সংঘরাজ অভয় তিষ্য মহাথের

সংঘরাজ অভয় তিষ্য মহাথের ছিলেন পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ’র ৩য় মহামান্য সংঘরাজ। এছাড়াও তিনি ছিলেন বহু ঐহিত্যবাহী বৌদ্ধদের প্রাণপ্রিয় পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি ছিলেন একজন নিরব বৌদ্ধসাধক,বিনয়ী ও ধর্মপ্রচারক।

সংঘরাজ অভয় তিষ্য মহাথের
পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ
৩য় সংঘরাজ,পার্বত্য ভিক্ষুসংঘ বাংলাদেশ
কাজের মেয়াদ
২০১০-২০১৯
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআনন্দ মোহন চাকমা
(১৯৩৫-১২-২৬)২৬ ডিসেম্বর ১৯৩৫
ঘিলাতলী, শুভলং, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা
মৃত্যু২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯(2019-02-23) (বয়স ৮৪)
শিকজমূখ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার
মৃত্যুর কারণবার্ধ্ক্যজনিত কারণে মহাপ্রয়াণ
সমাধিস্থলশিকজমূখ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার
জাতীয়তাবাংলাদেশ বাংলাদেশী
পেশাবৌদ্ধ ভিক্ষু
ধর্মবৌদ্ধ(থেরবাদী)
পুরস্কারসংঘরাজ (২০১০)

শৈশবকাল সম্পাদনা

গৃহীর নাম ছিল আনন্দ মোহন চাকমা। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ সালের ঘিলাতলী গ্রামে শুভলং,জুরাছড়ি(তৎকালীন শুভলং ও জুড়াছড়ি অবিভক্ত ছিল) উপজেলা, রাঙ্গামাটি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন আরব্য চাকমা ও মাতা সূর্যমূখী চাকমা। চার ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। সে বরবোয়া গোজা, নাটুকটুক গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন।

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

তৎকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাবিস্তার না ঘটলেও আনন্দ মোহন দ্বিতীয় শ্রেণি এল.পি.(তৎকালীন) বা প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে পাওয়া যায়।

সাংসারিক জীবন সম্পাদনা

পরিণয়ের দিন,তারিখ পরিষ্কারভাবে জানা না থাকলেও সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার ৬মাস পরে গৃহত্যাগ করেন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার কিছুদিন যেতে না যেতে তাঁর স্ত্রী রোগে মারা যায়। তিনি জাগতিক দু:খ উপলব্দি করতে পেরে তাঁর মা-বাবার পরামর্শে দ্বিতীয় সংসারে আবদ্ধ হতে অপারগতা করেন। এতে তিনি গৃহত্যাগ করেন।

আধ্যাত্মিক জীবন সম্পাদনা

১৯৫৬ সালের বাংলা কার্তিক মাসের ২ তারিখে, শুভলং ইন্দ্রিমাছড়া বৌদ্ধ বিহারে শ্রীমৎ প্রজ্ঞাসার মহাস্থবির কর্তৃক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে ঘিলাতলী গ্রামের দায়ক-দায়িকাদের উৎসাহে, শ্রীমৎ পুঞ্ঞাসামী মহাস্থবির’র তত্বাবধানে, শ্রীমৎ উ. পাণ্ডিতা মহাথেরো’র উপাধ্যায়ত্বে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার উদয়সীমায় থেরবাদী বৌদ্ধ নিয়মে উপসম্পদা লাভ করেন। অনুশাসক ছিলেন শ্রীমৎ পরাক্রমা মহাথের। ১৯৫৯-১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধর কারণে শ্রীমৎ পুঞ্ঞাসামী মহাস্থবিরের সাথে ভিক্ষুত্ব জীবনের প্রথম বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান মারিশ্যায় করেন। ১৯৬০-১৯৬৫ সালে ঘিলাতলী সার্বজনীন বৌদ্ধ অবস্থান করেন। ১৯৬৫-১৯৬৭ সালে রূপকারী গোলাছড়ি বৌদ্ধ বিহারে অবস্থার করেন। ১৯৬৮-১৯৮০ সালে খাগড়াছড়িস্থ বিহার পাড়াতে অবস্থান করেন। এরপর ১৯৮২ সালের শিজকমূখ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারে শিক্ষাগুরু পুঞ্ঞাসামী মহাপ্রয়াণে তিনি সেখানে গিয়ে অবস্থান করেন। সেখানে আজীবন অধ্যক্ষ হিসেবে আসীন করা হয়। ২০০৬ সালের ২৫ অক্টোবর, তিনি ভারতের বৌদ্ধ তীর্থ ভ্রমণে যান। তাঁর দূরদর্শী ও বৌদ্ধ শাসন প্রসার ও প্রচারে তিনি বিভিন্ন সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ধর্মপ্রচার করেন।

উপসংঘরাজ বরণ সম্পাদনা

২০০৮ সালের ৬ ডিসেম্বর, চাকমা রাজবিহার, রাজগুরু অগ্রবংশ মহাথের মহোদয়ের জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাঁকে শতভিক্ষুর সম্মিলনে উপসংঘরাজ পদে বরণ করা হয়।

সংঘরাজ বরণ সম্পাদনা

২০১০ সালে ২য় মহামান্য সংঘরাজ ভদন্ত সুগতপ্রিয় মহাথের মহোদয়ের মহাপ্রয়াণে ভিক্ষুসংঘের জ্যেষ্ঠতা বলে [সংঘরাজ] আসনে অভিষিক্ত হয়।

মহাপ্রয়াণ সম্পাদনা

২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, নিজ বিহারে(শিজকমূখ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারে) ৮৩ বছর(ভিক্ষু বর্ষা ৫৯) বয়সে বার্ধকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিষ্য-প্রশিষ্য ও বহু ভক্তকে শোক সাগরে ভাসিয়ে অন্তিম যাত্রায় ষড় ইন্দ্রিয় ত্যাগ করেন। ১০-১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে তিনদিনব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপনের মাধ্যমে তাঁকে ধর্মীয় রীতিতে শতভিক্ষু ও সহস্র বৌদ্ধ নর-নারীদের অংশগ্রহণে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে আতঁশবাজির মাধ্যমে দাহকার্য সম্পাদন করা হয়। [১]

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা