সংগ্রাম (১৯৭৪-এর চলচ্চিত্র)
সংগ্রাম হল চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ও কাজী সবুজ প্রযোজিত ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী যুদ্ধ নাট্য চলচ্চিত্র।[১] এটি খালেদ মোশাররফের একটি ডায়েরিতে লেখা সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। চলচ্চিত্রটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদানকে দেখানো হয়েছে।[২]
সংগ্রাম | |
---|---|
পরিচালক | চাষী নজরুল ইসলাম |
প্রযোজক | কাজী সবুজ |
চিত্রনাট্যকার | কাজী আজিজ আহমেদ |
উৎস | খালেদ মোশাররফ কর্তৃক ব্যক্তিগত ডায়েরি |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | খন্দকার নুরুল আলম |
সম্পাদক | বশীর হোসেন |
পরিবেশক | অনুপম কথাচিত্র |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ৯৭ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
পটভূমি
সম্পাদনাপ্রথম দৃশ্যে দেখা যায় পূর্ব পাকিস্তানের রাস্তায় মানুষ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে মিছিল করছে। তারপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত আসাদকে তার বোন ও বোনের বান্ধবীর সাথে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে তর্ক করতে দেখা যায়। বেশ কিছু দিন পর মেজর হাসান, ক্যাপ্টেন আসাদ ও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন সদস্য আলোচনায় বসে। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি কর্মকর্তাদের অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে আসছে যা বিপদের লক্ষণ। অন্যদিকে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা তাদের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে বলে জানা গেছে। পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একজন কর্মকর্তা নকশালদের উপস্থিতির অজুহাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি অংশকে চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে দূরে শমসেরগঞ্জে পাঠান ও তাদের সেখানে থাকার নির্দেশ দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাঙালি সৈন্যদের অস্ত্র ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। বাঙালিরা এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। পাকিস্তানিরা শীঘ্রই তাদের আক্রমণ করবে বুঝতে পেরে বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করে পাঞ্জাবি রেজিমেন্ট দখল করে। স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ক্যাপ্টেন আসাদ ও কয়েকজন সৈন্যকে আটক করে পাকিস্তানিরা। আসাদ ক্যান্টনমেন্ট কারাগার থেকে পালায়। আসাদের খোঁজে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকার দলিলউদ্দিনকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে। তারা তার বোনের বন্ধু রিক্তাকে তার পাকিস্তানি ভক্ত মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। আসাদ বাড়ি ফিরে তার মায়ের কাছ থেকে সবকিছু জানতে পারে। ক্যাপ্টেন আসাদ মেজর হাসানের সাথে যোগ দেন এবং তার গ্রাম মুক্ত করতে ও পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত রিক্তাকে উদ্ধারের জন্য একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এরপর নয় মাস ক্যাপ্টেন আসাদ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করে অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করে।
কুশীলব
সম্পাদনা- মেজর হাসানের[ক] চরিত্রে দারাশিকো[৪]
- ক্যাপ্টেন আসাদের চরিত্রে খসরু[৫]
- আসাদের বোন মুক্তার চরিত্রে সুচন্দা[৫]
- মুক্তার বন্ধু রিক্তার চরিত্রে নূতন
- মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের ডাক্তার কবির চরিত্রে হাসান ইমাম
- একজন পাঞ্জাবি কর্মকর্তার চরিত্রে খলিল
- রাজাকার দলিলউদ্দিনের চরিত্রে এটিএম শামসুজ্জামান
- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈন্যরা
- শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রে নাম ভূমিকায় (বিশেষ চরিত্র)[৬]
প্রযোজনা
সম্পাদনাছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আনা হয়।[৩] ছবিটির শেষ দৃশ্যে একটি অংশ ছিল যেখানে শত্রুর হাত থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানাচ্ছে। তাকে পরিচালক এই দৃশ্যে রাখার সিদ্ধান্ত নেন নির্মাতা। তিনি ও অভিনেতা খসরু তাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় খসরু পরবর্তীতে আব্দুল মান্নানের সাহায্য নেন যিনি তাকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে রাজি করেন।[৬]
সঙ্গীত
সম্পাদনাসংগ্রাম | |
---|---|
কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক্ট | |
মুক্তির তারিখ | ১৯৭৪ |
ঘরানা | চলচ্চিত্র সঙ্গীত |
ভাষা | বাংলা |
প্রযোজক | খন্দকার নুরুল আলম |
গানের তালিকা | ||||
---|---|---|---|---|
নং. | শিরোনাম | গীতিকার | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
১. | "বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা" | সলিল চৌধুরী | অজিত রায় ও আবিদা সুলতানা | |
২. | "সালাম সালাম হাজার সালাম" | ফজল-এ-খোদা | কাদেরী কিবরিয়া |
অভ্যর্থনা
সম্পাদনাসমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাবিধান রিবেরু চলচ্চিত্রটির কিছু দৃশ্য উল্লেখ করেছেন যেখানে পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম যুদ্ধের সময় কৌশল হিসাবে শত্রুপক্ষের ধর্মের ব্যবহারকে উপস্থাপন করেছেন। চলচ্চিত্রটি প্রশংসা ও সমালোচনামূলক পর্যালোচনা পেয়েছে।[৩] চলচ্চিত্রটি নিয়ে আলমগীর কবিরের ভাষ্যে “এই দুটি ছবিতে অন্য দশটি বাণিজ্যিক ছবির মতো ধর্ষণের ঘটনাকে উপস্থাপন করা হয়নি।”[৩] অভিজ্ঞতার অভাবে "ছবিটি বাস্তবের মত করে নিয়মিত সেনাবাহিনীর গেরিলা অভিযান ফুটিয়ে তুলতে পারেনি" মর্মে কবির সমালোচনা করেছেন। চিন্ময় মুৎসুদ্দী বলেছেন যে ছবিটিতে বেশ কয়েকটি অতিরিক্ত অসঙ্গতিপূর্ণ দৃশ্য রয়েছে যা ছবিটির আবেদনকে হ্রাস করেছে।[৩] নাদির জুনায়েদ মনে করেন ছবিটি অনন্য নয় বরং অন্যান্য সাধারণ চলচ্চিত্রের মতো নির্মিত হয়েছে।[৭]
প্রশংসা
সম্পাদনাপুরস্কার | বিভাগ | প্রাপক | ফলাফল | সূত্র |
---|---|---|---|---|
বাচসাস পুরস্কার | সেরা অভিনেতা | দারাশিকো | বিজয়ী | [৪] |
টীকা
সম্পাদনা- ↑ চরিত্রটি খালেদ মোশাররফের জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ হক, জনি (১০ ডিসেম্বর ২০২১)। "মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও গান: গর্ব ও হতাশার ৫০ বছর"। ডয়চে ভেলে। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।
- ↑ অনুপম হায়াত (১৩ ডিসেম্বর ২০১৮)। "মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ রিবেরু, বিধান (১১ জানুয়ারি ২০১৭)। "চাষী নজরুল ইসলামের সিনেমায় দুর্বৃত্তের ধর্মের ব্যবহার"। বাংলা ট্রিবিউন। ১১ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।
- ↑ ক খ আবদুল্লাহ, জোয়াদ (২০১০)। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: পাঁচ দশকের ইতিহাস। জ্যোতিপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৪৭৩।
- ↑ ক খ মনজুর, তারিক (১৮ ডিসেম্বর ২০২১)। "চাকরির পরীক্ষায় দরকারি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।
- ↑ ক খ "বঙ্গবন্ধু যে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন"। সমকাল। ১৭ মার্চ ২০২১। ৬ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।
- ↑ "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের বক্তব্য ও নির্মাণশৈলী"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৩ এপ্রিল ২০১৬। ১৪ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২২।