লাল ঘুঘু

পাখি প্রজাতি

লাল ঘুঘু (বৈজ্ঞানিক নাম: Streptopelia tranquebarica) ([[[:en:Red Turtle Dove|Red Turtle Dove]] বা Red Collared Dove] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য)), লাল রাজঘুঘু বা জংলা ঘুঘু কলুম্বিডি (Columbidae) গোত্রের বা পরিবারের অন্তর্গত একটি প্রজাতি।[১] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস। সংখ্যার বিশালতার কারণে এদের মোট জনসংখ্যা নির্ণয় করা যায়নি। গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি, যদিও কোন কোন দেশে এদের অবস্থা খুব খারাপ। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. লাল ঘুঘুকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।[২]

লাল ঘুঘু
Streptopelia tranquebarica
পুরুষ লাল ঘুঘু
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Columbiformes
পরিবার: কলাম্বিডি
গণ: Streptopelia
প্রজাতি: S. tranquebarica
দ্বিপদী নাম
Streptopelia tranquebarica
(Hermann, 1804)

বিস্তৃতি সম্পাদনা

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, চীন, তাইওয়ানজাপান লাল ঘুঘুর স্থায়ী আবাসস্থল। এদের অনেকসময় অনিয়মিত পরিযায়ী হিসেবে আশেপাশের দেশ আফগানিস্তান, ইরান, ওমান, কোরিয়ারাশিয়ায় দেখা যায়। লাল ঘুঘু সিঙ্গাপুরে অবমুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও পাখিটি দেখা গেছে, তবে এর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি।[৩] একসময় বিশ্বব্যাপী প্রচুর সংখ্যায় থাকলেও শিকারীদের কবলে পড়ে ও ঝোপ-জঙ্গল কমে যাওয়ায় বর্তমানে এদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনানুসারে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।[৪]

বিবরণ সম্পাদনা

পুরুষ পাখির মাথা নীলচে-ধূসর। পিঠ ও ডানার পালক গোলাপী-মেরুন বা ইট রঙের লালচে। ডানার পেছনের অংশ কালচে। লেজের পালক ধূসর । লেজের নিচটা সাদা। বুক ও পেট হালকা গোলাপী। স্ত্রী পাখির রঙ পুরোপুরি আলাদা। দেহের ওপরের অংশ গাঢ় হলদে-বাদামী ও নিচের অংশ হালকা হলদে-ধূসর। স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির চেয়ে কিছুটা ছোট। উভয়েরই গলার পেছনে একটি কালো বন্ধনী আছে। বন্ধনীর উপরে-নিচে চিকন সাদা বন্ধনী থাকে।[১] উভয়ের চোখ বাদামি, ঠোঁট কালো, পা বেগুনি-লাল বা বেগুনি-কালো। ওড়ার পালকও কালো। এ গণের সবচেয়ে ছোট প্রজাতি আর সবচেয়ে বেশি নাদুস-নুদুস। লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে লেজই নয় সেন্টিমিটার।[৫]

আচরণ সম্পাদনা

ঝোপ-জঙ্গল, খোলা মাঠ, গ্রাম বা আশপাশে বড় বড় গাছ আছে এমন কৃষিজমিতে এদের দেখা মেলে। সাধারণত জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। কৃষিজমি, খামার, ঘাসপূর্ণ মাঠ, ঝোপ, বনের প্রান্ত বা গ্রামে হেঁটে হেঁটে খাবার সংগ্রহ করে এরা। ঘাস ও আগাছার বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি ও কচি পাতা খায়। ভোরবেলা ও গোধূলিতে বেশি তৎপর থাকে। তবে প্রয়োজনে দুপুরেও খাবার সংগ্রহ করে।[৫] এরা ক্রুরু-ক্রুরু-ক্রুরু বা ‘গুউ-গুউ-গুউ’ স্বরে ডাকে।[১]

 
খাবার খুঁজছে লাল ঘুঘু

প্রজনন সম্পাদনা

লাল ঘুঘু সারা বছর প্রজনন করতে পারে। সাধারণত গাছের পাতাওয়ালা শাখায় ঘাস ও কাঠিকুঠি দিয়ে বাসা বানায় এবং তাতে স্ত্রী পাখিটি দুটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় মাত্র ১২ দিনে। বাসা বানানো থেকে শুরু করে ডিমে তা দেওয়া ও বাচ্চাদের খাওয়ানো সবকিছুই স্ত্রী-পুরুষ একত্রে মিলেমিশে করে।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশের পাখি, রেজা খান, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (২০০৮), পৃ. ১৫১।
  2. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ জুন ২০১১ তারিখে, BirdLife International, লাল ঘুঘু বিষয়ক নিবন্ধ।
  3. [২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], Anthracoceros albirostris, IUCN এর লাল তালিকায় লাল ঘুঘু বিষয়ক নিবন্ধ।
  4. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০ ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা- ১১৮৪৫৯
  5. [৩] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে, বিপন্ন লাল ঘুঘু, আ ন ম আমিনুর রহমান, তারিখ: ০৮-০৯-২০১১, দৈনিক প্রথম আলো, তথ্য সংগ্রহঃ ১০-০৫-১২।

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা