রেজর স্মিথ

ইংরেজ ক্রিকেটার

উইলিয়াম চার্লস রেজর স্মিথ (ইংরেজি: Razor Smith; জন্ম: ৪ অক্টোবর, ১৮৭৭ - মৃত্যু: ১৫ জুলাই, ১৯৪৬) অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ধীরগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে খেলতেন। ‘রেজর’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন রেজর স্মিথ

রেজর স্মিথ
আনুমানিক ১৯০৫ সালে রেজর স্মিথ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৮৭৭-১০-০৪)৪ অক্টোবর ১৮৭৭
অক্সফোর্ড, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৫ জুলাই ১৯৪৬(1946-07-15) (বয়স ৬৮)
বার্মন্ডসে, লন্ডন, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ-ব্রেক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৪৫
রানের সংখ্যা ৩,৪৫৩
ব্যাটিং গড় ১২.৬৯
১০০/৫০ ১/৪
সর্বোচ্চ রান ১২৬
বল করেছে ৪৫,২৯৬
উইকেট ১,০৭৭
বোলিং গড় ১৭.৫৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ৯৫
ম্যাচে ১০ উইকেট ২৭
সেরা বোলিং ৯/৩১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৫৮/০
উৎস: ক্রিকইনফো, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

কাউন্টি ক্রিকেট সম্পাদনা

১৮৯০-এর দশকের শেষার্ধ্বে বিখ্যাত ক্রিকেটার ডব্লিউ. জি. গ্রেসের সুনজরে পড়েন রেজর স্মিথ। খুব দ্রুত তাকে সারে দলে খেলার জন্য সুপারিশ করেন ও সেখানে তিনি পূর্বেই নিবাস গড়েছিলেন। ১৯০০ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে অভিষেক ঘটে তার ও প্রথম খেলাতেই ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৫/৫০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।

তবে, ১৯০৪ সাল পর্যন্ত খুব কমই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, শুষ্ক আবহাওয়ায় তিনি তেমন কিছুই করতে পারেননি।[১] শেষ দুই খেলায় অংশগ্রহণের পূর্বে দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। তাসত্ত্বেও, প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর বোলিং গড়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেছিলেন। ১৯০৫ সালে প্রথমবারের মতো দর্শকদের দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ হয়। ওভালে সফররত অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে শুষ্ক পিচেও তিনি চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সক্ষমতা দেখান।[২] তার চমৎকার অফ-ব্রেক বোলিং মোকাবেলা করা বেশ দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। পোতানো পিচে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ৭/১১ লাভ বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৯০৬ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে রেজর স্মিথকে সারে দলে আসা-যাওয়ার পালায় পড়তে হয়। তাসত্ত্বেও, ১৯০৮ সালে মাত্র ১৪ গড়ে ৫৮ উইকেট নিয়ে বোলিং গড়ে শীর্ষে অবস্থান করেন। ১৯০৯ সালে রেজর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বোলারের মর্যাদা লাভ করেন। এ পর্যায়ে তিনি বেশ কয়েকটি খেলায় আঘাতের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। তাসত্ত্বেও, ভেজা গ্রীষ্মে উইকেট প্রতি ১৩ রানের কম খরচায় ৯৫ উইকেট পান। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ২৬ উইকেট লাভ বেশ দূর্দান্ত ছিল।[৩]

স্বর্ণালী শিখরে আরোহণ সম্পাদনা

১৯১০ সালে রেজর স্মিথ খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছেন। ঐ মৌসুমে তিনি ২৪৭ উইকেট পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় তিনি ৭২ উইকেট ব্যবধানে এগিয়ে থাকেন। তবে, ১৯০৯ সালের তুলনায় তাকে কিছু বেশি রান প্রদান করতে হয়েছিল। নমনীয় পিচে স্মিথকে খেলা দুঃষ্কর ছিল। এ সফলতায় নতুন ধরনে ডেলিভারী প্রয়োগ করেন। দ্রুতগতিসম্পন্ন লেগ ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি তীক্ষ্ণ ধাঁচের স্পিন যুক্ত করেছিলেন তিনি। তার অনেকগুলো উইকেটই শর্ট লেগের ন্যায় কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানকারী সাহসী ফিল্ডার বিল হিচের বেশ অবদান ছিল। নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ওভালের খেলায় রেজর স্মিথ ২৯ রান খরচ করে ১৪ উইকেট পান। দ্বিতীয় ইনিংসে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি। প্রথমটিতে ড্রপ ক্যাচ হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯১১ সালে শুষ্ক গ্রীষ্মের প্রখরতায় অধিকাংশ পিচই সম্পূর্ণরূপে বোলারদের প্রতিকূলে অবস্থান করে। এ পরিবেশের মাঝেও স্বল্পসংখ্যক সুযোগকে ভালোভাবে কাজে লাগান ও ১৬০ উইকেট নিয়ে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হয়েছিলেন।[৪] ১৯১২ সালে বর্ষণমূখর গ্রীষ্মে রেজর স্মিথের বোলিং বেশ উপযোগী ছিল। শেষ তিন খেলার পূর্ব-পর্যন্ত দূর্বল বোলিংয়ের কবলে পড়েন তিনি।[৫] ২১.৪৩ গড়ে ৬৯ উইকেট লাভ করেন তিনি। তবে শেষ তিন খেলায় মারাত্মক বোলিং করে নিজের রেকর্ডকে কিছুটা উত্তরণ ঘটান।

খেলার ধরন সম্পাদনা

অত্যন্ত শুকনো দেহের অধিকারী ছিলেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ হবার প্রেক্ষিতে খুব কম সময়ই পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে পারতেন। তবে, সুস্থ হয়ে উঠার পর তিনি তার তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার অফ-ব্রেক বোলিংয়ে নিজের দিনে সকলের উপর ছড়ি ঘোরাতেন। কখনোবা অত্যন্ত উঁচুমাত্রায় দ্রুতলয়ে বলে ফ্লাইট করতেন। এরফলে লেগের দিক থেকে স্বল্পমাত্রায় বল বাঁক খেতো। পিচের সহায়তা ছাড়াই প্রায় সোজা উইকেটে আঘাত হানতো।[২] এ দুয়ের সম্মিলনে পিচের সহযোগিতায় রেজর স্মিথকে মোকাবেলা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়তো। তবে, পরিবেশ প্রতিকূল হলে তিনি খুব কমই সফলতা পেতেন ও ক্ষীণ শারীরিক গড়নের কারণে অনেক সময়ই সংরক্ষিত বোলার হিসেবে মাঠে অবস্থান করতেন। পাশাপাশি তাকে কখনো টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। তাসত্ত্বেও সেরা ব্যাটিংকারী দলের বিপক্ষে অনেকবারই সেরা ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন।

অবসর সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রেজর স্মিথের শারীরিক গড়ন ক্রিকেট খেলার উপযোগী ছিল না। জীবনের বাদ-বাকী সময় ক্রিকেট ব্যাট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সারিজে কাজ করে যান। ১৯৪৬ সালে হৃদযন্ত্র ক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের পূর্ব-পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন।[৬] ১৫ জুলাই, ১৯৪৬ তারিখে ৬৮ বছর বয়সে লন্ডনের বার্মন্ডসে এলাকায় রেজর স্মিথের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Pardon, Sydney H. ed. (1905) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Second Edition; p. 176
  2. Pardon, Sydney H. ed. (1911) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Eighth Edition; Part I, pp. 169–170
  3. Surrey v Yorkshire in 1909[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]. cricketarchive.co.uk
  4. Pardon, Sydney H. ed. (1912) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Ninth Edition; Part II, p. 81
  5. Pardon, Sydney H. ed. (1913) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Fiftieth Edition; Part II, p. 202
  6. Preston, Hubert ed. (1947) Wisden Cricketers’ Almanack, 84th Edition, p. 695

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা