সন্জীদা খাতুন
সন্জীদা খাতুন (৪ এপ্রিল ১৯৩৩ - ২৫ মার্চ ২০২৫) বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সভাপতি। এছাড়া তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিশুশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দা-র সভাপতি।
সন্জীদা খাতুন | |
---|---|
জন্ম | অবিভক্ত ভারতবর্ষ | ৪ এপ্রিল ১৯৩৩
মৃত্যু | ২৫ মার্চ ২০২৫[১] | (বয়স ৯১)
পেশা | রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সঙ্গীতজ্ঞ, শিক্ষকতা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
ধরন | সঙ্গীত |
বিষয় | রবীন্দ্রসঙ্গীত |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | একুশে পদক,বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার,পদ্মশ্রী, রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮৮), দেশিকোত্তম (২০১২)রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য, বিদ্যাস্তু শিক্ষাসম্মান (২০২০), পদ্মশ্রী (২০২১) |
দাম্পত্যসঙ্গী | ওয়াহিদুল হক |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাতার পিতা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক।[২] সনজীদা খাতুন বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী। তার ভাই সেখ সাহেবুল হক সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার সহ সম্পাদক ছিলেন।
সন্জীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৩] পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাসন্জীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ইডেন কলেজ, কারমাইকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শেষে অবসরে যান।[৪]
পুরস্কার
সম্পাদনাকাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, শ্রীখন্ডের পদাবলী গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) পান। এছাড়াও পেয়েছেন, দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে।[৫] ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বিদ্যাস্তু শিক্ষাসম্মান দেয়। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে।[৬]
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর সাভারের জিরাবো গ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। তার সাথে কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মীও ছিলেন। তারা ভারতের আগরতলা শহরে কিছুদিন অবস্থান করেন।
তারপর ৫ মে, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা শুরু করেন।[৭]
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
সম্পাদনাতিনি মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
- রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ
- ধ্বনি থেকে কবিতা
- শ্রীখন্ডের পদাবলী
- অতীত দিনের স্মৃতি
- রবীন্দ্রনাথ: বিবিধ সন্ধান
- ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা
- স্বাধীনতার অভিযাত্রা
- সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা
- জননী জন্মভূমি
- রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ
- শান্তিনিকেতনের দিনগুলি
- জীবনবৃত্ত
মৃত্যু
সম্পাদনা২৫ মার্চ ২০২৫ রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।[৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Rabindra Sangeet exponent Sanjida Khatun no more"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৫-০৩-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-২৬।
- ↑ বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদকঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, ২য় সংস্করণ, ২০০৩, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃ. ১১৫-১১৬
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৫।
- ↑ রহমান, মতিউর (২০২৩-১১-০৭)। "সন্জীদা খাতুন: সাংস্কৃতিক স্বাধিকার অর্জনে সামনে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-২৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "সনজীদা খাতুন ও সাজ্জাদ আলী জহির পাচ্ছেন ভারতের 'পদ্মশ্রী'"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "দুই গুনী পেলেন ভারতের 'পদ্মশ্রী'"। চলতি ঘটনা। আব্দুল কাইয়ুম: ৩। ২০২২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৫-০৩-২৫)। "সন্জীদা খাতুন আর নেই"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-২৬।