শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার
শাহ সুলতান বলখী (ফার্সি: شاه سلطان بلخی) বা শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার একাদশ শতাব্দির মুসলিম ধর্ম প্রচারক[১]। তিনি পুণ্ড্রবর্ধন (বর্তমান বগুড়া জেলা) এবং সন্দ্বীপে ইসলাম প্রচার করেছিলেন।
শাহ্ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার (মাছ আরোহী) | |
---|---|
অন্য নাম | বলখী মাহিসাওয়ার |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | বালখ, বর্তমান আফগানিস্তান |
মৃত্যু | |
সমাধিস্থল | সুলতান বলখির মাজার, মহাস্থানগড়, শিবগঞ্জ, বগুড়া |
ধর্ম | ইসলাম |
পিতামাতা |
|
অন্য নাম | বলখী মাহিসাওয়ার |
মুসলিম নেতা | |
ভিত্তিক | মহাস্থানগড় , পুণ্ড্রবর্ধন |
কাজের মেয়াদ | একাদশ শতাব্দী |
অন্য এক সূত্রে জানা যায়, ইতিহাসবিদ প্রভাষ চন্দ্র সেন রচিত ‘বগুড়ার ইতিহাস’ (১৯১২ সালে প্রকাশিত) গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ১০৪৩ সালে (হিজরী ৪৩৯) রাজা নরসিংহ বা পরশুরামকে আফগানিস্তান থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক সুফী শাহ সুলতান বলখী যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন। (সূত্র : ‘Mahasthan’ by Dr. Nazimuddin Ahmed, 1964, Published from Department of Archeology and Museums Ministry of sports and culture, Government of Bangladesh, Dacca)
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাতিনি আফগানিস্তানের বালখ রাজ্যের সম্রাট ছিলেন।[২] তিনি ছিলেন বালখ রাজ্যের সম্রাট শাহ আলী আসগরের পুত্র, পিতার মৃত্যুর পর তাকেই সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করা হয়[৩] কিন্তু তিনি তার সাম্রাজ্য ছেড়ে দরবেশ হয়েছিলেন, ৪৪০ হিজরীতে তিনি পুন্ড্রবর্ধনে আসার আগে প্রথমে বাংলার সন্দ্বীপে পৌছেন। পরে তিনি মহাস্তান গড়ে (পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী) আসেন।[২]
পুন্ড্রবর্ধন জয়
সম্পাদনাসুলতান বলখী ১৪শ শতাব্দীতে পুন্ড্রবর্ধনের রাজা পরশুরামকে পরাজিত করে পুন্ড্রবর্ধন জয় করেন[১] অন্য একটি উৎস থেকে জানা যায় তিনি ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা পরশুরামকে পরাজিত করেন[৪] পরশুরাম ছিলেন পন্ড্রবর্ধনের শেষ রাজা[৫] কথিত আছে শাহ সুলতান তার শীষ্যদের নিয়ে ফকিরবেশে একটি মাছ আকৃতির নৌকাতে করে মহাস্থানগড় এসেছিলেন সেখান থেকে তার নাম এসেছে মাহিসাওয়ার[৬] (মাছের পিঠে করে আগমণকারী) এবং তিনি বলখ থেকে এসেছিলেন সেজন্য তাকে শাহ সুলতান বলখী ও বলা হয়। মহাস্থানগড় পৌছে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন, প্রথমে রাজা পরশুরামের সেনাপ্রধান, মন্ত্রি এবং কিছু সাধারণ মানুষ ইসলামের বার্তা গ্রহণ করে মুসলিম হয়, এভাবে পুন্ড্রবর্ধনের মানুষ হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে রাজা পরশুরামের সাথে শাহ সুলতানের বিরোধ বাধে এবং এক সময় যুদ্ধ শুরু হয়, যুদ্ধে রাজা পরশুরাম পরাজিত এবং মৃত্যু বরন করেন।[৪] বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজার মেয়ে রাজকন্যা শিলাদেবী করতোয়া নদীতে ডুবে মরেন। তার ডুবে যাওয়ার আশেপাশের অঞ্চলটি শিলা দেবীর ঘাট হিসাবে পরিচিত।[৭]
উত্তরাধিকার
সম্পাদনাবালখী কীভাবে এবং কখন মারা গিয়েছিল তা অজানা। ১৬৮৫ সালে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে বলখীর দরগা ভাড়ামুক্ত জমি ছিল এবং সৈয়দ মুহাম্মদ তাহির, সৈয়দ আবদুর রহমান এবং সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাকে সনদ জারি করা হয়েছিল। বালখীর মাজারে গেট প্রবেশের নাম বুড়ি কা দরজা যা মুঘলরা তৈরি করে। ১৭১৯ সালে সম্রাট ফররুখসিয়রের রাজত্বকালে খোদাদিল মাজারের নিকটে একটি বৃহত একক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যা আজও প্রচলিত রয়েছে।[৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Omar Khalid Rumi (জানুয়ারি ৪, ২০০৮)। "A fort among hundred forts"। New Age। জানুয়ারি ৮, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১১, ২০১৬।
- ↑ ক খ Akhter, Fariduddin (২০০৫)। Tazkeratul Aulia। Dhaka: Meena Book House। পৃষ্ঠা 252–253।
- ↑ Saklayen, Ghulam (২০০৩)। Bangladesher Sufi Sadhak। Dhaka: Islamic Foundation Bangladesh। পৃষ্ঠা 84।
- ↑ ক খ "Bogra"। ১ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "Xila Devir Ghat"। Banglapedia। ২০০৮-০১-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-৩১।
- ↑ আব্দুল করিম (২০১২)। "শাহ সুলতান মাহিসওয়ার (রঃ)"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ আইয়ুব খান (২০১২)। "শীলাদেবীর ঘাট"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ মোহাম্মদ আইয়ুব খান (২০১২)। "মহাস্থান মসজিদ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।