সরকারি বরিশাল কলেজ

বরিশাল বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সরকারি বরিশাল কলেজ বাংলাদেশের বরিশাল শহরে অবস্থিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কলেজটি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর বিষয়ে পাঠদান করে থাকে। এর উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা - তিনটি শাখায় পাঠদান করা হয় ও শিক্ষা কার্যক্রম বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত।

সরকারি বরিশাল কলেজ
ধরনসরকারি কলেজ
স্থাপিত২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ (1963-09-02)
অধ্যক্ষঅধ্যাপক মো: আব্বাস উদ্দিন খান
উপাধ্যক্ষঅধ্যাপক মো:নাসির উদ্দিন সিকদার
শিক্ষার্থীপ্রায় ৮০০০ জন
অবস্থান,
২২°৪২′২৯″ উত্তর ৯০°২১′৫৮″ পূর্ব / ২২.৭০৭৯২৪° উত্তর ৯০.৩৬৬১৬৬° পূর্ব / 22.707924; 90.366166
শিক্ষাঙ্গনকালিবাড়ি রোড বরিশাল, বাংলাদেশ (২.৮১ একর)
অধিভুক্তিজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েবসাইটwww.gbc.gov.bd
মানচিত্র

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৬৩ সালে কয়েকজন পেশাজীবি অদম্য তরুন বরিশালের সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়ে চলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য একটি নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। অবশেষে সাড়া মিলল। এগিয়ে এলেন কিছু বিত্তবান, শিক্ষিত, উদ্যমী ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় প্রশাসন। গঠন করা হলো নাইট কলেজ অর্গানাইজিং কমিটি। অর্গানাইজিং কমিটি ১। জনাব এ.এস.নুর মোহাম্মদ সি এস পি, ডেপুটি কমিশনার, বরিশাল সভাপতি ২। জনাব আবদুর রহমান বিশ্বাস, এ্যাডভোকেট (সাবেক রাষ্ট্রপতি) সেক্রেটারী ৩। জনাব খান মো. মোফাজ্জল হক, এ্যাডভোকেট সদস্য ৪। জনাব নুরুল ইসলাম সিকদার, এ্যাডভোকেট সদস্য ৫। জনাব সৈয়দ হাতেম আলী সদস্য ৬। জনাব বাবু ক্ষীতিশ চন্দ্র চক্রবর্তী সদস্য ৭। শ্রী সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী, এ্যাডভোকেট সদস্য ভোলা চরফ্যাশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আবদুল হক সাহেব ছিলেন প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ। বরিশাল নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠায় তারুণ্যের মধ্যে সবচেয়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিলেন জনাব ইউসুফ আলী মোল্লা, রাশিদুল আলম, শহীদুল্লাহ, জালাল আহমেদ, আবদুল আউয়াল, শাহ আলম, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, মতিয়ার রহমান ও আবদুল লতিফ প্রমুখ। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জনাব আব্দুল কাইউম ঠাকুর এই নাইট কলেজেরই প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬৩ সালের ০২ সেপ্টেম্বর বিএম স্কুলের হল রুমে দি বরিশাল নাইট কলেজের যাত্রা শুরু। হ্যারিকেনের আলোতে সন্ধ্যার পর কলেজের কার্যক্রম শুরু হতো। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একযোগে শুরু হয় উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম। প্রথম বছর ভর্তি হয় ২৮৮ জন শিক্ষার্থী। পরের বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিএম স্কুলের কম্পাউন্ডে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কলেজে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের সাথে বিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রী জয়ন্ত কুমার দাশ গুপ্ত এবং নরেণ বাবু স্যার ও কলেজ শাখায় ক্লাশ নিতেন। কলেজের জন্য নিজস্ব জমি ও ভবন অপরিহার্য হয়ে পরায় কর্তৃপক্ষ বিএম স্কুলের শিক্ষক নরেণ বাবুকে কোলকাতা প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য অশ্বিনী কুমার দত্তের পরিত্যাক্ত বাড়িটি যাতে কলেজের নামে দান করে দেন অথবা কলেজের অনুকুলে বিক্রি করেন। অশ্বিনী কুমার দত্তের মৃত্যুর পর তদীয় ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রী সরল দত্ত স্ব-পরিবারে ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। ১৯৫০ সালের পর পর সরল দত্ত স্ব-পরিবারে কোলকাতা চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। সরল দত্ত চলে যাবার পর অশ্বিনী ভবনটি বিএম কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে তৎকালিন জেলা প্রশাসক এ টি এম শামছুল হক সি এস পি একটি সুন্দর সমাধান দেন। তিনি হোষ্টেলে অবস্থানরত ছাত্রদের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে জালিয়াবাড়ি পুল সংলগ্ন সুরেন্দ্র ভবনে (ইন্দো বাংলা) স্থানান্তর করে ভবনটি নাইট কলেজের নামে লীজ দেন। অত:পর জেলা প্রশাসক সাহেব অশ্বিনী ভবনসহ সমূদয় সম্পত্তি ১.৪৭ (এক একর সাতচল্লিশ শতাংশ) একর জমি সর্ব্বোচ্চ মূল্যে ৪০,২৯৫.২৫ (চল্লিশ হাজার দুইশত পঁচানব্বই টাকা পঁচিশ পয়াসা) টাকায় একুইজশন করে নাইট কলেজের অনুকুলে লিখে দেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে উক্ত টাকা পরিশোধ করে জমি ও ভবনের স্বত্ত¡ বুঝে নেন। কলেজ গভার্নিং বডির সদস্য, কিছু দানশীল ব্যক্তি যাদের মধ্যে ছিলেন জনাব হাসান ইমান চৌধুরী, জনাব জালাল আহমেদ কন্ট্রাকটর, জনাব আঃ আজিজ কন্ট্রাকটর, জনাব গোলাম মাওলা, হাজী আদম আলী, সৈয়দ হাতেম আলী প্রমূখদের আর্থিক সহায়তায় কলেজের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, ভবন ও সরঞ্জামাদি তৈরি ও নির্মান কাজ শুরু হয়। ১৯৬৬ সালের এপ্রিল মাসে বি এম কলেজের ছাত্ররা সুরেন্দ্র ভবনে চলে যাবার পর থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত অশ্বিনী কুমার দত্তের ভবনটি কলেজের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। চুন সুড়কীর গাঁথা দ্বিতল ভবনটি জরাজির্ণ হয়ে পড়ায় অফিস ভবন বর্তমান ভবনে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ট্রাজেডির পর ১৯৯২ সালে স্থানীয় শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে ভবনটি ধ্বসে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকায় ভবনটি প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বরিশালের স্বনামধন্য এ্যাডভোকেট আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কলেজ গভার্নিং বডির সাথে যুক্ত থেকে কলেজটি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর বরিশালের আর এক কৃতি সন্তান শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও সমবায় মন্ত্রী হয়ে বরিশাল সফরে আসলে কলেজের উপাধ্যক্ষ জনাব হোসেন আলী সাহেবের নেতৃত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলের দাবীর প্রেক্ষিতে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭২-৭৩ শিক্ষা বর্ষ থেকে নাইট কলেজের নাম পরিবর্তন করে বরিশাল কলেজ রাখা হয়। কলেজটিতে দিবা শাখা চালু হয় এবং নৈশ শাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ে পোষ্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু করা হয়। ১৯৮৩ সালে অধ্যাপক মোক্তার হোসাইন এর চেষ্টায় আরও একটি বিষয়, ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৮৬ সালের ০২ অক্টোবর সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বরিশাল সফরে এলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত জনসভা থেকে বরিশাল কলেজ ও সৈয়দ হাতেম আলী কলেজকে একই সাথে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ নভেম্বর-১৯৮৬ সালে কলেজটি সরকারিকরণ করে সরকারি বরিশাল কলেজ নামে গেজেট প্রকাশিত হয়। প্রসংগক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন যেহেতু অশ্বিনী বাবু একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি ছিলেন তাই তাঁর বসত বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালিন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেসরকারি আমলে কলেজের অর্থ সংকটের কারনে তা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা সাফ জানিয়ে দেন একই ব্যক্তির নামে দুটি স্থাপনা রক্ষনাবেক্ষণ করা যায় না। অশ্বিনী বাবুর বাটাজোরের বাড়িটি অধিদপ্তর গ্রহণ করেছে সুতরাং আইনী বাঁধা থাকায় এটি আর হবে না। অশ্বিনী ভবনের পুরাতন একটি খাট ও একটি চেয়ার ছিল যা বিএম কলেজের অশ্বিনী মিউজিয়ামে দান করা হয়েছে। ২০০৬ সালে প্রফেসর সত্যরঞ্জণ রায় বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করে কর্মরত শিক্ষকদের সহযোগিতায় ছয়টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করেন। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। নতুন নতুন শিক্ষক পদ সৃজনসহ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়। কলেজ ক্যাম্পাসের পশ্চিমাংশে চার তলা মাস্টার্স ভবনটি বরিশালের কৃতি সন্তান জননেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এম পি এর অবদান। এক সময় নাইট কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার সুবাদে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের হাজার হাজার কর্মজীবি ও পেশাজীবি মানুষ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।।{*সরকারি বরিশাল কলেজের ওয়েবসাইট}

