শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায়

ড.শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায় (ইংরেজি: Shyamadas Chattopadhyay or S D Chatterjee) (জুন, ২৯, ১৯০৯ – মে ২৭, ১৯৯৫) ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী ।[১]

শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায়
শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায় নিজের তৈরি ইলেক্ট্রোস্কোপে রেডনের পরিমাণ মাপছেন
জন্ম(১৯০৯-০৬-২৯)২৯ জুন ১৯০৯
মৃত্যু২৭ মে ১৯৯৫(1995-05-27) (বয়স ৮৫)
জাতীয়তাভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনপ্রেসিডেন্সি কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণকোল্ড ফিউশন
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপরমাণু বিজ্ঞানী
প্রতিষ্ঠানসমূহকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

শ্যামাদাস চট্টাপাধ্যায়ের জন্ম কলকাতার দক্ষিণ শহরতলীর সরশুনার এক অবস্থাপন্ন পরিবারে । পিতা শিবপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের) হাজারিবাগের ডিস্ট্রিক্ট জজ। পিতার স্থানান্তরযোগ্য চাকরির কারণে কলকাতার হাজারিবাগের ও শেষে কটকের রাভেনশ'কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন ।কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বি.এসসি. এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এসসি পাশ করেন । ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেবেন্দ্র মোহন বসুর অনুসরণে কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট তথা বসু বিজ্ঞান মন্দিরে যোগ দেন সিনিয়ার রিসার্চ ফেলো হিসেবে।[২] ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পরমাণুর বিভাজন আবিষ্কারের সফলতার সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথেই নিজের উদ্যোগে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। রাধেশ্যাম ঘোষের সহায়তায় নিজে Geiger-Muller counter ন্যায় ionization chamber তৈরি করেন। পরের বৎসরেই 'spontaneous fission of Uranium' অর্থাৎ ইউরেনিয়াম পরমাণুর স্বতঃস্ফূর্ত বিভাজন সম্পর্কিত গবেষণায় তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ডি.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন । নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে তিনিই দেশে প্রথম ডক্টরেট ।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কর্মজীবন শুরুর পর, শ্যামাদাস ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কানাডার ওটাওয়াতে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হিসাবে কাজ করেন । ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফেরার পর বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে লেকচারারের পদে নিয়োগ করেন। পরে রিডার পদে উন্নীত হন। এখানে তিনি রেডিওকার্বণ ডেটিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করে ভারতে প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন । ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান হন। প্রচুর পরিশ্রম, কর্মদক্ষতায় বিভাগটির সার্বিক উন্নয়ন করেন। তিনি ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানির মিউনিখে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে অবসর গ্রহণের পর তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স -এ কাজ করেন।

পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার দিক সমূহ সম্পাদনা

ইউরেনিয়াম পরমাণুর 'spontaneous fission' বা'স্বতঃস্ফূর্ত বিভাজন' বিষয়ে গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্তরের খ্যাতি অর্জনের পর তিনি cosmic rays (কসমিক রশ্মি)'র উপরও কাজ করেন। তিনিই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বক্রেশ্বরের 'Hot Springs' বা ঊষ্ণ-প্রস্রবণে হিলিয়ম গ্যাসের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। গবেষণার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে এক ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে সেটি Department of Atomic Energy অধিগ্রহণ করে। একে কেন্দ্র করেই তিনি বহু বছর আগে 'কোল্ড ফিউশন' এর কথা জোরের সাথে ঘোষণা করেছিলেন। তখন তা গুরুত্ব না পেলেও এখন বিশ্বের বিজ্ঞানীমহলে যথেষ্ট সাড়া পড়ে গেছে। অসুস্থ শরীরে,১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তার সর্বশেষ গবেষণাপত্রটির বিষয় ছিল ক্লোরোফিল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চমকপ্রদ পরীক্ষা । বিজ্ঞানের সাধনায় বিশ্বের নানা দেশে গিয়েছেন,বহু বিজ্ঞানীদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রেখেছেন,মত বিনিময় করেছেন গবেষণা করেছেন, বক্তৃতা দিয়েছেন । বিজ্ঞানগবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি 'রয়াল সোসাইটি অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স' এর সদস্য হিসাবে সম্মানিত হয়েছেন। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মাদাম ক্যুরি'র ছাত্র ছিলেন তিনি। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মিলিকানের সাথে কাজও করেছেন ।

অন্যান্য সম্পাদনা

বিজ্ঞানী শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায় অকৃতদার ছিলেন। তার ব্যক্তিগত সমৃদ্ধ গবেষণাগারটি এস. ডি.চ্যাটার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন কে ব্যবহারের জন্য দিয়ে গেছেন আর কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসের তিনতলা বসত বাড়িটি এশিয়াটিক সোসাইটিকে দান করেছেন ।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে মে ৮৫ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৪০৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Shyamadas Chatterjee, Experimenter Par Excellence by Amit Roy"। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৬  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. https://physicstoday.scitation.org/doi/10.1063/1.2808313। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৮  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)