শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ

বাংলাদেশের একটি মসজিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা

শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ (ইংরেজি: Shah Niamatullah Wali Mosque) মুঘল যুগের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন ও অন্যতম প্রাচীন মসজিদ বলে বিবেচনা করা হয়। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।[১] এটি বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে। ।ছোট সোনামসজিদ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরেই রয়েছে তাহাখানা কমপ্লেক্স , সঙ্গে রয়েছে একটি মসজিদ, প্রাসাদ ও শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীল সমাধি। তাহাখানার মূল প্রাসাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে সামান্য দূরে রয়েছে শাহ্ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের এক মাইল বিশিষ্ট একটি মসজিদ ঘর আছে।

শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ
শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ
সাধারণ তথ্য
অবস্থানসোনামসজিদ
ঠিকানাশিবগঞ্জ উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
শহররাজশাহী
দেশবাংলাদেশ
স্বত্বাধিকারীবাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর
কারিগরী বিবরণ
তলার সংখ্যা
পরিচিতির কারণমোঘল আমলের অন্যতম মসজিদ
অন্যান্য তথ্য
কক্ষ সংখ্যা
শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদের সম্মুখ প্রান্ত
শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদের পার্শ্ব দৃশ্য

ইতিহাস সম্পাদনা

শাহ সুজার রাজপ্রাসাদ তাহখানা এর পাশেই শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ টি অবস্থিত। এর পাশেই অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক শাহ নেয়ামত উল্লাহ এর সমাধী রয়েছে। সে থেকে ধারণা করা হয় যে শাহসুজার তত্তাবধানেই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিলো। তবে এ ব্যাপারে কোন প্রকার শিলালিপি পাওয়া যায় নি।শাহ সুজা বাংলার সুবাদার মোগল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি১৬৩৯ থেকে ১৬৬০সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করেন ।স্থাপত্যকর্মের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ ছিল। তার সময়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। তন্মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনাটি হলো বড় কাটরা । এছাড়াও লালবাগ মসজিদ ও শাহী ঈদগাহ (ধানমন্ডি) তৈরি করা হয়েছিল। এ ছাড়া কুমিল্লায় রয়েছে শাহ সুজা মসজিদ।[২] । তার সময়ে  নির্মাণ করা হয় বড় কাটরা , হোসেনী দালান ,ঈদগাহ ও চুড়িহাট্টা মসজিদ । শাহ সুজা রাজমহলে একটি প্রাসাদ (সাঙ্গ-ই-দালান) ও মসজিদ তৈরি করেছিলেন ।[৩] শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ হলেন মধ্যযুগের একজন প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক। তিনি তৎকালীন গৌড়ে(চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থান) ইসলাম প্রচার করেন।তার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মক্কার বনু আসাদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম প্রচারের জন্য তারা ভারতবর্ষে আগমন করেন।তিনি সুলতান শাহ সুজার সময়ে দিল্লীর " করোনিয়ার " নামক স্থান থেকে   রাজমহলে আসেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে । শাহ সুজা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং তারনিকট  বাইআত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি গৌড়ের উপকন্ঠে (বর্তমানে ফিরোজপুরের শিবগঞ্জ উপজেলায়) স্থায়ীভাবে আস্তানা স্থাপন করেছিলেন । এই অঞ্চলে তিনি দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সঙ্গে ইসলাম প্রচার করেন । ফিরোজপুরেই ১৬৬৪ / ১৬৬৯ সালে তাকে সমাধি  দেওয়া হয় । শাহ সুজা বাবা নেয়ামত উল্লাহ (র) এর বসাবসের জন্য সেখানে ছোটসোনা মসজিদের পাশেই খানকাহ ও দৃষ্টিনন্দন তহখানা নির্মাণ করেন। পরে তিনি গৌড়ের উপকন্ঠে (বর্তমান শিবগঞ্জ উপজেলা) ফিরোজপুরে স্থায়ীভাবে আস্তানা স্থাপন করেন।[৪] চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি. দূরেুত্বে অবস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী তোহাখানা কমপ্লেক্স এর অভ্যান্তরে শাহ নেয়ামতউল্লাহ এর তিন গম্বুজ মসজিদের উত্তরে শাহ নেয়ামতউল্লাহ এর মাজার অবস্থিত।[৫] এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে তাহখানা নির্মাণ করেছিলেন। তোহাখানা ফার্সি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, শাহজাহানের পু্ত্র শাহ সুজা বাংলার সুবাদার থাকাকলে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তার মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মাণ করেন।[৬] জনশ্রুতি আছে যে-শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মোরশেদ শাহ নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন তখন উক্ত ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কামরাটিতে বাস করতেন।[৫] তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারণা করা হয়।

