সভ্যতার সূতিকাগার

সভ্যতার সূতিকাগার হচ্ছে কোনো স্থানে উদ্ভব হওয়া একটি সংস্কৃতি যেখানে অন্যত্র সৃষ্ট কোনো মানবসভ্যতার কোনো প্রকার প্রভাব ও যোগাযোগ ছাড়াই স্বাধীনভাবে একটি সভ্যতার জন্ম হয়। শহর বা শহুরে বসতি স্থাপনের সক্ষমতাকে কোনো সমাজের ‘সভ্য’ হওয়ার প্রধান বৈশিষ্ট হিসেবে পরিগণিত। সভ্যতার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে কোনো স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাসকৃত জনগণের উপস্থিতি, স্মৃতিচিহ্নমূলক স্থাপনা তৈরির সক্ষমতা, সামাজিক শ্রেণি ও অসমতার উপস্থিতি, এবং যোগাযোগের উদ্দেশ্যে লিখন পদ্ধতির ব্যবহার। মানবসভ্যতায় একাধিক সরল সমাজ একত্রিত হয়ে পর্যায়ক্রমে তা জটিল সামাজিক ব্যবস্থায় রূপ লাভ করে।

সভ্যতার সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত সভ্যতাগুলোর একটি হচ্ছে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা। চিত্রে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬ শতকে নির্মিত গিজার পিরামিডগুলো দেখা যাচ্ছে যা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।

পণ্ডিতগণ সাধারণত ছয়টি সভ্যতাকে সভ্যতার সূতিকাগার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে প্রাচীন বিশ্বে সৃষ্ট চারটি সভ্যতার মধ্যে রয়েছে মেসোপটেমীয়, প্রাচীন মিশরীয়, প্রাচীন ভারতীয়, এবং প্রাচীন চৈনিক সভ্যতা।[১][২][৩] অপরদিকে নতুন বিশ্বে সৃষ্ট সভ্যতা দুইটির মধ্যে রয়েছে পেরুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে সৃষ্ট কারাল সভ্যতা এবং মেক্সিকোতে সৃষ্ট ওলমেক সভ্যতা। প্রথম সভ্যতাগুলোর প্রত্যেকেই টিকে থাকার জন্য কৃষিকাজকে তাদের মূল জীবিকা হিসেবে ধারণ করেছিলো। তবে কারাল সভ্যতা প্রথম দিকে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল থাকতে পারে। তবে প্রতিটি সভ্যতাই কৃষক কর্তৃক উৎপাদিত উদ্ধৃত্তকে তাদের কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মগুরু, এবং শহরের কেন্দ্রের গণপূর্ত কার্যক্রমকে সহায়তা ও টিকিয়ে রাখতে ব্যবহার করেছে।

অনানুষ্ঠিকভাবে আরও কিছু ঐতিহাসিক সভ্যতাকে সম্বোধন করতে ‘সভ্যতার সূতিকাগার’ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রিক সভ্যতা যাকে মূলত ‘পশ্চিমা সভ্যতার সূতিকাগার’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Charles Keith Maisels (১৯৯৩)। The Near East: Archaeology in the "Cradle of Civilization। Routledge। আইএসবিএন 978-0-415-04742-5 
  2. Singh, Upinder (২০০৮)। A History of Ancient and Early medieval India : from the Stone Age to the 12th century। New Delhi: Pearson Education। পৃষ্ঠা 137। আইএসবিএন 9788131711200 
  3. Cradles of Civilization-China: Ancient Culture, Modern Land, Robert E. Murowchick, gen. ed. Norman: University of Oklahoma Press, 1994

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা