শিরাকাওয়া-গো এবং গোকায়ামার ঐতিহাসিক গ্রাম

জাপানের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

শিরাকাওয়া-গো এবং গোকায়ামার ঐতিহাসিক গ্রামগুলো হচ্ছে জাপানের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি। জাপানের কেন্দ্রে গিফু এবং টোইয়ামা প্রিফেকচার এর সীমান্ত ঘেঁষে চলা শোগাওয়া নদীর উপত্যকায় স্থানটি অবস্থিত। গ্রামগুলো টিকে আছে একাদশ শতাব্দী থেকে।[১] শিরাকাওয়া-গো(白川郷, "সাদা নদী পুরনো-জেলা") এর অবস্থান হচ্ছে গিফুর শিরাকাওয়া গ্রামেগোকায়ামার (五箇山, "পাঁচ পর্বত ") এলাকা টোইয়ামা প্রিফেকচারের নান্টোর কামিতাইরা ও তাইরার অতীতের গ্রামগুলোর মধ্যে বিভক্ত।

শিরাকাওয়া-গো এবং গোকায়ামার ঐতিহাসিক গ্রামগুলো
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
মানদণ্ডসাংস্কৃতিক: ৪,৫
সূত্র৭৩৪
তালিকাভুক্তকরণ১৯৯৫; ২৯ বছর আগে (1995) (১৯ তম সভা)
শিরাকাওয়া-গো’এ বাড়ীতে আগুন জালানোর জায়গা(ফায়ার প্লেস)

গাসশো-জুকুরি (合掌造り) নামক বিশেষ স্থাপত্যরীতিতে বাড়ী তৈরির জন্য গ্রামগুলো বিখ্যাত। গাসশো-জুকুরি, "প্রার্থনারত হাত নির্মাণ" স্থাপত্যরীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক্ষেত্রে ছাদ তৈরি হয় খড় দিয়ে এবং এটি তির্যক ও ঢালু হওয়ায় প্রার্থনারত দুইটি জোড়বদ্ধ হাতের মত দেখায়। এই ধরনের নকশা আশ্চর্যজনক ভাবে শক্তিশালী, এর সাথে খড়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়, বাড়িগুলোকে টিকে থাকতে এবং ঐ অঞ্চলগুলোতে শীত মৌসুমে ভারী তুষারপাত হলে বরফের ভার বহন করে। [২]

শরতের প্রথমভাগে শিরাকাওয়া-গো

ঘরগুলো বেশ বড়, নিচু চালার মধ্যে তিন থেকে চার তলা বাড়ী, ঐতিহাসিকভাবেই (ঐতিহ্যগতভাবেই) বড় একান্নবর্তী পরিবার ধারণ করে এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্পের জন্য প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকে। ঘন জঙ্গলসহ পর্বতগুলো আজও ঐ এলাকার ৯৬ শতাংশ এলাকা ধারণ করে এবং মাটি কাটার যন্ত্র প্রচলনের আগে থেকেই নদী উপত্যকার সমতল ভূমির সরু সারি গুলো কৃষি ও বাসস্থানে ব্যবহার হয়ে আসছে। গাসশো বাড়ির উপরের তলাগুলো মূলত সেরিকালচারের(রেশম চাষ) জন্য তৈরি, আর নীচ তলা ব্যবহার হত পটাশিয়াম নাইট্রেট তৈরির জন্য, যা গানপাওডার তৈরির কাঁচামাল।[২]

