শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ বধ্যভূমি ছিল শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি। সুকুমার বিশ্বাস রচিত 'একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর' এবং মিরাজ মিজু রচিত 'মিরপুরের ১০ বধ্যভূমি' শীর্ষক গ্রন্থে শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমির বিবরণীতে বলা হয়, 'মিরপুরের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা ভবন থেকে কমার্স কলেজের পথের মধ্যবর্তীতে যেতে যে কালভার্টটি পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। শিয়ালবাড়ির জঙ্গল, খালি বাসা, ডোবা, খাল, সৈয়দ আলী জামে মসজিদের ভেতর, বারান্দায়, পার্শ্ববর্তী দুটি কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষপ্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেয়া হয়। মাঠের কিনারায় খালের পাশে একটি তেঁতুল গাছে 'কেকুমার জল্লাদখানা' লেখা একটি সাইনবোর্ড ৯০ এর দশক পর্যন্ত ছিল। এই দুইশতাধিক মৃতদেহ কেকুমার নামক স্থানীয় এক বিহারি কসাই একাই জবাই করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়ই শিয়ালবাড়ি গ্রাম ছিল জনশূন্য। সমগ্র গ্রামটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে। গাছে ঝুলিয়ে রাখা ছিল অগনিত মৃতদেহ। শিয়ালবাড়ির প্রায় সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মানুষের কঙ্কাল।[১]

অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মিরপুরের কুখ্যাত শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি দেখে এসে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় লিখেছিলেন, 'কসাইখানায় কসাইকে দেখেছি জীবজন্তুর গোস্ত কিমা করে দিতে। আর শিয়ালবাড়িতে গিয়ে দেখলাম কিমা করা হয়েছে মানুষের হাড়। একটা মানুষকে ২ টুকরো করলেই যথেষ্ট পাশবিকতা হয়। তাকে কিমা করার মধ্যে কোন পাশবিকতার উল্লাস?'

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে মিরপুরের চিড়িয়াখানামুখী সড়কের পূর্ব প্রান্ত থেকে একদল হাজীকে বহন করা একটি মাইক্রোবাস শিয়ালবাড়ির প্রবেশমুখের কাছে এনে হাজীদের সবাইকে হত্যা করা হয়। ‘রূপনগরে’র (‘শিয়ালবাড়ি’র বর্তমান নাম) প্রবেশমুখের ডানদিকে ‘হাজি রোড’ নামের সড়কটি সেই পৈশাচিক ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি ধরে রেখেছে। যদিও মিরপুরের ‘শিয়ালবাড়ী বধ্যভূমি’ যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ছিল সবচেয়ে আলোচিত নাম, কিন্তু এর কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য নিদর্শন বর্তমানে সংরক্ষিত নেই। [২]
'হাজি রোড’ নামে যে সড়কে নৃশংসতা চালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী সেখানে থাকা কালভার্টটি বিলীন হয়ে বর্তমানে পাকা সড়ক হয়ে গেছে। এর চার পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পৈশাচিক ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি ধরে রাখার কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। বধ্যভূমির মাত্র কয়েক শতাংশ জায়গায় মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানের দেখা মেলে। স্থানীয়রা জানান, এখানে যুদ্ধচলাকালীন গণকবর দেওয়া হতো। এক কবরে ১৫/২০ জন করে মাটিচাপা দিয়েও প্রায় ১৫ কাঠা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছিল এটি। বর্তমানে স্থানটি দখল করে বহুতল ভবন, মার্কেট হয়েছে। অবশিষ্ট সামান্য অংশ কবরস্থান হিসেবে টিকে আছে।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ https://bangla.thedailystar.net/literature/history-tradition/history/news-555956
- ↑ https://www.channelionline.com/%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%9b%e0%a6%bf%e0%a6%b2-%e0%a6%8f%e0%a6%95-%e0%a6%ae%e0%a7%83/
- ↑ https://www.dhakatimes24.com/2024/03/25/348125