ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবক

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবক (ইংরেজি: Laniakea Supercluster; /ˌlæniəˈkə/, হাওয়াইয়ান ভাষায় যার অর্থ মুক্ত আকাশ বা অতিকায় স্বর্গ[১]) হল একটি ছায়াপথ মহাস্তবকআকাশগঙ্গা ছায়াপথ এবং প্রায় ১০০,০০০টি অন্যান্য নিকটবর্তী ছায়াপথ এই মহাস্তবকের অন্তর্গত। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর. ব্রেন্ট টুলি, লিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলেন কোর্টিস, জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের যেহুদা হফম্যান এবং সিইএ ইউনিভার্সিটি প্যারিস-স্যাকলের ড্যানিয়েল পোমারিড সহ এক দল জ্যোতির্বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রকাশিত ছায়াপথগুলির আপেক্ষিক গতিবেগের ভিত্তিতে মহাস্তবকগুলিকে সংজ্ঞায়িত করার নতুন পদ্ধতি অনুসারে এটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[২][৩] স্থানীয় মহাস্তবকের নতুন সংজ্ঞাটি ইতিপূর্বে সংজ্ঞায়িত স্থানীয় মহাস্তবক কন্যা মহাস্তবকটিকে একটি উপাঙ্গ হিসেবে ল্যানিয়াকেয়ার অন্তর্ভুক্ত করে।[৪][৫][৬][৭][৮]

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবক
ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবক ও সেটির উপাদান ছায়াপথ স্তবকগুলির মানচিত্র
পর্যবেক্ষণমূলক উপাত্ত (ইপক জে২০০০)
তারামণ্ডলদক্ষিণ ত্রিভূজনর্মা
(মহা-আকর্ষক)
বিষুবাংশ ১০ ৩২মি
বিষুবলম্ব−৪৬° ০০′
ছায়াপথের সংখ্যা১০০,০০০–১৫০,০০০
উজ্জ্বলতম ছায়াপথআকাশগঙ্গা ছায়াপথ (মান –৫.০)
দূরত্ব২৫০ নিযুত ly (৭৭ Mpc) টেমপ্লেট:Hub
(মহা-আকর্ষক)
(H0, প্লাংক ২০১৩ থেকে)
অন্যান্য নাম
স্থানীয় মহাস্তবক, ল্যানিয়াকেয়া, ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবক, ল্যানিয়াকেয়া চত্বর
আরও দেখুন: ছায়াপথ স্তবক, ছায়াপথ স্তবকের তালিকা
নিকটবর্তী মহাবিশ্বের মহাস্তবকগুলির মানচিত্র, ল্যানিয়াকেয়া হলুদ রঙে চিহ্নিত
ত্রিমাত্রিক ভিডিওতে ল্যানিয়াকেয়া ও নিকটবর্তী ছায়াপথ মহাস্তবকসমূহ

পরবর্তীকালের গবেষণা থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ল্যানিয়াকেয়া মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ নয়; পার্শ্ববর্তী অতিঘনত্বযুক্ত এলাকাগুলির প্রেক্ষিতে এটির কম ঘনত্ব দেখে মনে হয় যে এটি নিজেকে ধরে রাখার পরিবর্তে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।[৯]