গাসশো সম্পাদনা

মিঙ্কা স্থাপত্যরীতির বিভিন্ন প্রকারভেদের একটি হচ্ছে গাসশো-জুকুরি (合掌造)। এই রীতি হচ্ছে সাসু অবকাঠামো ব্যবস্থার ছাদের আকারের একটি বর্ধিত রূপ। ছাদের আকার প্রার্থনারত দুইটি জোড়বদ্ধ হাতের মত হওয়ায় এই নামকরণ করা হয়েছে। গিফু প্রিফেকচারে এগুলো প্রায়ই দেখা যায়।[৩] দোতলা ও তিনতলা বিশিষ্ট দালানের উপরের তলাগুলো সেরিকালচারের জন্য ব্যবহার হয়, যেখানে আবার রেশম পোকার ট্রে এবং মালবেরী পাতার গুদামজাতের জন্য জায়গা আছে।[৪] এই বাড়ীগুলো জাপানের বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যের মধ্যে দুর্লভ স্থাপত্য। ঐ সমস্ত অঞ্চলের প্রতিকূল আবহাওয়া প্রতিরোধ এবং মালবেরী গাছ ও রেশম চাষের উপযোগী আর্থ-সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতেই এই স্থাপত্যের উদ্ভব হয়।[১]

সংরক্ষণ সম্পাদনা

জাপানের ১৯৫০ সালের সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইনের আওতায় ওগিমাচি, আইনোকুরা এবং সুগানুমা গ্রাম তিনটি ঐতিহাসিক বাড়ি সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৫০ সালের আইনে আইনোকুরা এবং ওগিমাচিকে ঐতিহাসিক অঞ্চলের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন বা উন্নয়ন সংক্রান্ত যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই জাতীয় সরকার অনুমোদন করাতে হবে। এছাড়া বাড়ীগুলোর বাসিন্দারা গৃহের উন্নয়নের জন্য একটি প্রথাগত উন্নয়ন কার্যক্রম মেনে চলে। জাপান সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক এজেন্সির উপর সংরক্ষণের সামগ্রিক দায় ন্যাস্ত। তাদের সাথে অবশ্য অন্যান্য সরকারি সংস্থা কাজ করে।[১]

একটি গৃহের মালিকের উপর এর প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনার দায় বর্তায় এবং যাবতীয় কর্মকাণ্ড সংরক্ষণ পরিকল্পনার আওতায় তদারকি করা হয়। এছাড়া দলবদ্ধভাবে প্রথাগত নিয়মেও মেরামত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ ও প্রশিক্ষণ উভয় দিয়েই সাহায্য করে।[১]

যেহেতু বাড়ীগুলোতে আগুন লাগলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তাই সবগুলো গ্রামের সমস্ত অঞ্চলে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাড়ীগুলোর অভ্যন্তরীণ আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও সুসংগঠিত।[১]

পর্যটন সম্পাদনা

শিরাকাওয়া-গো এর বৃহত্তম গ্রাম ওগিমাচি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। অবস্থান করা ও খাদ্যের জন্য এখানে মিনশুকু নামে বিশেষ ধরনের রেস্তোরা আছে। গোকায়ামা যাওয়া একটু কষ্টসাধ্য, ঘরগুলো বেশি প্রাচীন, আধুনিকায়নের ছোঁয়া তুলনামূলক কম। এর গ্রামগুলোর মধ্যে সুগানুমা ও আইনোকুরা সবচেয়ে বেশি সুন্দর। [৫]

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সম্পাদনা

১৯৯৫ সালে ইউনেস্কোর ১৯ তম সভায় গ্রামগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। গ্রামগুলো প্রথাগত মানবসমাজের অসাধারণ দৃষ্টান্ত হওয়ায়, পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার সাথে দারুণভাবে খাপ খাওয়ায় ৪ নম্বর মানদণ্ড এবং ১৯৫০ সালের পর থেকে জাপানে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাঝেও অপরিবর্তিত থাকার জন্য অতীতের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত উভয় উপাদানই বহন করায় ৫ নম্বর মানদণ্ড অনুযায়ী এই স্বীকৃতি দেয়া হয়।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. http://whc.unesco.org/en/list/734
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৫ 
  3. Itoh (1979), p150
  4. Fahr-Becker (2001), p194
  5. http://www.japan-guide.com/e/e5950.html


আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা