শাহজাহান ভুঁইয়া

বাংলাদেশী অপরাধী ও আলোচিত জল্লাদ

মো.শাহজাহান ভুঁইয়া বা জল্লাদ শাহজাহান (১৯৫০–২০২৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ৪৪ বছরের কারাবন্দী ও শীর্ষ জল্লাদ। তিনি ৪৪ বছরের কারাজীবনের ১৯৯৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২১ বছর পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাটিয়েছেন। বন্দী অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান পাঁচ হত্যাকারী, তিন যুদ্ধাপরাধী ও অন্যান্য হত্যা মামলার বন্দীদের ফাঁসি কার্যকর করেন।[][]

মো.শাহজাহান ভুঁইয়া
জন্ম(১৯৫০-০৩-২৬)২৬ মার্চ ১৯৫০[]
মৃত্যু২৪ জুন ২০২৪(2024-06-24) (বয়স ৭৪)[]
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
পেশা
পরিচিতির কারণশেখ মুজিবুর রহমানের ছয় ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর করেন[]

শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে। তিনি তিন বোন, এক ভাই ছিল। তার বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া ও মা মেহের। তিনি ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন।[]

কারাবন্দী জীবন

সম্পাদনা

শাহজাহান ভুঁইয়া একজন প্রাক্তন সেনাসদস্য। তিনি এইচএসসি পাস করার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সিপাহি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়ম-কানুন ও পরিশ্রম তার পছন্দ হয়নি। ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীর নিয়ম ভঙ্গ করার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন এবং জেলজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধের কারণে শাহজাহান একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে ডাকাতি ও খুনের মতো অপরাধ করার পর ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন।[] ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়।[] দীর্ঘ ৩২ বছরের কারাবাস শেষে ২০২৩ সালের ১৮ জুন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।[]

জল্লাদ হিসেবে পদার্পণ

সম্পাদনা

তিনি নিজেকে অনেক সাহসী দাবি করতেন। সেই আগ্রহ আর সাহস থেকে তিনি সহকারী জল্লাদ হিসেবে নাম লেখিয়েছিলেন। গফরগাঁও থেকে আসা আসামী নূর ইসলামের ফাঁসি কার্যকর হতে দেখার মাধ্যমে জল্লাদ হিসেবে তার হাতে খড়ি হয়।[] তিনি ১৯৯৮ সালে প্রথম ফাঁসি দিয়েছিলেন।[]

জল্লাদ হিসেবে ভূমিকা

সম্পাদনা

কারাগারের নথি অনুযায়ী শাহজাহান ভুঁইয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় ঘাতক বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী।[১০] ১৯৯৩ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি মুনির, ১৯৯৭ সালে বহুল আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসান, ২০০৪ সালে এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই এবং আতাউর রহমান সানিকেওসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন। তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে সহকারী জল্লাদ হিসেবে কাজ শুরু করেন।[১১]

মৃত্যু

সম্পাদনা

২৩ জুন ২০২৪ দিবাগত রাত ৩টার দিকে তার বুকে ব্যথা উঠে। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় বাসার মালিক আবুল কাশেম। ২৪ জুন ২০২৪ ভোর সাড়ে ৫টার রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "কে এই জল্লাদ শাহজাহান?"৭১ টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭ 
  2. রহমান, আশীষ উর (২০২৪-০৬-২৬)। "জল্লাদ শাহজাহানের বয়ানে জেলজীবনের অজানা কাহিনি"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭ 
  3. "যেভাবে মৃত্যু হলো জল্লাদ শাহজাহানের"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭ 
  4. "তৃতীয় জীবনে 'জল্লাদ' শাহজাহান, দিন কাটছে চা বেচে"banglanews24.com। ২০২৪-০১-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭ 
  5. "জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া"The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭ 
  6. "মারা গেছেন সেই 'জল্লাদ' শাহজাহান"banglanews24.com। ২০২৪-০৬-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৮ 
  7. প্রতিনিধি, নরসিংদী। "জল্লাদ শাহজাহান মারা গেছেন | কালবেলা"কালবেলা | বাংলা নিউজ পেপার। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৮ 
  8. আশীষ উর রহমান, ঢাকা (২০২৪-০৬-২৬)। "জল্লাদ শাহজাহানের বয়ানে জেলজীবনের অজানা কাহিনি"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭ 
  9. "তৃতীয় জীবনে 'জল্লাদ' শাহজাহান, দিন কাটছে চা বেচে"banglanews24.com। ২০২৪-০১-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৮ 
  10. "বিয়ে করে সর্বস্বান্ত হওয়া জল্লাদ শাহজাহানের গল্প"Barta24 (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৬-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৮ 
  11. "৬০ ফাঁসির জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া: ৪৪ বছর কারাভোগের পর জীবন যেমন যাচ্ছে"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-১০-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৮ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা