সত্যপ্রিয় রায়
সত্যপ্রিয় রায় (১ মার্চ ১৯০৭ - ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮) ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক ও শিক্ষা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা। [১]
সত্যপ্রিয় রায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮ | (বয়স ৭০)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় ![]() |
পেশা | শিক্ষকতা |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা
সত্যপ্রিয় রায়ের জন্ম ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের টাঙ্গাইলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের কৃতী ছাত্র ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইংরাজী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীর স্নাতক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম হন। এর সঙ্গে তিনি বি.টি পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। [২]
কর্মজীবন সম্পাদনা
তিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাতে সমান কৃতিত্বে সফল হন। কিন্তু হঠাৎই ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। তারপর জাফরগঞ্জ স্কুল ও চট্টগ্রামের কানুনগোপাড়া স্কুলেও শিক্ষকতা করেন। শেষে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কালীধন ইনস্টিটিউশনের সূচনাপর্ব থেকেই প্রধান শিক্ষক ছিলেন দীর্ঘদিন।[২] অবসর নেন এই বিদ্যালয় হতেই। সেসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সামান্য বেতন পেতেন এবং দারিদ্র্য ছিল শিক্ষক সমাজের বহুবর্ষের সঙ্গী। শিক্ষকেরা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি গঠন করে দীর্ঘদিন তাদের অভাব অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। সত্যপ্রিয় রায় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে এই সংগঠনে যুক্ত হন। দুর্ভাগ্যজনক দেশবিভাজন এবং পরবর্তীতে শাসকের ক্ষমতার অহংকার এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঠিক পথে সংঘবদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ হতে শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন নির্দিষ্ট করার দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সেই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করেন। এছাড়া অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ হতে দীর্ঘ তের বৎসর এই সংগঠনের সভাপতি পদে ছিলেন। এক সময়ে তিনি অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অফ এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল তথা পশ্চিমবঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন এবং ওই পরিষদ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বাতিল হওয়া পর্যন্ত তার সদস্য ছিলেন। [১]১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দেও তিনি নিরাপত্তা বন্দী জীবনও কাটিয়েছেন। [২]
১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের সময় কলকাতার টালিগঞ্জ বিধানসভায় নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে শিক্ষামন্ত্রী হন। তিনি ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের প্রশাসকপদে ছিলেন। [১]
সত্যপ্রিয় রায় একজন বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী ব্যক্তিত্ব হয়েও ছিলেন শিক্ষক সমাজের অবিসংবাদিত নেতা। ভারত সরকার ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে দৌলত সিং কোঠারির নেতৃত্বে শিক্ষা বিষয়ে কমিশন- কোঠারি কমিশন গঠন করলে তাকে সেকেন্ডারি এডুকেশনের টাস্কফোর্সের একজন সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [২]
শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে তিনি সংশ্লিষ্ট মহলে দেশে ও বিদেশে পরিচিত ছিলেন - আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছিল। তিনি শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন- ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ টিচার্স ইউনিয়নের (FISE) এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংগঠনের প্রাচ্যের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি শ্রীলঙ্কা, জার্মানি সফর করেন। তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীন ভ্রমণ করেন সে দেশের শিক্ষক সমাজের আমন্ত্রণে। [২]
শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত 'অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের সভাপতিও ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে কলেজটি সত্যপ্রিয় রায় কলেজ অব এডুকেশন নামে পরিবর্তিত হয়। [৩]
মৃত্যু সম্পাদনা
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি সত্যপ্রিয় রায় আকস্মিকভাবে ৭০ বৎসর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৭৫২,৭৫৩ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "ABTA - Satyapriya"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১০।
- ↑ "Satyapriya Roy College of Education (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১০।