শ্রী পালি কলেজ

শ্রীলঙ্কার সহশিক্ষামূলক মহাবিদ্যালয়

হোরানার শ্রী পালি কলেজ দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রধান সহশিক্ষামূলক মহাবিদ্যালয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। প্রথম শ্রেণী থেকে ত্রয়োদশ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসে পড়াশোনা হয়ে থাকে।

শ্রী পালি কলেজ
ধরনপাবলিক স্কুল
স্থাপিত১৯৩৪
অধ্যক্ষঅনুষা দময়ন্তী
শিক্ষার্থীপাঁচ হাজারের উপর
অবস্থান,
৬°৪২′২৭″ উত্তর ৮০°০৪′০৭″ পূর্ব / ৬.৭০৭৫০° উত্তর ৮০.০৬৮৬১° পূর্ব / 6.70750; 80.06861
পোশাকের রঙখয়েরি-লাল এবং সোনালী
ওয়েবসাইটwww.sripaleecollege.lk[অকার্যকর সংযোগ]
Map

ইতিহাস

সম্পাদনা

শ্রীলঙ্কার বিপ্লবী, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদ উইলমট আব্রাহাম পেরেরা (১৯০৫ - ১৯৭৩), ভারতীয় কবি শিল্পী ও শিক্ষাবিদ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় তার শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে শ্রীলঙ্কায় একই ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। []প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য তিনি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানান। রবীন্দ্রনাথ ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে হোরানায় এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং স্থানটি চারুকলার দেবীর আবাস অর্থে 'শ্রী পালি' নামে নামকরণ করেন।

 
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে তারিখে শ্রী পালিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথকে অভিবাদন জানাচ্ছেন উইলমট আব্রাহাম পেরেরা

বর্তমানে কলেজের অধ্যক্ষসহ, ১৪০ জন শিক্ষক কর্মচারী এবং ২০ অশিক্ষক কর্মচারী কর্মরত আছেন। শিক্ষার মাধ্যম সিংহলি এবং ইংরেজি মাধ্যম চালু করা হচ্ছে। ইংরেজি সব শ্রেণিতে অবশ্য ইংরাজী দ্বিতীয় ভাষা ভাষা হিসেবে পড়ানোর ব্যবস্থা আছে। দ্বীপরাষ্ট্রের অন্য যেকোন সরকারি স্কুলের মতো সমস্ত বিষয়ে শ্রী পালিতেও সমস্ত বিষয়ে সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসারে পঠনপাঠন ব্যবস্থা আছে। মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে বিজ্ঞান, গণিত এবং বাণিজ্য শাখায় শিক্ষাদান করা হয়।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা

সম্পাদনা

শ্রী পালি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, উইলমট আব্রাহাম পেরেরা রাবার চাষের সঙ্গে যুক্ত একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। তার পিতা আব্রাহাম পেরেরা, রায়গাম এবং পাসদুন কাউন্টিতে রাবারের রাজা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তার রাবার বাগান থেকে প্রাপ্ত আয়ের কারণে তিনি এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। পেরেরা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে পানাদুরার সিরিল জানসে কলেজে এবং পরে কলম্বোর রয়্যাল কলেজে পড়াশোনা করেন। প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে তার পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও তিনি পিতার মৃত্যুর কারণে তার সম্পত্তির দেখাশোনা করতে বাধ্য হন এবং রাবার বাগানের মালিক ও উৎপাদনকারী হন। গলের এক ধনী পরিবারের মহিলা এবং চার্লস হেনরি ডি সোয়েসার নাতনী এসমে পেরেরা আবেওয়ার্দেনাকে বিবাহ করেন ।[]

রাবার বাগানের মালিক ও উৎপাদনকারী হয়েও তিনি এস্টেটের শ্রমিক এবং এলাকার মানুষের সাথে মেলামেশা করতেন। দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম সচক্ষে প্রত্যক্ষ করতেন। সহমর্মী মানুষ হিসাবের তাদের দুঃখ কষ্টের কারণের খোঁজ নিতেন। নিজে উদ্যমী হয়ে সমীক্ষার কাজ শেষ করে রচনা করেন প্রবলেমস্ অফ রুরাল সিলন[]সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনিই প্রথম রায়গাম কোরালে একটি গ্রামীণ উন্নয়ন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ধারণা পোষণ করতেন। তাঁর সমস্ত ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের মডেলের উপর ভিত্তি করে শ্রীলঙ্কার হোরানায় শ্রী পালি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম ছাত্রদের দুপুরের খাবার (মিড-ডে মিল) দেওয়া শুরু করেন।

পেরেরা বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় "সুরিয়ামাল" আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে 'মাতুগামা নির্বাচনী জেলা' নির্বাচন ক্ষেত্র হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দেও নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চীনে শ্রীলঙ্কার প্রথম রাষ্ট্রদূত হন। উইলমট আব্রাহাম পেরেরা বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন।[]

উপাসনা/সমাবেশ

সম্পাদনা

তিনি শ্রী পালি কলেজে উপাসনা বা সমাবেশের প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে এটি কলেজের এক ঐতিহ্য হয়ে পড়ে। 'উপাসনা মালুওয়া' নামক এক বড় গাছকে ঘিরে ছোট মঞ্চ সহ এক উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ছাত্রেরা সমাবেশের জন্য মিলিত হয়। সমাবেশের পর ছাত্ররা উপাসনা পেরাহারা [সমাবেশ মিছিল] হিসাবে 'উপাসনা মালুয়া'র চারপাশ প্রদক্ষিন করে। এই মিছিলে তথা পেরাহরে চারজন ছাত্র এক সারিতে হেঁটে, স্কুলের সঙ্গীত গায়। উপাসনা পেরাহরের শেষে, শিক্ষার্থীরা উপাসনা মালুয়ার প্রাঙ্গণে, 'নিমালাইন হল'-এর (স্কুল অফিস) সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গায়। জাতীয় সঙ্গীতের পর তারা তাদের নিজ নিজ ক্লাসে যায়।

বার্ষিক বড় ম্যাচ

সম্পাদনা

শ্রী পালি কলেজ, হোরানা সি. ডব্লিউ. ডব্লিউ. কান্নাঙ্গারা কলেজ, মাথুগামার সাথে তার বার্ষিক বিগ ম্যাচ খেলে।

এছাড়াও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Marxists Internet Archive Encyclopedia 2020-07-31
  2. The Work of Kings, H. L. Seneviratne, pp.60-64 (University of Chicago Press, 2000) আইএসবিএন ০২২৬৭৪৮৬৫০
  3. "প্রবলেমস্ অফ রুরাল সিলন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-০৬