শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (জন্ম ৩১ জুলাই ১৯৩১) একজন বাংলাদেশি প্রকৌশলী এবং তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক।[১] ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[১]

শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
জন্ম (1931-07-31) ৩১ জুলাই ১৯৩১ (বয়স ৯২)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তনবি এল কলেজ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাপ্রকৌশলী
পুরস্কারবাংলা একাডেমি ফেলো (২০১৯)

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

শহীদুল্লাহ ১৯৩১ সালের ৩১ জুলাই খুলনার দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতার নাম শেখ মুহাম্মদ হানিফ ও মাতা মরিয়ম খাতুন।[৩] তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে মাধ্যমিক, তৎকালীন ব্রজলাল কলেজ (বর্তমান বি এল কলেজ) থেকে ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ১৯৫০ সালে বিএসসি সম্পন্ন করেন।[৩] একই বছর তিনি তৎকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[২] ভালো ফলাফলের জন্য তিনি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

শহীদুল্লাহ পূর্ব পাকিস্তান সেচ বিভাগের অধীনে জিকে প্রকল্পের নকশা অফিসে নকশা প্রকৌশলী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[৪] ১৯৫৫ সালে কর্ণফুলী হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রকল্পে (পরে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র) ৪৫০ টাকা বেতনে যোগদান করেন।[৩] ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পে কাজ করার পর মাজহারুল ইসলামের সাথে যৌথভাবে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।[৫] ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সাথে ছিলেন।[৩] পরে ‘শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ নামে একটি স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯৯৮ সালে নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদুল্লাহ অ্যান্ড নিউ অ্যাসোসিয়েটস’ করা হয়।।[৪]

১৯৯৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরিতে 'তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি' নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শহীদুল্লাহ এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৩]

রাজনীতি সম্পাদনা

শহীদুল্লাহ ১৯৬৫ সালে বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িত হন।[৫] তিনি ১৯৬৯ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির 'মার্ক্সবাদী' নামক পত্রিকা বহন করার ফলশ্রুতিতে গ্রেফতার হন।[৩] প্রথমে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয় এবং ১৯৭০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে পাবনা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।[৩] ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে পুনরায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের এপ্রিলে শহীদুল্লাহর দুই ভাইসহ আরো একজন আশ্রিত হিন্দু ধর্মের লোককে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তৎকালীন মহেশ্বরপাশা সেনানিবাসে হত্যা করে।[৩] বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

শহীদুল্লাহ ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৫২ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৫] ১৯৮৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৫] প্রথম স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবনে তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "প্রকৌশলী হয়েও সার্বক্ষণিক বিপ্লবীর চরিত্র"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  2. "প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ৮৫তম জন্মদিন আজ"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ"সমকাল। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  4. "দেশপ্রেমিক 'শহীদুল্লাহ ভাই'"খোলা কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  5. "প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ"দৈনিক সংবাদ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]