নাম সম্পাদনা

হাওয়াইয়ান ভাষায় ‘ল্যানিয়াকেয়া’ (laniākea (টেমপ্লেট:IPA-haw)) নামটির অর্থ ‘অতিকায় স্বর্গ’। এটি ‘ল্যানি’ অর্থাৎ ‘স্বর্গ’ এবং আকেয়া’ অর্থাৎ ‘প্রশস্ত, অপরিমেয়’ শব্দ দু’টি দ্বারা গঠিত। ক্যাপিওল্যানি কমিউনিটি কলেজের হাওয়াইয়ান ভাষার সহকারী অধ্যাপক নাওয়া নেপোলিয়ন এই নামটি প্রস্তাব করেছিলেন।[১০] পলিনেশীয় নৌচালকেরা প্রশান্ত মহাসাগরে নৌচালনার সময় আকাশ সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটাতো; তাদের সম্মানার্থেই এই নামকরণ করা হয়।[১১]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকটি ১৬০ মেগাপারসেক (৫২০×১০ আলোকবর্ষ)-এরও বেশি এলাকা জুড়ে প্রসারিত প্রায় ১০০,০০০ ছায়াপথ নিয়ে গঠিত। এটির ভর প্রায় ১০১৭ সৌর ভর বা আমাদের ছায়াপথের তুলনায় এক লক্ষ গুণ বেশি। এই ভর হোরোলোজিয়াম মহাস্তবকের প্রায় সমান।[২] এটি চারটি উপাঙ্গ নিয়ে গঠিত, যেগুলিকে ইতিপূর্বে পৃথক পৃথক মহাস্তবক আখ্যা দেওয়া হত:

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকের সর্বাপেক্ষা ভারী ছায়াপথ স্তবকগুলি হল কন্যা, হাইড্রা, সেন্টারাস, আবেল ৩৫৬৫, আবেল ৩৫৭৪, আবেল ৩৫২১, ফরন্যাক্স, এরিডেনাসনর্মা। সমগ্র মহাস্তবকটি প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০টি জ্ঞাত ছায়াপথ স্তবক বা গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি হওয়াও সম্ভব, কারণ এগুলির মধ্যে কতকগুলি পরিহার ক্ষেত্র নামে মহাকাশের এমন এক জায়গার মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করছে, যেটি আকাশগঙ্গা ছায়াপথের গ্যাসধূলিকণা দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ায় শনাক্তকরণের প্রায় অযোগ্য।

মহাস্তবকগুলির মহাবিশ্বের বৃহত্তম গঠনগুলির অন্যতম। এগুলির সীমানা নির্দেশ, বিশেষত এগুলির ভিতর থেকে, করা কঠিন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দল বেতার দূরবীন ব্যবহার করে স্থানীয় ছায়াপথগুলির একটি বৃহৎ গুচ্ছের গতিবিধির মানচিত্র অঙ্কন করেন। একটি নির্দিষ্ট মহাস্তবকের মধ্যে অধিকাংশ ছায়াপথের গতি অভ্যন্তরভাগে ভরকেন্দ্রের দিকে পরিচালিত হয়। ল্যানিয়াকেয়ার ক্ষেত্রে মহাকর্ষীয় কেন্দ্রবিন্দুটির নাম মহা-আকর্ষক। এটি মহাস্তবকের অন্যান্য সকল গোষ্ঠী সহ ছায়াপথগুলির স্থানীয় গোষ্ঠীর (আকাশগঙ্গা ছায়াপথ যার অন্তর্গত) গতিকে প্রভাবিত করে। ল্যানিয়াকেয়ার উপাদান স্তবকগুলি মহাকর্ষীয় টানে আবদ্ধ হলেও, ল্যানিয়াকেয়া তা নয় এবং বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে ভবিষ্যতে তমোশক্তি দ্বারা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।[৬]

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকের অস্তিত্বের কথা ২০১৪ সালে নিশ্চিত করা হলেও,[২] ১৯৮০-এর দশকের গবেষণা থেকেই জানা গিয়েছিল বেশ কয়েকটি মহাস্তবক পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলেও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী টনি ফেয়ারঅল বলেছিলেন যে লাল সরণ থেকে কন্যা ও হাইড্রা-সেন্টারাস মহাস্তবকের সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[১৩]

অবস্থান সম্পাদনা

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকের প্রতিবেশী মহাস্তবকগুলি হল শ্যাপলে মহাস্তবক, হারকিউলিস মহাস্তবক, কোমা মহাস্তবকপার্সিয়ুস-পিসেস মহাস্তবক। ল্যানিয়াকেয়ার সংজ্ঞায়নের সময় এই মহাস্তবকগুলির এবং ল্যানিয়াকেয়ার সীমান্ত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ছিল না।[৫] তার পরে অবশ্য মহাস্তবকের সীমান্ত ও তার বাইরের গঠনগুলির সম্পর্কে গবেষণার অনেক উন্নতি ঘটে।[১৪][১৫]

ল্যানিয়াকেয়া মহাস্তবকটি আবার পিসেস-সেটাস মহাস্তবক চত্বর নামে একটি ছায়াপথ সূত্রের অংশ।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Taylor, Charles (২০১৪)। Science Encyclopedia। Kingfisher। 
  2. Tully, R. Brent; Courtois, Hélène; Hoffman, Yehuda; Pomarède, Daniel (সেপ্টে ২০১৪)। "The Laniakea supercluster of galaxies"Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 513 (7516): 71–73। arXiv:1409.0880 আইএসএসএন 1476-4687এসটুসিআইডি 205240232ডিওআই:10.1038/nature13674পিএমআইডি 25186900বিবকোড:2014Natur.513...71T 
  3. Tempel, Elmo (২০১৪-০৯-০১)। "Cosmology: Meet the Laniakea supercluster"। Nature513 (7516): 41–42। ডিওআই:10.1038/513041a পিএমআইডি 25186896বিবকোড:2014Natur.513...41T 
  4. "Newly identified galactic supercluster is home to the Milky Way"National Radio Astronomy Observatory। ScienceDaily। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪। 
  5. Irene Klotz (২০১৪-০৯-০৩)। "New map shows Milky Way lives in Laniakea galaxy complex"Reuters। Reuters। 
  6. Elizabeth Gibney (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Earth's new address: 'Solar System, Milky Way, Laniakea'"। Nature। ডিওআই:10.1038/nature.2014.15819 
  7. Quenqua, Douglas (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Astronomers Give Name to Network of Galaxies"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  8. Carlisle, Camille M. (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Laniakea: Our Home Supercluster"। Sky and Telescope। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  9. Chon, Gayoung; Böhringer, Hans; Zaroubi, Saleem (২০১৫)। "On the definition of superclusters"। Astronomy & Astrophysics575: L14। arXiv:1502.04584 এসটুসিআইডি 119195010ডিওআই:10.1051/0004-6361/201425591বিবকোড:2015A&A...575L..14C 
  10. "Multimedia Gallery - | NSF - National Science Foundation" 
  11. "Astronomers define boundaries of our home supercluster and name it Laniakea | EarthSky.org"earthsky.org (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৬ 
  12. Mitra, Shyamal (১৯৮৯)। "A Study of the Southern Supercluster"The World of Galaxies, Pp 426-427। Springer, New York, NY.: 426–427। আইএসবিএন 978-1-4613-9358-0ডিওআই:10.1007/978-1-4613-9356-6_65। ৯ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  13. Fairall, Anthony Patrick (১৯৮৮)। "A redshift map of the Triangulum Australe-Ara region – Further indication that Centaurus and Pavo are one and the same supercluster"। Monthly Notices of the Royal Astronomical Society230 (1): 69–77। ডিওআই:10.1093/mnras/230.1.69 বিবকোড:1988MNRAS.230...69F 
  14. News, U. H.। "Astronomers map massive structure beyond Laniakea Supercluster | University of Hawaiʻi System News" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১০ 
  15. Pomarède, Daniel; Tully, R. Brent; Graziani, Romain; Courtois, Hélène M.; Hoffman, Yehuda; Lezmy, Jérémy (২০২০-০৭-০১)। "Cosmicflows-3: The South Pole Wall"The Astrophysical Journal897 (2): 133। arXiv:2007.04414 এসটুসিআইডি 220425419ডিওআই:10.3847/1538-4357/ab9952বিবকোড:2020ApJ...897..133P 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  •   Vimeo, "Laniakea Supercluster", Daniel Pomarède, 4 September 2014—video representation of the findings of the discovery paper
  •   YouTube, "Laniakea: Our Home Supercluster", Nature Video, 3 September 2014—Redrawing the boundaries of the cosmic map, they redefine our home supercluster and name it Laniakea.