লুক্রেতিউস

(লুক্রেতিওস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

টাইটাস লুক্রেশিয়াস ক্যারাস (লাতিন ভাষায়: Titus Lucretius Carus, গ্রিক ভাষায়: Λουκρήτιος) (৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) বিখ্যাত রোমান কবি ও দার্শনিক। তার একটি রচনাই বর্তমানে অক্ষত আছে। এপিকুরোসবাদের (বিশেষ করে এপিকুরোসীয় পদার্থবিজ্ঞান) উপর ভিত্তি করে রচিত এই কাব্যগ্রন্থের নাম De Rerum Natura।ইংরেজিতে বইটির নাম "On the Nature of Things" বা "On the Nature of the Universe"।

তিতুস লুক্রেতিউস কারুস
জন্মc. ৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
মৃত্যুc. ৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (বয়স ৪৪)
যুগহেলেনিস্টিক দর্শন
অঞ্চলপাশ্চাত্য দর্শন
ধারাএপিকিউরিয়ানিজম
প্রধান আগ্রহ
নীতিশাস্ত্র, অধিবিদ্যা
ভাবগুরু
ভাবশিষ্য

ক্যালটেকের বিশ্বতত্ত্ববিদ শন ক্যারল সম্প্রতি তার এক ব্লগে লুক্রেশিয়াসকে বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্ববিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি লুক্রেতিউসের রচনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, লুক্রেশিয়াস পরমাণুবাদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন-এর মত কিছু একটার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে হিসেবে পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। পরমাণুর বিচলন নিয়ে এপিকুরোসের মতবাদকে লুক্রেশিয়াস সমর্থন করেছেন। এই বিচলনের বিষয়টিই লুটভিগ বোল্‌ৎসমান অনেক পরে আবিষ্কার করেন। তবে এপিকুরোসবাদী দার্শনিক বা বোল্‌ৎসমান কারও তত্ত্বই বর্তমানে আর আক্ষরিক অর্থে গ্রহণযোগ্য নয়।[১]

জীবনী সম্পাদনা

 
De rerum natura, 1570

লুক্রেশিয়াসের লেখা কবিতাই বলা চলে তার জীবন সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায়। অন্য কোন উৎস থেকেই তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।

দে রেরুম নাতুরা-র বাইরে তার জীবন সম্পর্কে সম্পর্কে জানার একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস হচ্ছে সিসেরোর লেখা একটি চিঠি। চিঠিটি লুক্রেতিউসের জীবদ্দশায় লেখা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, কারণ তার মৃত্যুর তারিখও অনিশ্চিত। ৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই চিঠিতে সিসেরো তার ভাইয়ের সাথে একমত হয়ে লিখেছেন, লুক্রেশিয়াসের কবিতায় "মেধার দীপ্তি" এবং "পেশাদারীত্বের" প্রমাণ পাওয়া যায়। চিঠিটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন রোমের অভিজাত পরিবার মেম্মিউস-এর কোন একজন সদস্যের প্রতি। তবে ঠিক কোন সদস্যকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে তা নিশ্চিত জানা যায় না। লুক্রেতিওস মেম্মিউস পরিবারের বন্ধুত্বের প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু এই বন্ধুত্ব কি কোন লেনদেনের কারণে নাকি কোন প্রকৃত সামাজিক সম্পর্ক সেটা বোঝার কোন উপায় নেই।

অন্য সব উৎস অনেক দেরিতে লেখা হয়েছে এবং সেগুলোর নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এসব উৎসে অনেকে বলেছেন তার জন্ম ৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং মৃত্যু ৫৪ বা ৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। বর্তমানে অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলা যায় লুক্রেশিয়াস ১ম খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে তার মহাকাব্যটি লিখেছিলেন।

প্রাচীন কালের খ্রিস্ট ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ তাকে ঈশ্বর এবং ধর্মের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল বলেই সেকালের অনেক লেখায় তার জীবনকে বিকৃত এবং বিধ্বস্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেমন, ৪র্থ শতাব্দীর ইলিরিয়ান (রোমান সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি স্থান) সাধু জেরোম (St. Jerome) লিখেছেন, লুক্রেশিয়াস নাকি অদম্য ভালবাসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল, পাগলামির মাঝে মাঝে যেটুকু সময় ধাতস্থ থাকত তখন কবিতা লিখত এবং পরিশেষে আত্মহত্যা করেছিল, যার ফলে মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো সম্পাদনা করতে হয়েছিল সিসেরোকে। শেষ লাইনের কিছুটা সত্যতা থাকলেও এর আগে যা বলেছেন তার পুরোটাই বানোয়াট। এগুলো যে বানানো কথা তার আরও প্রমাণ মেলে লুক্রেশিয়াসের অনুরাগী মহাকবি ভের্গিল (ভার্জিল) এর লেখনীতে।

ভের্গিল লুক্রেশিয়াসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই Georgics লিখেছিলেন। চার খণ্ডের এই কাব্যগ্রন্থে লুক্রেশিয়াস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, "felix qui potuit rerum cognoscere causas" যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, সে কতই না সুখী যে সবকিছুর কারণ জানে। এরপর বইটিতে আরও বলা হয়েছে, যে সকল ভয়, অপরিবর্তনীয় ভাগ্য এবং সর্বগ্রাসী নরকের চিৎকারকে পায়ে দলেছিল। এই প্রশংসামূলক বাক্যগুলোর মাধ্যমে ভের্গিল লুক্রেশিয়াসের কবিতার চারটি প্রভাবশালী বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার করে তুলেছিল:

  1. মহাবিশ্বের সবকিছুর কারণ অনুসন্ধান
  2. পৃথিবীর সকল ভয়-ভীতির মূলোৎপাটন (সবকিছুর কারণ জানার কারণে)
  3. মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ঘোষণা এবং
  4. মৃত্যুর পরে আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা

পাশাপাশি ভের্গিলের এই কথাগুলোর মাধ্যমে এটাও বোঝা যায় যে, লুক্রেশিয়াস খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের মাঝে আত্মহননেচ্ছু পাগল হিসেবে যে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল তা সত্য নয়।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. The First Quantum Cosmologist ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে - কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগ, শন ক্যারল
  2. Lucretius - Stanford Encyclopedia of Philosophy; by David Sedley, University of Cambridge

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা