লোথাল

গুজরাট রাজ্যের শহর

লোথাল প্রাচীন সিন্ধ সভ্যতার দক্ষিণতম স্থানগুলির মধ্যে একটি ছিল,[] যা অধুনা গুজরাত রাজ্যের ভাল অঞ্চলে অবস্থিত। শহরটির নির্মাণ কাজ প্রায় ২২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়।[]

লোথাল
লোথাল শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ
লোথাল গুজরাত-এ অবস্থিত
লোথাল
গুজরাতে অবস্থান
অবস্থানসারগয়ালা,গুজরাত,ভারত
স্থানাঙ্ক২২°১৯′ উত্তর ৭২°০৮′ পূর্ব / ২২.৩১° উত্তর ৭২.১৪° পূর্ব / 22.31; 72.14
ধরনবসতি
এলাকা৭ হেক্টর (১৭ একর)
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠিতআনুমানিক ২৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব
সময়কালব্রোঞ্জ যুগ
সংস্কৃতিসিন্ধু সভ্যতা
ঘটনাবলিঅজানা
স্থান নোটসমূহ
খননের তারিখ১৯৫৫–১৯৬০
অবস্থাধ্বংসপ্রাপ্ত
মালিকানাসরকারি
ব্যবস্থাপনাভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ
জনসাধারণের প্রবেশাধিকারহ্যাঁ

প্রাচীন নিদর্শন সংরক্ষণকারী ভারতীয় সরকারি সংস্থা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯৫৪ সালে লোথালের আবিষ্কার করেছিল। লোথালে খনন কাজ ১৯৫৫ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৬০ সালের ১৯শে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মতে, তর্কাতীতভাবে লোথাল বিশ্বের প্রাচীনতম পরিচিত ডক ছিল, যা শহরটিকে বাণিজ্য পথে সবরমতী নদীর প্রাচীন প্রবাহের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। এই বাণিজ্য পথটি সিন্ধুর (পাকিস্তান) হরপ্পা শহর ও সৌরাষ্ট্র উপদ্বীপের মধ্যে বিস্তৃত ছিল, যেখানে বর্তমান কচ্ছ মরুভূমি আরব সাগরের একটি অংশ ছিল। কিন্তু অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেন না। তাদের মতে লোথাল নিছকই একটা ছোট শহর ছিল আর যে পোতাশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা আসলে একটা সেচের জলাধার ছিল।[]

লোথাল প্রাচীনকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল, যার মণি, রত্ন ও মূল্যবান অলঙ্কারের বাণিজ্য পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার দূরবর্তী স্থানগুলিতে পৌঁছেছিল। এখানকার বাসিন্দারা পুঁতি তৈরি ও ধাতুবিদ্যার জন্য যে সকল কৌশল ও সরঞ্জাম তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল, তা ৪০০০ বছরেরও বেশি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। []

লোথাল আহমেদাবাদ জেলার ধোলকা তালুকার সারগওয়ালা গ্রামের কাছে অবস্থিত। এটি আহমেদাবাদ-ভাবনগর রেলপথের লোথাল-ভুরুখী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি আহমেদাবাদ (৮৫ কিলোমিটার / ৫৩ মাইল), ভাবনগর, রাজকোট এবং ধোলকা শহরগুলির সমস্ত আবহাওয়াতে ব্যবহারের উপযোগি সড়ক দ্বারা সংযুক্ত। স্থানটির নিকটতম শহর ধোলকা এবং বড়োদরা। ১৯৬১ সালে খনন পুনরায় শুরু করা হলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা নদীটির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ভাঁজগুলি খনন করে নদী দিয়ে ডক সংযোগকারী ইনলেট চ্যানেল এবং নুলা ("র্যাভিন" বা "গুলি") খুজে পায়। ফলাফল স্থানটি একটি ঢিবি, একটি শহর, একটি বাজার, এবং বন্দর দ্বারা গঠিত। খননকৃত অঞ্চলের পাশে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর, যেখানে ভারতে সিন্ধু-যুগের প্রাচীনতম কিছু বিশিষ্ট সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়।

লোথালকে ইউনেস্কোর কাছে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে মান্যতা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং তা ইউনেস্কো-র বিচারাধীন।

প্রত্নতত্ত্ব

সম্পাদনা
 
সিন্ধু সভ্যতার বিস্তৃতি এবং প্রধান স্থান

ভারত যখন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বিভাজিত হয়েছিল, তখন হরপ্পামহেঞ্জোদাড়ো সহ সিন্ধু সভ্যতার বেশিরভাগ প্রত্নক্ষেত্র পাকিস্তান অত্রভুক্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯৫০-এর দশকে অন্বেষণ ও খননকার্যের একটি নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে নতুন নতুন প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। কচ্ছ (উল্লেখযোগ্যভাবে ধোলাভিরা) ও সৌরাষ্ট্র উপদ্বীপে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৫০ টিরও বেশি প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে; ফলে হরপ্পা সভ্যতার সীমা কিম নদী পর্যন্ত ৫০০ কিলোমিটার প্রসারিত হয়, যেখানে ভগত্রব প্রত্নক্ষেত্রটি নর্মদাতাপ্তি নদীর উপত্যকায় অবস্থিত। লোথাল সিন্ধ প্রদেশের মহেঞ্জোদাড়ো প্রত্নক্ষেত্র থেকে ৬৭০ কিলোমিটার (৩১০ মেইল) দূরে অবস্থান করছে।[]

গুজরাতি ভাষায় লোথাল শব্দের অর্থ হল "মৃতের স্তুপ"। এটি অস্বাভাবিক নয়, কারণ সিন্ধি ভাষায় মহেঞ্জোদাড়ো শহরের নামটিও একই অর্থ প্রদান করে। লোথালের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির লোকেরা একটি প্রাচীন শহর ও মানব দেহাবশেষের উপস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের হিসাবে সম্প্রতি, নৌকা ঢিবি পর্যন্ত যাত্রা করতে পারে। ঢিবির মাধ্যমে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারুচ থেকে সারাগওয়ালায় কাঠ পাঠানো হয়েছিল। আধুনিক ভোলাদকে লোথাল ও সারাগওয়ালার সঙ্গে সংযুক্তকারী পলিতে মজে যাওয়া খাঁড়িটি একটি নদী বা খাঁড়ির প্রাচীন প্রবাহ খাতদের প্রতিনিধিত্ব করে।[]

ব্যবসা বাণিজ্য

সম্পাদনা

সিন্ধু সভ্যতার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই বন্দর শহরের অবদান অপরিসীম। লোথাল ও ধোলাভিরা থেকে শুরু করে মাক্রান উপকূলের সুটকাজেনন্দরের মতো প্রত্নক্ষেত্রগুলিকে সংযোগকারী একটি উপকূলীয় সমুদ্রপথ বিদ্যমান থাকতে পারে। সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গেও লোথালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

সিন্ধু সভ্যতা

  1. "Where does history begin?"। ১৯ অক্টোবর ২০১৭। 
  2. কুলকে, হারম্যান (২০০৪)। History of India। Routledge। পৃষ্ঠা ২৫। আইএসবিএন 9780415329200 
  3. Leshnik, Lawrence S. (১৯৬৮)। "The Harappan "Port" at Lothal: Another View"American Anthropologist70 (5): 911–922। 
  4. "Excavations – Important – Gujarat"। Archaeological Survey of India। ১১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১১ 
  5. W., Bradnock, Robert (২০০১)। Rajasthan & Gujarat handbook। Bath: Footprint। আইএসবিএন 190094992X 
  6. S. R. Rao, Lothal (published by the Director General, Archaeological Survey of India, 1985)

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • S. P. Gupta (ed.) "The Lost Sarasvati and the Indus Civilization" (1995, Kusumanjali Prakashon, Jodhpur