অবকাঠামো সম্পাদনা

প্রায় ৫ একর জমির ওপর রয়েছে সরকারি বরিশাল কলেজের সব স্থাপনা। এখানে ১টি একাডেমিক ভবন, ১টি প্রশাসনিক ভবন, ১টি মাস্টার্স ভবন, ১টি মসজিদ, ডাকঘর ১টি, ছাত্র সংসদ ভবন, সাইকেল গ্যারেজ, লাইব্রেরি (একাডেমিক ভবনের ভিতরে), বিশাল মাঠ ও রয়েছে ঐতিহাসিক এক তমাল গাছ যেটি অশ্বিনী কুমার দত্ত নিজে লাগিয়েছেন এখনো সেটি রয়ে আছে তামাল গাছ ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে, তথ্য উপস্তাপন (শাওন রানা) সাবেক ছাত্র সরকারি বরিশাল কলেজ।{{*সরকারি বরিশাল কলেজের ওয়েবসাইট}}

কলেজ ভবন সম্পাদনা

 
সরকারি বরিশাল কলেজের প্রথম গেইট

গ্রন্থাগার সম্পাদনা

বরিশাল কলেজ গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বিভাগের তের হাজারের অধিক বই সংরক্ষিত রয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনা

অনুষদ ও বিভাগ সম্পাদনা

কলা অনুষদ
  • বাংলা বিভাগ
  • ইংরেজি বিভাগ
  • ইতিহাস বিভাগ
  • ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
  • ইসলামী শিক্ষা বিভাগ
  • দর্শন বিভাগ


সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ
  • অর্থনীতি বিভাগ
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
  • সমাজকর্ম বিভাগ


বিজ্ঞান অনুষদ
  • মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ
  • পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
  • রসায়ন বিভাগ
  • উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
  • গণিত বিভাগ


বাণিজ্য অনুষদ
  • হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
  • ব্যবস্থাপনা বিভাগ
  • মার্কেটিং বিভাগ

গবেষণাগার সম্পাদনা

গবেষণাগার ৪ টি

সহ-শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনা

  • বাংলাদেশ রোভার স্কাউট সরকারি বরিশাল কলেজ ইউনিট
  • বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট ক্রপস
  • বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট
  • অশ্বিনী কুমার সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা