শিলাপাথার হত্যাকাণ্ড

(শিলাপাথার গণহত্যাকাণ্ড থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শিলাপাথর গণহত্যাকান্ড (ইংরাজি: Silapathar massacre) হল ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আসামের অবিভক্ত লক্ষীপুর জেলার শিলাপাথর এলাকায় পূর্ব পাকিস্তানের থেকে দেশ ভাগের সময় চলে আসা বাঙালি শরণার্থীদের উপর ঘটে যাওয়া একটি ভয়ঙ্কর গণহত্যা। [১][২] গণহত্যাকাণ্ডে প্রায় পঞ্চাশজন (৫০) বাঙালি নিহত হয়। অভিজ্ঞ সাংবাদিক সাবিয়া গোস্বামী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, সরকারি সূত্রে জানা গেছে যে, সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। [৩] এই আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বাঙালি। কয়েক দিন পরে আক্রমণকারীরা দূরবর্তী এলাকার দিকে অগ্রসর হওয়ায় বেশ কয়েকটি সেতু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।[৪] টেমপ্লেট:স্বাধীন ভারতে বাঙালিদের প্রতি আক্রমণ

শিলাপাথার গণহত্যাকাণ্ড
শিলাপাথার হত্যাকাণ্ড আসাম-এ অবস্থিত
শিলাপাথার হত্যাকাণ্ড
স্থানশিলাপাথার, লখিমপুর জেলা, (অধুনা ধেমাজি), আসাম, ভারত
তারিখ১৪ ফ্রেব্রুয়ারী ১৯৮৩ (ইউটিসি+৫:৩০)
লক্ষ্যবাঙালি
হামলার ধরনগণহত্যা
ব্যবহৃত অস্ত্রবন্দুক, বর্শা, তলোয়ার, কাস্তে, তীর-ধনুক ইত্যাদি
নিহত৫০ (মতান্তরে সংখ্যাটি আরও বেশি)
হামলাকারী দলমিশিংঅসমীয়া

পেক্ষাপট সম্পাদনা

১৯৬০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তানে অত্যাচারীর হয়ে হাজার হাজার বাঙালি পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। সেই সময় আসামের লক্ষীমপুর জেলার মধ্যে শিলাপাথর এবং অন্যান্য স্থানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের দ্বারা বাংলা হিন্দু শরণার্থীদের বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। শিলাপাথর এলাকায় কাকবরী, পানবাড়ী, অর্ণ্য রামনগর, অর্ণ্য তিরশী, খেরনি বাস্তি, সিমন সাপরি ও কঞ্চনকোণা গ্রামগুলি বাস করত বাংলার হিন্দু শরণার্থীরা।[৫] জয়পুর গ্রামের বসবাস করত হাজং শরণার্থীরা।[৫] বর্তমানে এই এলাকা ধেমাজি জেলার অধীনে।

১৯৮৩ সাল নাগাদ বাংলাভাষিরা শিলাপাথরের দুই দশক ধরে বসবাসকারী বাসিন্দা হয়ে উঠেছিল। তারা অঞ্চলের জাতিগত সংখ্যালঘু ছিল। এ অঞ্চলের প্রাচীনতম জনগোষ্ঠীর লোকেরা মাছ ধরার ফসল সংগ্রহের কাজ প্রায়শই তারা (শরণার্থীরা) করছিল।

হত্যাকাণ্ড সম্পাদনা

আক্রমণকারীরা কয়েকটি সেতু ধ্বংস করে ফেলেছিল যা দূরবর্তী এলাকার দিকে নিয়ে যায়। বন্দুক, বোমা, তীর-ধনুক দিয়ে গ্রামবাসীদের উপর আক্রমণ করে। গ্রামগুলো মৃত্যপুরীতে পরিণত হয়েছিল। হামলাকারীরা ঘরবাড়ি, মালামাল এবং খাদ্যশস্য পুড়িয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা শিশুদেরকে তাদের মায়ের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। গ্রামবাসীরা আশ্রয়ের জন্য জঙ্গলের দিকে চলে যায়। তারা অনেক দিন ধরে খাদ্য এবং আশ্রয়বিহীন দিন কাটান।

হাজং জনগোষ্ঠীর লোকজন সরাসরি হামলার লক্ষ্য ছিল না, কিন্তু তারা বাঙালি হিন্দুদের গণহত্যার সাক্ষী ছিল। ঘটনার সময় তাদের গ্রাম পুড়ে যায় এবং তারা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।

ভবিষ্যৎ ফল সম্পাদনা

আক্রমণকারীরা গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়, এর পর যারা বেঁচে ছিল তারা অরুণাচল প্রদেশে পালিয়ে চলে যায়। [৬] পরে সরকার কিছু ত্রাণ শিবির স্থাপন করে। জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জীবিতরা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেয়।এই ঘটনার কয়েক মাস পরে সরকার কিছু টিন শীট এবং রেশন জীবিতদেরকে প্রদান করে এবং ত্রাণ শিবির ভেঙে দেয়। এর পর গ্রামবাসীরা তাদের ঘরবাড়ী পুনর্নির্মাণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। তবে গণহত্যার যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাদের জন্য সরকারের কোনো দীর্ঘমেয়াদি ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা করেনি।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bakshi, Shiri Ram; Sharma, Sitaram; Gajrani, S (১৯৯৮)। Contemporary Political Leadership in India2। APH Publishing। পৃষ্ঠা 215। আইএসবিএন 9788176480086। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৬ 
  2. Basu, Sibaji Pratim, সম্পাদক (২০০৯)। The Fleeing People of South Asia: Selections from Refugee Watch। Anthem Press। পৃষ্ঠা 261। আইএসবিএন 9781843317784। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৬ 
  3. Goswami, Sabita (১১ মার্চ ২০১৪)। "27"। Along the Red River: A Memoirআইএসবিএন 9789383074266। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৭ 
  4. "Bengalis flee after new massacre"Chicago Tribune। Chicago। ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৬ 
  5. "'Bearing Witness': The Impact of Conflict on Women in Nagaland and Assam" (পিডিএফ)‘Bearing Witness’: Documenting Marginalized Histories। The Centre for North East Studies and Policy Research। ২০১১। পৃষ্ঠা 41–46। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৬ 
  6. Roy, S.G. (২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)। "Army troops rushed Thursday to northeastern Assam state where..."upi.com। UPI। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৭