শামীমা করিম চৌধুরী

বাংলাদেশি পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নারীবৈজ্ঞানিক প্রবক্তা

শামীমা করিম চৌধুরী (জন্ম: ১২ ফেব্রুয়ারি , ১৯৫১) একজন বাংলাদেশি পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নারীবৈজ্ঞানিক প্রবক্তা। [১] ৪৪ বছর অধ্যাপনা এবং গবেষণার পরে তিনি ৩০শে জুন, ২০১৬ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে ৭০ জনেরও বেশি মাস্টার্স এবং এমফিল শিক্ষার্থীদের তদারকি করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ফিজিকাল সোসাইটির ফেলো এবং ওডাব্লিউএসডি, আইওপি এবং অন্যান্য অনেক জাতীয় বিজ্ঞান সমিতির সদস্য। তিনি বাংলাদেশের ডব্লিউআইপি-র দলনেত্রী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রোভাস্ট এবং বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেসের (অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে নামকরণ করা হয়েছে) পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। [২]

শামীমা করিম চৌধুরী
শামীমা করিম চৌধুরীর ছবি
পরিচালক, বোস সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কাজের মেয়াদ
মার্চ, ২০১০ – জুন, ২০১৭
প্রভোস্ট, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কাজের মেয়াদ
অক্টোবর, ১৯৯৯ – ফেব্রুয়ারি, ২০০২
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মশামীমা করিম
(১৯৫১-০২-১২)১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১
কুমিল্লা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশি
দাম্পত্য সঙ্গীনঈম চৌধুরী
সন্তান
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (এসএসসি-১৯৬৫)
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ (এইচএসসি-১৯৬৭)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি সম্মান, ১৯৭০)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (এমএসসি থিসিস গ্রুপ ১৯৭১)
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮২ সালে বিজ্ঞানে মাস্টার্স)
পেশাশিক্ষকতা, গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
ওয়েবসাইটব্যক্তিগত ওয়েবসাইট

শিক্ষা সম্পাদনা

শামীমা চৌধুরী ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শ‌ুর‌ু করেন [১] এবং ১৯৭০ সালে (১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা) বি.এসসি. (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে থিসিস গ্রুপে (ব্যাচ ১৯৭১) এম.এসসি. সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানে স্কুল জৈবপদার্থবিদ্যা এবং ক্রিস্টালোগ্রাফি ল্যাবরেটরি থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএস সম্পন্ন করেছেন। তিনি প্রফেসর লুইস জনসনের সাথে ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অধীনে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জৈবপদার্থ গবেষণাগারে একজন পরিদর্শক বিজ্ঞানী হিসাবেও কাজ করেছেন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

কর্মজীবন সম্পাদনা

শিক্ষায়তনিক সম্পাদনা

শামীমা করিম ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসাবে যোগদানের আগে ১৯৭৩-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে গবেষণা পণ্ডিত হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি ১৯৮০-১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফিজিক্সে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদানের জন্য বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নত হন। তিনি ২০১৬ সালের জুলাইয়ে সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক হিসাবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পাদনা

শামীমা চৌধুরী ১৯৯৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রভোস্ট হিসাবে এবং ১৯৯৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্রের (এসআরসিসি) উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি মার্চ, ২০১০ থেকে জুন, ২০১৭ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেস-এর পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বোস সেন্টারের পরিচালক হিসাবে তিনি ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বোস সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। অধ্যাপক ড. পার্থ ঘোষ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রেখেছিলেন [৩]। তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক কর্মশালা, বসু বক্তৃতা এবং জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করেছিলেন, যেখানে অনেকে খ্যাতনামা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানীরা অংশ নিয়েছিলেন। অধ্যাপক ড. এম জাহিদ হাসান নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে নভেম্বর ২০১৫ সালে বসু বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

গবেষণা সম্পাদনা

চৌধুরী তার পুরো কর্মজীবন জুড়ে পাতলা ফিল্ম বৈশিষ্ট্য, সৌর কোষ, ফেরাইট এবং সিরামিক উপকরণ, ন্যানো এবং উন্নত উপকরণ, জৈবপদার্থবিদ্যা এবং স্ফটিকগ্রাফি সহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছেন। গুগল স্কলারের (২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) [৪] এবং রিসার্চগেট [৫] তথ্য অনুসারে ৪৫৬টি এবং রিসার্চগেটের তথ্য অনুসারে ৫৫৫টি উদ্ধৃতি এবং ২০০ এরও বেশি সমকালীন পর্যালোচিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা রয়েছে তার।

বিজ্ঞানে নারীদের সম্পৃক্তকরণ সম্পাদনা

শামীমা চৌধুরী বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে লৈঙ্গিক সমতার পক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, IEEE-WIE, পদার্থবিজ্ঞানে নারী এবং লিঙ্গায়েত শীর্ষক সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা হিসাবে অংশ নিয়েছেন। ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে চিকিৎসা বা অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় পদার্থবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে নারীদের শতকরা সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। [৬] তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি,[৭] বিজ্ঞান,[৮][৯][১০][১১] এবং পদার্থবিজ্ঞানের [১২] ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা নিয়ে সক্রিয়ভাবে বক্তব্য রেখেছেন।

হিতৈষণা সম্পাদনা

বাংলাদেশ ফিজিকাল সোসাইটি ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর শামীমা করিম চৌধুরী ট্রাস্ট তহবিল শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত এবং পদার্থবিজ্ঞানের বিএসসি সম্মান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত একজন ছাত্র এবং একজন ছাত্রীকে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি একজন আর্থিক অসুবিধেয় শিক্ষার্থীকেও এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। [১৩]

রোকেয়া হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন [১৪] প্রতিষ্ঠিত শামীমা করিম চৌধুরী তহবিল থেকেও একজন মেধাবী ও আর্থিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত স্নাতক শিক্ষার্থীকে করে বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

শামীমা চৌধুরী ১৯৫১ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ফজলুল করিম ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম মুসলিম অধ্যাপক এবং উপাধ্যক্ষ। তার মা জোহরা করিম ছিলেন একজন সমাজকর্মী এবং অল পাকিস্তান উইমেন অ্যাসোসিয়েশনের (সর্ব পাকিস্তান মহিলা সমিতি (এপিডাব্লিউএ)) সহ-সভাপতি। ১৯৭৬ সালের ০৭ মার্চ তার স্বামী নঈম চৌধুরীর মৃত্যু হয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা একসঙ্গেই ছিলেন। [১৫] তাদের দুজন সন্তান রয়েছে।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "AGAINST ALL ODDS-Top women scientists in Bangladesh talk about their careers and the challenges they faced in reaching the top"The Daily Star (Bangladesh)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  2. "The University of Dhaka - Faculty of Sciences"University of Dhaka। ১০ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "Bose Conference-Distinguished Speakers"Bose Center, Dhaka University। ২০১৫। ২৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০ 
  4. "Prof. Shamima Choudhury - Google Scholar Citations"Google Scholar। ২৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  5. "ResearchGate Profile of Shamima Choudhury"ResearchGate। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. "Are women good at science?"The Daily Star (Bangladesh)। ২৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  7. "WOMEN IN ICT: ACCELERATING THE PROGRESS OF BANGLADESH"The Financial Times। ১০ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  8. "Young Women scientists workshop"Bangladesh Academy of Sciences। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  9. "Women in Science and Technology in Asia" (পিডিএফ)National Academy of Sciences Srilanka। ২৯ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  10. "Challenges of Young Women Scientists in New and Emerging Areas" (পিডিএফ)Japan Physical Society। Archived from the original on ১০ জুন ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  11. "Quality science education a must for prosperity"The Daily Star। ১৩ জুলাই ২০০৮। ২৯ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২০ 
  12. Choudhury, Shamima (২০১৩)। Women in physics in Bangladesh। American Institute of Physics। পৃষ্ঠা 1517(74)। 
  13. "Trust Funds of Bangladesh Physical Society"Bangladesh Physical Society। ২৫ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২০ 
  14. "DU Rokeya Hall alumni holds fourth reunion"The Daily Observer। ২৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২০ 
  15. "Prof Naiyyum Choudhury passes away"The Energy and Power। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯। ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