 
সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর সমাধিস্থল

অবস্থান সম্পাদনা

শিবগঞ্জ উপজেলার বিখ্যাত সোনামসজিদ সংলগ্ন তাহখানা কমপ্লেক্স এর উত্তর পশ্চিম প্রান্তেই শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ ভবনটি অবস্থিত।

অবকাঠামো সম্পাদনা

শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ আয়তাকার এবং ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি ইমারত। এর সামনের দিকে মোট ৩ টি দরজা বিদ্যমান। মাঝেরটি তুলনামূলকভাবে বড়। মসজিদটি প্রাচীর বেষ্টিত।শাহ নেয়ামতউল্লাহ-এর মাজার সর্বপ্রথম মুঘল যুগের সমাধি স্থাপত্য নিদর্শন বলে বিবেচনা করা হয়। উঁচু ভিটের ‍উপর দন্ডায়মান এ সমাধিটি বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট ইমারত। এর প্রত্যেক দিকে ৪৯ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ। মধ্য প্রকোষ্ঠটি সারে ২১ ফুট বর্গ।মুল কক্ষের চারদিকে গিরে রয়েছে টানা ভর্টেড বারান্দা। মুল মাজার কক্ষের চর্তুদিকে একটি দরজা বিদ্যমান ।বর্তমানে দক্ষিণের দরজা ছাড়া বাঁকি ৩ টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত দরজা গুলি খিলানযুক্ত মূল কক্ষের ওয়াল ভোল্ট গম্বুজ এর ভার বহন করে। মূলত এটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট সমাধি ভবন। তাহাখানা থেকে ৩০-৩৫ মি. উত্তরে রয়েছে শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর সমাধি। বর্গাকার নকশা পরিকল্পনায় নির্মিত এবং অভ্যন্তরীণ সমাধি কক্ষের চতুর্দিকে প্রশস্ত বারান্দা আছে। পূর্ব-পশ্চিম এবং দক্ষিণে ৩টি করে খিলানযুক্ত মোট ১২টি খিলানপথ রয়েছে । ক্যানিংহাম-এর নামকরণ করেছিলেন বারদুয়ারী। প্রত্যেক দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশ পথ সন্নিবেশিত হওয়াতে এ মাজার শরীফকে বারদুয়ারী বলা হয় ।

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "রাজশাহী বিভাগের পুরাকীতি - Department of Archaeology-Government of the People's Republic of Bangladesh - প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার"। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  2. মোগল স্থাপত্য : মসজিদ তিন গম্বুজের স্মৃতি চার শতকের ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জুন ২০১৬ তারিখে, আশীষ-উর-রহমান; দৈনিক প্রথম আলো; ১০ আগস্ট ২০১০ তারিখে ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
  3. শাহ সুজা ( বাংলাপিডিয়া)
  4. সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ (২৬ মার্চ ২০১০)। "শাহ নিয়ামতুল্লাহ এর মাজার"। গৌড়বঙ্গ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর প্রাচীন নিদর্শন (2 সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: জাতীয় সাহিত্য পরিষদ। পৃষ্ঠা 101। 
  5. "সোনামসজিদ তোহাখানা মাজার শরিফ"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি ও বেসিস। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. চক্রবর্তী, রজনীকান্ত (জানুয়ারি ১৯৯৯)। গৌড়ের ইতিহাস (PDF) (1 & 2 সংস্করণ)। Bankim Chatterjee Street, Calcutta 700 073: Dev's Publishing। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]