শুজা ইবনে ওয়াহাব (মৃত্যু ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ) ইসলামী নবী মুহাম্মদ এর একজন বিশিষ্ট সাহাবা ছিলেন।[১] যিনি বদর,উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি মুহাম্মদ এর বিশিষ্ট দূত হিসেবে কাজ করেছেন।

নাম ও বংশ পরিচয় সম্পাদনা

শুজা ইবনে ওয়াহাব এর আসল নাম নাম শুজা এবং ডাকনাম আবু ওয়াহাব। পিতার নাম ওয়াহাব। ইসলাম পূর্ব যুগে তার বংশ বনী আবদে শামস বংশের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল ।[২]

ইসলাম গ্রহণ সম্পাদনা

শুজা ইবনে ওয়াহাব ইসলামের প্রাথমিক অবস্থাতেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মক্কা থেকে বাধ্য হয়ে হাবশায় হিজরতকারী দ্বিতীয় দলটির সাথে হাবশা হিজরত করেন।[৩]

তাদের হাবশায় অবস্থানকালে যখন সেখানে এ গুজব রটে যে মক্কার সকল বাসিন্দা মুহাম্মদ আনুগত্য মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তখন স্বদেশের ভালোবাসায় অনেকের সাথে তিনিও মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন। মক্কায় এসে দেখেন খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এরপর কিছুদিন মক্কায় অবস্থানের পর নিরাপদে মদীনায় হিজরত করেন। এখানে আউসের সাথে তার দ্বীনী ভাতৃ-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

বদর, উহুদ সহ সকল প্রসিদ্ধ যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। হিজরী ৮ম সনের রবীউল আউয়াল মাসে বনী হাওয়াযিনের একটি দলকে নির্মূলের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। এই বনী হাওয়াযিন মদীনা থেকে পাঁচ দিনের দূরত্বে ‘রসসী’ নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করেছিল। শুজা ২৪ জন দুঃসাহসী সৈন্যকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে, শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে তাদের বিপুল সংখ্যক উট, ভেড়া, বকরী ছিনিয়ে মদীনায় নিয়ে আসেন।

হুদাইবিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর মুহাম্মদ তৎকালীন বিশ্বের অধিকাংশ রাজা বাদশাদের নিকট পত্রসহ দূত পাঠান। রাসূল শুজা ইবনে ওয়াহাবকে একটি পত্র সহ গাসসানীর শাসক হারেস ইবন আবী শিম্‌র আল-গাসসানীর নিকট পাঠান।[৪] এই হারেস ছিল দামেশকের নিকটবর্তী ‘গুতা’ স্থানের শাসক।

রাসূল তাকে যে পত্রটি লেখেন তার প্রথম কয়েকটি বাক্য ছিলো এমনঃ

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে হারেস ইবন আবী শিমরের প্রতি। যারা হিদায়াতের অনুসরণ করে, ঈমান আনে এবং সত্য বলে জানে তাদের উপর সালাম। আমি আপনাকে সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছি যিনি এক, যার কোন শরীক নেই। এমতাবস্থায় আপনার রাজত্ব বহাল থাকবে।”

হারেস এ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। তবে তার মন্ত্রী ‘মুরাই’ ইসলাম গ্রহণ করেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

প্রথম খলিফা আবু বকরের খিলাফতকালে ভন্ড নবী মুসাইলামা আল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে ইয়ামামার প্রান্তরে শুজা ইবনে ওয়াহাব ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।[৫] মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. (বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড) 
  2. [উসুদুল গাবা-২/৩৮৬] 
  3. [আল ইসাবা-৩/১৩৮] 
  4. [হায়াতুস সাহাবা-১/১২৭] 
  5. [আল ইসাবা-২/১৩৮]