তুর্কি জাতির ইতিহাসে অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং নতুন ও উজ্জ্বল দিনের সূচনা হয় লুজান চুক্তির মাধ্যমে। মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে তুর্কি জাতি যে অনন্যসাধারণ একতা প্রদর্শন করে এবং মাতৃভূমির সম্মান, সততা ও আত্মসম্মান রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তারই প্রেক্ষাপটে লুজান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে মিত্রশক্তিবর্গ তুরস্কের জাতীয় চুক্তি ও স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়।

তুরস্কের সীমানা লুসান চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত

লুজান চুক্তির পটভূমি সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি বিজিত তুরস্কের উপর সেভার্সের চুক্তির শর্তাবলি চাপিয়ে দেয়। এ চুক্তি উসমানীয় রাষ্টকে বন্দী ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল। সেভার্স চুক্তি উসমানীয় সুলতান আব্দুল মজিদ ও প্রধানমন্ত্রী দামাদ ফরিদ পাশা স্বীকার করে নিলেও মুস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বাধীন জাতীয় উচ্চ পরিষদ এ সন্ধি স্বীকার করে নি; বরং জাতীয় চুক্তিতে বর্ণিত শর্তাবলি বাস্তবায়নে তৎপর হয়। ১৯২২ সালের মাঝামাঝি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে ব্রিটিশ প্রতিনিধি লর্ড ব্যালাফার মুস্তফা কামালকে গেরিলাপ্রধান ও পরাজিত বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে এটা তুর্কি জাতীয় পরিষদে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। মুস্তফা কামাল জাতীয় গৌরব ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ১৯২২ সালের ২৬ আগস্ট তিনি থ্রেস ও আনাতোলিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধ শুরু করেন এবং ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পশ্চিম আনাতোলিয়া হতে গ্রিকদের সম্পূর্ণ বহিষ্কার করেন।

পশ্চিম আনাতোলিয়া অধিকার করে তুর্কি বাহিনী একদিকে দার্দানেলিস প্রণালি এবং অন্যদিকে ইস্তাম্বুলের দিকে ধাবিত হলে মিত্রশক্তিবর্গের টনক নড়ে। ইংরেজ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ যেকোনো মূল্যে দার্দানেলিস প্রণালি ও ইস্তাম্বুল প্রতিরক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইস্তাম্বুল প্রণালিসমূহ ও থ্রেসের উপর তুর্কি অধিকারের বিষয় আলোচনার জন্য মিত্রশক্তিবর্গ মুস্তফা কামালের শরণাপন্ন হয়। ফলে মুদানিয়া কনফারেন্সে উক্ত সমস্যাবলি আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মুদানিয়া কনফারেন্সে তুরস্কের পশ্চিম ফ্রন্টের কমান্ডার উসমত পাশা, ইংল্যান্ডের জেনারেল হারিংটন, ফ্রান্সের জেনারেল চাপী, ইতালির জেনারেল মনবেলি এবং গ্রিসের জেনারেল মাজারাকিস অংশগ্রহণ করেন।

লুজান শান্তি চুক্তি সম্পাদন সম্পাদনা

মুদানিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর মিত্রশক্তিবর্গ শান্তি চুক্তির জন্য সুইজারল্যান্ডের লুজান নামক স্থানে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়। [১][২] ১৯২২ সালের ২০ নভেম্বর এ সম্মেলন শুরু হয়। তুরস্ক ছাড়া ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, জাপান, রুমানিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, রাশিয়া, বুলগেরিয়া এতে অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধি এ কনফারেন্সে তিনটি প্রধান সমস্যা সমাধানে ব্রতী হয়। প্রথমত, তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে চুক্তির নীতিমালা প্রণয়ন। দ্বিতীয়ত, ওসমানীয় সাম্রাজ্যের বিলীন স্বীকারপূর্বক নতুন তুর্কি রাষ্ট্র ও উহার দাবি স্বীকার এবং তৃতীয়ত, ওসমানীয় সাম্রাজ্য কর্তৃক তুর্কিদের নামে বিদেশিদের প্রদত্ত সুবিধাসমূহ বাতিল করা। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই লুজান চুক্তির নীতিমালাসমূহ গ্রহণ করা হয়। [৩]

মিত্রশক্তিবর্গ লুজান শান্তি চুক্তিতে এ মর্মে অঙ্গীকার করে যে, তারা তুরস্কের সংহতি রক্ষা করবে। অর্থাৎ তুরস্কের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বজায় রাখা হবে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Palais de Rumine"www.lonelyplanet.com (ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  2. "Palais de Rumine & Musée cantonal des Beaux-Arts"MySwitzerland.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  3. Xypolia, Ilia (২০২১)। "Imperial Bending of Rules: The British Empire, the Treaty of Lausanne, and Cypriot Immigration to Turkey"Diplomacy & Statecraft32 (4): 674–691। এসটুসিআইডি 246234931 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1080/09592296.2021.1996711