সয়ূজ টিএম-৩০
সয়ূজ টিএম-৩০ (রুশ: Союз ТМ-30, Union TM-30) হল একটি সয়ূজ মিশন, যা মির ইও-২৮ নামেও পরিচিত। এটি মির মহাকাশ স্টেশনের ৩৯ তম ও চূড়ান্ত মানব মহাকাশ উড্ডয়ন। এই অভিযানের কর্মীরা মিরকর্প নামের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হতে এসেছিল এবং মহাকাশ স্টেশনের মেরামত, পুনঃসক্রিয়করণ করেন। কর্মীরা স্টেশনটিকে পুনঃসরবরাহ করেছিল এবং ৩৬০ নিম্নবিন্দু (অপদূরবিন্দু) ও ৩৭৮ কিলোমিটারের উচ্চবিন্দু (অপদূরবিন্দু) (যথাক্রমে ২২৩ ও ২৩৫ মাইল) এর একটি কক্ষপথে উন্নত করেছিল। এই কক্ষপথ স্থানান্তর যা প্রোগ্রেস এম ১-১ এবং এম ১-২ মহাকাশযানের ইঞ্জিন ব্যবহার করে করা হয়েছিল তা নাসার অভিপ্রায় অনুযায়ী মির ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এর মধ্যে আন্তঃসংযোগ অসাধ্য করে তুলে। এটাই কোনো মহাকাশ স্টেশনে ব্যক্তিগতভাবে হওয়া প্রথম অভিযান।[৩][৪]
সয়ূজ টিএম-৩০ | |||||
---|---|---|---|---|---|
অভিযানের ধরন | মির কর্মী স্থানান্তর | ||||
পরিচালক | রসকসমস মিরকর্প | ||||
সিওএসপিএআর আইডি | ২০০০-০১৮এ(A) | ||||
এসএটিসিএটি নং | ২৬১১৬ | ||||
অভিযানের সময়কাল | ৭২ দিন, ১৯ ঘণ্টা, ৪২ মিনিট | ||||
সম্পূর্ণকৃত কক্ষপথ আবর্তনসংখ্যা | ১,১৪৫ | ||||
মহাকাশযানের বৈশিষ্ট্য | |||||
মহাকাশযান | সয়ূজ ৭কে-এসটিএম নং ২০৪[১] | ||||
মহাকাশযানের ধরন | সয়ূজ টিএম | ||||
প্রস্তুতকারক | আরকেকে এনার্জিয়া | ||||
মহাকাশচারী | |||||
মহাকাশচারীর আকার | ২ | ||||
সদস্য | সার্জেই জালোটিন আলেকসান্ডার কালেরি | ||||
কলসাইন | Енисе́й (Yenisei) | ||||
অভিযানের শুরু | |||||
উৎক্ষেপণ তারিখ | ৪ই এপ্রিল ,২০০০ ০৫ঃ০১ঃ২৯ ইউটিসি [২] | ||||
উৎক্ষেপণ রকেট | সয়ূজ ইউ | ||||
উৎক্ষেপণ স্থান | বাইকোনোর ১/৫ | ||||
অভিযানের সমাপ্তি | |||||
অবতরণের তারিখ | ১৬ জুন,২০০০, ০০ঃ৪৪ ইউটিসি | ||||
অবতরণের স্থান | ৪৯°৫৪′ উত্তর ৬৭°১২′ পূর্ব / ৪৯.৯০০° উত্তর ৬৭.২০০° পূর্ব | ||||
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্যসমূহ | |||||
তথ্য ব্যবস্থা | জিওসেন্ট্রিক | ||||
আমল | নিম্ন পৃথিবী | ||||
অনুভূ | ৩৫৮ কিলোমিটার (২২২ মা) | ||||
অ্যাপোgee | ৩৮৪ কিলোমিটার (২৩৯ মা) | ||||
নতি | ৫১.৬ ডিগ্রী | ||||
পর্যায় | ৯১.৯৬ মিনিট | ||||
কক্ষীয় প্রসঙ্গ-সময়বিন্দু | মে ৫,২০০০[১] | ||||
মির-এর সাথে Dockিং | |||||
Dockিং বন্দর | কোর ফরওয়ার্ড | ||||
Dockিংয়ের তারিখ | ৬ই এপ্রিল,২০০০, ০৬:৩১:২৪ ইউটিসি | ||||
dockিং ত্যাগের তারিখ | ১৫ই এপ্রিল,২০০০, ২১:২৪ ইউটিসি | ||||
dock সময় | ৭০ দিন, ১৫ ঘণ্টা | ||||
|
জরাজীর্ণ মির মহাকাশ স্টেশনকে ব্যক্তিগতকরণ ও বিভিন্ন অংশ পুনঃপ্রতিস্থাপন করার জন্য এই অভিযানটি মিরকর্পের প্রচেষ্টার একটি অংশ ছিল, যেটা এটার অপারেশনাল জীবনের সমাপ্তিকাল কমিয়ে আনছিল। তখনকার ১৪ বছর বয়স্ক এই স্টেশনটি পুনোরূদ্ধার করার জন্য সয়ূজ টিএম-৩০ ছাড়াও মূলত আরো বাণিজ্যিক তহবিলে গঠিত অভিযান পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু অপর্যাপ্ত তহবিল ও বিনিয়োগ স্টেশনটিকে শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালের শুরুতে কক্ষপথ পরিবর্তন করায়।[৪][৫]
কর্মী
সম্পাদনাঅবস্থান[৪][৬] | কর্মী | |
---|---|---|
কমান্ডার | সার্জেই জালোটিন প্রথম মহাশূন্যে যাত্রা | |
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার | আলেকসান্ডার কালেরি তৃতীয় মহাশূন্যে যাত্রা |
সয়ূজ টিএম-৩০ ছিল ফ্লাইট কমান্ডার জালোটিনের প্রথম উড্ডয়ন। তিনি ১৯৯০ সালে একজন মহাকাশচারী হন ও পরে ১৯৯২ সালে তার ২ বছরের সাধারণ প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন।[৭] টিএম-৩০ হল ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কালেরির ৩য় উড্ডয়ন। তিনি ১৯৮৪ সালে একজন মহাকাশচারী হন ও পরে ১৯৮৬ সালে তার সাধারণ প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯২ ও ১৯৯৬-৯৭ সালে মির মহাকাশ স্টেশন হওয়া যথাক্রমে সয়ূজ টিএম-১৪ ও টিএম-২৪ মিশনের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।[৮]
ব্যাকআপ কর্মী
সম্পাদনাঅবস্থান[৫][৯] | কর্মী | |
---|---|---|
কমান্ডার | সালিযান শারিপব | |
ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার | পাভেল ভিনোগ্রাদব |
যখন সয়ূজ টিএম-৩০ কক্ষপথে ছিল তখন মির মহাকাশ স্টেশনের পুনোরূদ্ধার প্রকল্প চালিয়ে রাখার জন্য ২য় একটি বাণিজ্যিক অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও অভিযানটি কখনো হয়নি ,তারপরেও টিএম-৩০এর জন্য ব্যাকআপ কর্মী হিসেবে মহাকাশচারী সালিযান শারিপব এবং পাভেল ভিনোগ্রাদবের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল।[৫]
নেপথ্য কথা
সম্পাদনামিরকর্পের অভিপ্রায় ছিল, ১৪ বছরের পুরানো মির মহাকাশ স্টেশনটিকে বিভিন্ন অংশসমূহ পুনঃপ্রতিস্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য পরিচালিত একটি সিরিজের সয়ূজ টিএম-৩০ প্রথম অভিযান হিসাবে কাজ করবে। যদিও অভিযানটি প্রায় দুই মাসে শেষ হওয়ার কথা, কমান্ডার জালোটিন অভিযান শুরুর আগে বলেছিলেন যে যদি অতিরিক্ত তহবিল পাওয়া যায় তবে অভিযানটি আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। তখন অন্য কর্মীরা তাদের জায়গা দখল করবে । অন্য সম্ভাব্য অবস্থা , যা প্রকৃতপক্ষে ঘটেছিল, তা ছিল, অভিযানটির অনেক মাস আগেকার মত স্টেশনটিকে খালি রেখে চলে আসা।[১০] সয়ূজ টিএম-৩০ শেষ হওয়ার পরে মিরকর্পের রক্ষণাবেক্ষণের প্রচেষ্টা চালিয়ে রাখার জন্য আরেকটি বাণিজ্যিক অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। মহাকাশচারী সালিযান শারিপব এবং পাভেল ভিনোগ্রাদবকে এর জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল।[৫]
মিশন হাইলাইট
সম্পাদনাসয়ূজ টিএম-৩০ ৪ই এপ্রিল ,২০০০ সালে ০৫:০১:২৯ ইউ টি সময়ে উড্ডয়ন শুরু করেছিল। ৬ই এপ্রিল ০৬:৩১:২৪ ইউ টি সময়ে উদ্দীষ্ট গন্তব্যে ভিড়ানো হয়েছিল। যদিও সয়ূজ ডকিং সিস্টেম সাধারণত স্বয়ংক্রিয়রূপে করা হয়, স্টেশনের উদ্দ্যেশে শেষ দিকের অল্প কিছু পদক্ষেপ হস্তচালনায় (মিটার ম্যানুয়াল মোড) পরিচালিত হয়েছিল। মহাকাশচারীরা যখন অভীষ্ট ভিড়ানোর জায়গা হতে সামান্য চ্যুতি লক্ষ্য করে তখন ম্যানুয়াল মোডে পরিবর্তনের নির্দেশ আসে। ভিড়ানোর দিনের ০৯:৩২ ইউটি সময়ে কর্মীরা সয়ূজ মহাকাশযান ও স্টেশনের মধ্যবর্তী প্রবেশদ্বারগুলো খোলার প্রস্তুতি নেয়। স্টেশনে প্রবেশের পর কর্মীরা মিরের ভিতরের বায়ুমণ্ডলকে সুস্থিত করে ও নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করে। [৩]
২৫শে এপ্রিল বাইকোনোর মহাকাশযান উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে যাত্রা করা একটি মনুষ্যবিহীন যান, প্রোগ্রেস এম ১-২, অভিযানের কর্মীদের জন্য সরবরাহ নিয়ে যায়। প্রোগ্রেস এম ১-২, ২৭শে এপ্রিলে ভিড়ায়। রসকসমস, প্রোগ্রেস এম ১-১ মহাকাশযানকে ,যা ফ্রেব্রুয়ারী থেকে ভিড়ানো ছিল, ব্যবহার করে স্টেশনটিকে একটি উচ্চতর কক্ষে উন্নত করেছিল। এটিকে প্রত্যাহার (আন-ডক) করা হয়েছিল ও নিউজিল্যান্ডের পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের উপরে কক্ষপথটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।[৩]
১২ই মে, ১০ঃ৪৪ থেকে ১৫:৩৬ ইউটিসি সময়ের মধ্যে অভিযানের একমাত্র এক্সট্রাভেহিকুলার একটিভিটি বা মহাকাশযানের বাইরে পদচারণা হয়েছিল। এই পদচারণার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল মিরের বহিরাংশের উপাদানগুলোর ক্ষয়গুলো মেরামত করা ও স্টেশনের বহিঃকাঠামোর পূর্ণদৃশ্য ধারণ যাতে পৃথিরীর বিশেষজ্ঞরা স্টেশনটির উপর মহাকাশের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারে। নভোচারীরা কেভান্ট-১ মড্যুল(মহাকাশযানের অংশবিশেষ) -এর উপর ভুল কাজ করা সৌরকোষের বিন্যাস দেখতে পেয়েছিল। তারা সৌরকোষের বিন্যাসটির চালনযন্ত্রের সাথে যুক্ত একটি পোড়া তার খুঁজে বের করেছিল, যা এর যথাযত ঘূর্ণন রোধ করছে। সৌরকোষের বিন্যাসটি পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে গণ্য করা হয়। [৩][৬]
২০০০ সাকের ১৫ জুন ২১:২৪ ইউটি সময়ে টিএম-৩০ মহাকাশযানটি স্টেশনটি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। ২৩:৫২ ইউটি সময়ে কক্ষপথ পরিবর্তন হইয়েছিল এবং ১৬ জুন ০০:৪৪ ইউটি সময়ে কাজাখস্তানের আরকাল্যাক এ অবতরণ সম্পন্ন হয়েছিল।[৩][১১]
যাবতীয় অর্জন
সম্পাদনাসয়ূজ টিএম-৩০ হল সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত তহবিলে হওয়া মনুষ্যবাহী মহাকাশ অভিযান, কিন্তু প্রথম ব্যক্তিগত তহবিলে হওয়া মহাকাশযানের বাইরে পদচারণা এবং প্রথম ব্যক্তিগত তহবিলে হওয়া মহাকাশ স্টেশনে পুনঃসরবরাহ পাঠানোর অভিযান, প্রোগ্রেস এম ১ এর ব্যবহারকরণসহ আরো অনেক কিছুরও প্রথম অর্জন।[৪] সয়ূজ টিএম-৩০ মিরের কক্ষপথ স্থানান্তরণকে পিছিয়ে দিয়েছে যা কিনা মূলত ২০০০ সালের কোনো সময়ে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালের মার্চে সম্পন্ন হয়েছে।[১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ McDowell, Jonathan। "Satellite Catalog"। Jonathan's Space Page। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ McDowell, Jonathan। "Launch Log"। Jonathan's Space Page। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Mir EO-28"। Astronautix। ২৪ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১০।
- ↑ ক খ গ ঘ "MirCorp Mission"। MirCorp। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১০।
- ↑ ক খ গ ঘ "New mission planned for Mir as current one wraps up"। CNN। ১২ জুন ২০০০। ২০১২-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ "Missions to Mir in 2000"। Russianspaceweb। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১০।
- ↑ "Cosmonaut Bio: Sergei Zalyotin"। NASA। ২৯ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১১।
- ↑ "Cosmonaut Bio: Alexander Kaleri"। NASA। ২৭ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১১।
- ↑ "Soyuz TM-30"। Human Spaceflights। Spacefacts। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "Space Crew poised for return to Mir on Tuesday"। CNN। ৩ এপ্রিল ২০০০। ২০১২-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "MIR: Expedition 28 (EO-28)"। Resident Crews of the MIR। Spacefacts। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১১।
- ↑ "Future of Mir in doubt after cosmonauts return home"। CNN। ১৬ জুন ২০০০। ২০১২-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১১।