লুবাবা বিনতে আল হারিস

লুবাবা বিনতে আল হারিস (মৃত্যু ৬৫০ খ্রি) যিনি উম্মে ফাদল নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। ইনি মুহাম্মাদ “ﷺ” এর একাধিক সম্পর্কে আত্মীয়া ছিলেন। তার দুই বোন [[মায়মুনা বিনতে আল-হারিস ◌ؓ” |মায়মুনা]] ও [[জয়নব বিনতে খুযায়মা ◌ؓ” |জয়নব]]কে মুহাম্মাদ ﷺ বিবাহ করেছিলেন। অপরদিকে তার চাচা আব্বাস উম্মে ফাদলকে বিয়ে করেছিলেন। সেই ক্ষেত্রে উম্মে ফাদল ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ এর চাচি। লুবাবা বিনতে আল হারিসের অনেকগুলো সহোদর, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় ভাই-বোন ছিলেন এই জন্য তিনি ইতিহাসে খ্যাত হয়ে রয়েছেন।

নাম ও বংশ পরিচয় সম্পাদনা

উম্মে ফাদল লুবাবা আল কুবরা বা উম্মে ফাদল বিনতে আল হারিস নামেও পরিচিত এই সাহাবা আরবের রীতি অনুযায়ী তার বড় ছেলে ফাদল ইবনে আব্বাসের নামে উপনাম ধারণ করে উম্মে ফাদল নামে পরিচিতি লাভ করেন। তার পিতার নাম আল হারিস ইবনে হুযন আল হিলালী এবং মাতার নাম হিন্দ বিনতে আওফ আল কিনানিয়া[১][২]

তার অনেক ভাই বোন সবাই ইতিহাসে বিখ্যাত রয়েছে। যেমনঃ বোন সালমা বিনতে উমাইস ছিলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব স্ত্রী, এবং আরেক বোন আসমা বিনতে উমাইস ছিলেন হযরত জাফর ইবন আবি তালিবের স্ত্রী।[৩][৪] আরো দুই বোন মুহাম্মাদ “ﷺ” এর স্ত্রী।

তার বৈমাত্রেয় বোনসমূহঃ

তার বৈপাত্রেয় ভাই-বোনঃ

সন্তানাদি সম্পাদনা

উম্মে ফাদল মুহাম্মাদ “ﷺ” এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব এর স্ত্রী ছিলেন। আব্বাস ও লুবাবা ছেলে-মেয়ে :

ইমাম জাহাবী বলেছেন : উম্মে ফাদল বিনতে আল হারিস আব্বাসের ছয়জন মহান পুত্রের জননী’।[৬][৮]

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত সম্পাদনা

উম্মে ফাদল ইসলামের প্রাথমিক দাওয়াতেই মুসলমান হন।[৩][৯] তিনি মক্কার প্রথম মহিলা যিনি হযরত খাদিজার পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।[১] তবে আল ইসাবা গ্রন্থে একথাও বলা হয়েছে, তিনি হিজরাতের পূর্বে মুসলমান হন।[১০] ইমাম জাহাবীও তাকে প্রথম পর্বের মুসলমান বলেছেন।[১০]

মক্কার ইসলামের সূচনা লগ্নেই মুসলমান হলেও স্বামী আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের মদিনায় হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও মক্কায় অবস্থান করেন। আব্বাস অনেক দেরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন,সুতরাং তারা একেবারে শেষের দিকে সন্তানাদি সহ মদিনায় হিজরাত করেন।[১০]

জীবন বৃত্তান্ত সম্পাদনা

লুবাবা মুহাম্মাদ “ﷺ”এর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি খাদিজা এর নিকটতম বান্ধবীও ছিলেন। চাচী হিসাবে মুহাম্মাদ তার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতেন।[১১][১২] তিনি মুহাম্মাদ “ﷺ” এর সঙ্গে বিদায় হজ্বে অংশগ্রহণ করেন।[১৩] এমনকি তিনি ফাতিমার পুত্র হুসাইনের দুধমাতা ছিলেন।[১৪]

হাদিস বর্ণনা সম্পাদনা

লুবাবা বিনতে আল হারিস মুহাম্মাদ “ﷺ” থেকে ৩০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে ১টি হাদিস মুত্তাফিকুন ইলাইহি (বুখারী ও মুসলিম শরীফ উভয়ই বর্ণনা করেছেন) ও ৩টি হাদিস মুসলিম শরীফ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।[১৫][১৬][১৭] বিদায় হজ্জের সময় তিনিও রাসূলুল্লাহর সাথে হজ্জ করেন। আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ রোজা রেখেছেন কিনা এই নিয়ে সাহাবীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন। তারা কেউ আগ বাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারছেন না। তাদের সঙ্কোচবোধ হচ্ছে। উম্মুল ফাদল ◌ؓ” সাহাবীদের দ্বিধার কথা শুনে একটি বুদ্ধি বের করেন। তিনি এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করলেন, যার ফলে সরাসরি প্রশ্ন করা হয় না তবে উত্তর জানা যায়। বুদ্ধিমতী উম্মুল ফাদল ◌ؓ”এক পেয়ালা দুধ নিয়ে যান রাসূলুল্লাহ ﷺ কাছে। দুধের পেয়ালা রাসূলের হাতে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সেই পেয়ালা থেকে দুধ পান করলেন। [সহীহ মুসলিম: ২৫২৫] তাঁর এই বুদ্ধিমত্তার ফলে সাহাবীরা বুঝে নিলেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ রোজা রাখেননি। লুবাবা ◌ؓ”থেকে যারা হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন :

চারিত্রিক গুণাবলী সম্পাদনা

লুবাবা একজন উঁচু স্তরের ইবাদত-বন্দেগীকারী এবং দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ মহিলা ছিলেন। প্রতি সোম ও বুধবার রোযা রাখা তাঁর অভ্যাস ছিল।[১৯][২০]

মৃত্যু সম্পাদনা

তৃতীয় খলীফা উসমানের খিলাফতকালে ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইনতিকাল করেন। তখন তার স্বামী হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব জীবিত ছিলেন। খলিফা উসমান জানাযার নামায পড়ান।[১০][২১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. [তাবাকাত-৮/২৭৭] 
  2. [আল-ইসী‘আব-৪/৩৯৮] 
  3. [তাবাকাত-৮/২৭৮] 
  4. [আল-ইসী‘আব-৪/৩৯৯] 
  5. [উসুদুল গাবা-৫/৫৩৯] 
  6. [আনসাব আল-আশরাফ-১/৪৪৭] 
  7. ’[তাবাকাত-৮/২৭৭] 
  8. [সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা-২/৩১৪] 
  9. [হায়াহতুস সাহাবা-৩৪/৫৩০] 
  10. [সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা-২/৩১৫] 
  11. [উসুদল গাবা-৫/৫৩৯] 
  12. [তাবাকাত/৮/২৭৭] 
  13. [তাবাকাত/৮/২৭৯] 
  14. [প্রাগুক্ত] 
  15. [সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা-২/৩১৫; দ্র.] 
  16. [বুখারী-২/২০৪, ৪/২০৬] 
  17. [মুসলিম, হাদীস নং৪৬২, ১১২৩, ১৪৫১] 
  18. [উসুদুল গাবা-৫/৫৪০] 
  19. [তাবাকাত -৮/২৭৮] 
  20. [সিয়ারু সাহাবিয়াত-১১৭] 
  21. [সিয়ারুস সাহাবিয়াত-১১৭]