ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য

ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য (রাজত্বকাল: ১০৭৬ – ১১২৬ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন পশ্চিম চালুক্য রাজা। চালুক্য রাজ্যে চোল বহিরাক্রমণের সময় চালুক্যদের সামন্ত রাজন্যবর্গের সাহয্যে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিতীয় সোমেশ্বরকে সিংহাসনচ্যূত করে রাজপদ অধিকার করেন।[][] ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে শকাব্দের বিলোপসাধন করে চালুক্য-বিক্রমাব্দের গণনা শুরু হয়। তিনি ছিলেন পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা এবং এই রাজবংশে তিনিই দীর্ঘতম সময় ধরে রাজ্যশাসন করেছিলেন। তিনি পেরমাদিদেবত্রিভুবনমল্ল ("তিন ভুবনের অধীশ্বর") উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।[][][] ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের একাধিক রানি ছিলেন এবং তাঁরাও তাঁকে সক্ষমতার সঙ্গে প্রশাসন পরিচালনার কাজে সহায়তা করতেন। তাঁর অন্যতম রানি ছিলেন করাদের শাসক শিলাহর পরিবারের রাজকন্যা চণ্ডালা দেবী, যাঁকে শৈল্পিক দক্ষতার জন্য "অভিনব সরস্বতী" নামে অভিহিত করা হত। রানি কেতলা ছিলেন সিরুগুপ্পা অঞ্চলের প্রশাসক এবং সবলা দেবী ছিলেন নারেগালের অগ্রহার অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত।[] ইতিহাসবিদ কামাথের মতে, ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য ছিলেন দক্ষিণ ভারত শাসনকারী এক মহান রাজা তথা কর্ণাটকের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল স্থানের অধিকারী। বিজয়নগর-পূর্ব যুগের যত জন রাজার শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের শিলালিপির সংখ্যাই সর্বাধিক।[][]

ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য
ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য
ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য নির্মিত কৈটভেশ্বর মন্দির (আনু. ১১০০), কুবাতুর
পশ্চিম চালুক্য রাজা
রাজত্ব১০৭৬-১১২৬ খ্রিস্টাব্দ (৫০ বছর)
পূর্বসূরিদ্বিতীয় সোমেশ্বর
উত্তরসূরিতৃতীয় সোমেশ্বর
মৃত্যু১১২৬ খ্রিস্টাব্দ
দাম্পত্য সঙ্গীচণ্ডালা দেবী
কেতলা দেবী
সবলা দেবী
বংশধরতৃতীয় সোমেশ্বর
রাজবংশপশ্চিম চালুক্য রাজবংশ
পিতাপ্রথম সোমেশ্বর
ইতগির মহাদেব মন্দির (আনু. ১১১২ খ্রিস্টাব্দ)
কল্লেশ্বর মন্দির (আনু. ১০৮৩ খ্রিস্টাব্দ), অম্বালি
ভীমেশ্বর মন্দির, নীলগুন্ডা (আনু. ১০৭৫-১১০০ খ্রিস্টাব্দ)
কুরুবত্তিতে মল্লিকার্জুন মন্দির (আনু. ১০৭০-১১০০ খ্রিস্টাব্দ)

শিল্পকলা ও বিদ্যাচর্চার পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশিষ্ট কন্নড়সংস্কৃত কবিরা তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন।[] কন্নড় ভাষায় রাজভ্রাতা কীর্তিবর্মা পশুচিকিৎসা বিজ্ঞান-সংক্রান্ত গোবৈদ্য এবং কবি ব্রহ্মশিব সময়পরীক্ষে (মতবাদ বিশ্লেষণ, আনুমানিক ১১২৫ খ্রিস্টাব্দ) রচনা করেন। ব্রহ্মশিব "কবি চক্রবর্তী" (অর্থাৎ "কবি সম্রাট") উপাধি লাভ করেছিলেন।[] বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত বিলহন ("বিদ্যাপতি" আখ্যাপ্রাপ্ত) সুদূর কাশ্মীর থেকে ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় আসেন এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষক রাজার জীবন অবলম্বনে বিক্রমাঙ্কদেবচরিত নামে একটি প্রশস্তিগাথা রচনা করেন। বিলহন ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজ্যকে রামরাজ্যের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বিজ্ঞানেশ্বর যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি-র (প্রাচীন হিন্দু পারিবারিক আইন) উপর মিতাক্ষরা নামে একটি টীকা রচনা করেন। তিনি ছিলেন রাজসভার বিশিষ্ট আইনবিদ। রাজা সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন, "বিক্রমার্কের মতো এক রাজা [আগে] দেখাও যায়নি, শোনাও যায়নি"।[১০] ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য ধর্মসূত্রে ছিলেন শৈব[] তাঁর শাসনকালে অনেকগুলি মন্দির নির্মিত হয়েছিল। এগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মল্লিকার্জুন মন্দির,[১১] মহাদেব মন্দির,[১২] কৈটভেশ্বর মন্দির,[১৩]কল্লেশ্বর মন্দির[১৪] ইতিহাসবিদ সেনের মতে, ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের ৫০ বছরের রাজত্বকাল ছিল মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী। সেনের মতে সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করে ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য দক্ষিণে তুমকুরকাদাপা থেকে উত্তরে নর্মদা নদী এবং পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বে খাম্মাম এবং পূর্ব গোদাবরীপশ্চিম গোদাবরী পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়েছিলেন।[১৫]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Sen (2013), pp.52–53
  2. Sastri (1955), p.170
  3. Chopra, Ravindran and Subrahmanian, (2003), p.139, part 1
  4. Kamath (1980), p.105
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; varsha নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. Kamath (1980), pp.105–106
  7. Kamat, Jyotsna। "Chalukyas of Kalyana"। 1996-2006 Kamat's Potpourri। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-২৪ 
  8. Sastri (1955), p. 174; Kamath (2001), p. 104–106
  9. Kamath (1980), p. 115; Sastri (1955), p. 358
  10. Cousens (1921), p.12
  11. Sinha (2000), p.142
  12. Cousens (1921), p.101
  13. Hardy (1995), p335
  14. "Kallesvara Swamy Temple"Archaeological Survey of India, Bengaluru Circle। ASI Bengaluru Circle। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১২ 
  15. Sen (1999), p.387

উল্লেখপঞ্জি

সম্পাদনা