের খাত বরাবর বয়ে মোহনায় পড়ত তাম্রলিপ্ত (অধুনা তমলুক) হয়ে। তখন সরস্বতীর উপনদী ছিল রূপনারায়ন, দামোদর সহ অনেক ছোট নদনদী। তাম্রলিপ্ত আগে একটি সমৃদ্ধ সমুদ্রবন্দর ছিল।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Majumdar, Dr. R.C., History of Ancient Bengal, First published 1971, Reprint 2005, pp. 2-3, Tulshi Prakashani, Kolkata, আইএসবিএন ৮১-৮৯১১৮-০১-৩.
  2. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "সরস্বতী নদীর জন্য হলফনামায় বাড়তি সময়ের আবেদন"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪ 
  3. "নামছে ভূগর্ভের জলস্তর, সরস্বতী নদী বাঁচলে বাঁচবে হাওড়ার বিস্তীর্ণ জনপদ"bartamanpatrika.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৪ 
  4. নীহাররঞ্জন রায় (১৪০০ বৈশাখ)। বাঙালীর ইতিহাস। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৭৮। আইএসবিএন 978-81-295-1977-1  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. অনিরুদ্ধ রায় এবং মোঃ আখতারুজ্জামান (২০১২)। "সাতগাঁও"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. Roy, Niharranjan, Bangalir Itihas, Adi Parba, (বাংলা ভাষায়), first published 1972, reprint 2005, p. 126, Dey’s Publishing, 13 Bankim Chatterjee Street, Kolkata, আইএসবিএন ৮১-৭০৭৯-২৭০-৩
  7. Das, Balai Chandra; Ghosh, Sandipan; Islam, Aznarul; Roy, Suvendu (২০২০-১০-২৭)। Anthropogeomorphology of Bhagirathi-Hooghly River System in India (ইংরেজি ভাষায়)। CRC Press। আইএসবিএন 978-1-000-19457-9