শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে

শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে (আদি পাঠ: সজনি গো, আঁধার রজনী ঘোর ঘনঘটা[১]) হল একটি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত[২] এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (আষাঢ় ১২৯১) কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতা[৩] এবং কবির গীতি-সংকলন গীতবিতান গ্রন্থের ‘প্রকৃতি’ পর্যায়ের অন্তর্গত ‘বর্ষা’ উপপর্যায়-ভুক্ত ৩১ সংখ্যক গান।[৪] ১২টি ছত্রে বিন্যস্ত[৫] গানটি পিলু-মল্লার রাগ ও ত্রিতালে নিবদ্ধ।[১]

গানটির স্বরলিপি প্রথম প্রকাশিত হয় কেতকী (১৩২৬ বঙ্গাব্দ) গ্রন্থে এবং পরে স্বরবিতান গ্রন্থের একাদশ খণ্ডে।[১] স্বরলিপিকার ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর[১]

১৩২৮ বঙ্গাব্দের ২৭ শ্রাবণ বিদেশ-প্রত্যাগত রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধিত করতে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত ‘বর্ষাসঙ্গীত’ অনুষ্ঠানে এই গানটি গীত হয়।[৩] এরপর ‘বর্ষামঙ্গল’ শিরোনামে এটি ১৩৩২ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত গীতিপুথিকা-য় মুদ্রিত হয়।[৩] ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ৩ শ্রাবণ শান্তিনিকেতনে ‘বর্ষামঙ্গল’ অনুষ্ঠানে এটি গীত হয়।[৩]

প্রকাশ সম্পাদনা

ভারতী পত্রিকার আশ্বিন ১২৮৪ (অক্টোবর ১৮৭৭) সংখ্যায় যে পাঁচটি গান একসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল, "শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে" গানটি তার মধ্যে অন্যতম।[১] পত্রিকায় গানটি মুদ্রিত হয়েছিল ‘ভানুসিংহের কবিতা’ শিরোনামে।[৩] ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী থেকে কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে (১৩০২ বঙ্গাব্দ) সংকলিত হয়েছিল; কিন্তু বর্তমান সংস্করণে এটি বর্জিত।[৩] সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থাবলী গ্রন্থের (১৩০৩) ‘ভানুসিংহের কবিতা’ অংশে[৩] এটি ‘অভিসার’ শিরোনামে মুদ্রিত হয়।[১] এই গ্রন্থের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “ভানুসিংহের অনেকগুলি কবিতা লেখকের ১৫।১৬ বৎসর বয়সের লেখা – আবার তাহার মধ্যে গুটিকতক পরবর্তীকালের লেখাও আছে।” "শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে" এই প্রথম পর্যায়ভুক্ত রচনা।[৫] এছাড়াও ছাড়াও এই গানটি কাব্য-গ্রন্থ (১৩২৩) ও গীতবিতান (দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রথম খণ্ড, ভাদ্র ১৩৪৬) সংকলনেও গ্রন্থিত হয়।[৩]

রেকর্ড সম্পাদনা

"শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে" গানটি রেকর্ড করেছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (এন২৭৭৪৭), নীলিমা সেন (ইএএসডি ১৩৬২ স্টিরিও), সুমিত্রা সেন ও শ্রবণা ভট্টাচার্য। বৌঠাকুরানীর হাট চলচ্চিত্রে এই গানটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এছাড়া ভানুসিংহের পদাবলী গীতি-আলেখ্যেও (ইএএসডি ১৪১৭ স্টিরিও, এইচটিসিএস ০২বি ২৫১৩ স্টিরিও) এই গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ, পৃ. ৩০৭
  2. রবীন্দ্ররচনাভিধান, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৫৫; উদ্ধৃতি: "প্রখ্যাত গায়ক-গায়িকার কণ্ঠে গীত রেকর্ড প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।"
  3. গীতবিতান তথ্যভাণ্ডার, পৃ. ৬১৬-৬১৭
  4. গীতবিতান, পৃ. ৪০০
  5. রবীন্দ্ররচনাভিধান, অষ্টাদশ খণ্ড, পৃ. ২৫

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • অনুত্তম ভট্টাচার্য, রবীন্দ্ররচনাভিধান, প্রথম খণ্ড: কাব্য ও কবিতা [সন্ধ্যাসংগীত – ক্ষণিকা], দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৯৮ সংস্করণ, মে ২০১৯ মুদ্রণ
  • অনুত্তম ভট্টাচার্য, রবীন্দ্ররচনাভিধান, অষ্টাদশ খণ্ড: গীতবিতান – দুই [প্রকৃতি – বিবিধ গান], দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ১ বৈশাখ ১৪২৪ সংস্করণ, নভেম্বর ২০১৯ মুদ্রণ
  • পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার (সংকলন ও সম্পাদনা), গীতবিতান তথ্যভাণ্ডার, সিগনেট প্রেস, কলকাতা, ২০১৯
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গীতবিতান (অখণ্ড সংস্করণ), বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, কার্তিক ১৪১২ পুনর্মুদ্রণ
  • সুরেন মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ, সাহিত্য প্রকাশ, কলকাতা, ২২ শ্রাবণ ১৪১৬ সংস্করণ

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা