রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ
রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ (ইংরেজি: Transformational-generative grammar) বলতে স্বাভাবিক ভাষার জন্য চম্স্কীয় ধারায় প্রবর্তিত ব্যাকরণকে বোঝায়। এই ধারণার ভিত্তি তৈরী হয়েছিল নোম চমস্কির রচিত সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচারস গ্রন্থে।
সুগভীর ও উপরি অবয়ব
সম্পাদনাএকটি জেনেরটিভ গ্রামার বা উৎপাদনশীল ব্যাকরণের পরিকাঠামোর বর্ণনা নোম চমস্কির অ্যাসপেক্টস অফ দি থিওরি অফ সিন্ট্যাক্স গ্রন্থে পাওয়া যায়। সেখানে এই ব্যাকরণের বিশ্লেষনের জন্য তিনি দুটি ধারণার অবতারনা করেছেন, যথা, ডিপ স্ট্রাকচার বা সুগভীর অবয়ব এবং সারফেস স্ট্রাকচার বা উপরি অবয়ব।
চমস্কির মতে কোন একটি ভাষা সম্বন্ধীয় জ্ঞান সেই ভাষায় উদ্ভূত বা ব্যবহৃত অগুনতি সংখ্যক বাক্যাবলীকে বোঝবার ক্ষমতা দেয় বা দেওয়া উচিত। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য জেনেরটিভ গ্রামারকে এমন একটি নিয়মাবলী যুক্ত ব্যবস্থা হতে হবে যা বারংবার প্রয়োগের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক স্ট্রাকচার বা অবয়ব সৃষ্টি করবে। এইসমস্ত নিয়মাবলীকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা যায়, যথা, ১) সিন্ট্যাকটিক বা বাক্যগঠনজনিত, ২)ফোনোলজিক্যাল বা ধ্বনিসম্পর্কিত ও ৩) সিমান্টিক বা শব্দার্থজনিত অংশ।[১]
সিন্ট্যাকটিক বা বাক্যগঠনজনিত উপাংশতে এক গুচ্ছ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ফর্মাল বা সাধারণীকৃত নিয়মনির্দিষ্ট বস্তুর নির্দেশ দেওয়া থাকে। কোন একটি নির্দিষ্ট বাক্যের একটিমাত্র অর্থবোধক ব্যাখ্যা দেওয়ার উপযোগী সমস্ত তথ্যই ওই সাধারণীকৃত নিয়মনির্দিষ্ট বস্তুগুলির প্রত্যেকটির মধ্যে বর্তমান থাকবে। চমস্কি বাক্য বলতে একসারি ফর্ম্যাটিভ বা বাক্যগঠনমূলক বর্ণসমষ্টিকে ইঙ্গিত করেছেন, একসারি ধ্বনি বা ফোনকে নয়।
ফোনোলজিক্যাল উপাংশটি পূর্ববর্তী সিন্ট্যাকটিক উপাংশ দ্বারা উৎপাদিত বাক্যের ধ্বনিগত বা ফোনেটিক রূপটি নির্ধারণ করে। অপরদিকে সিমান্টিক উপাংশটি পূর্ববর্তী সিন্ট্যাকটিক উপাংশ দ্বারা উৎপাদিত বাক্যের অর্থবোধক রূপ নির্ধারণ করে। অর্থাৎ ফোনোলজিক্যাল উপাংশটি সিন্ট্যাকটিক উপাংশকৃত অবয়বগুলিকে ধ্বনিসম্পর্কিত সংকেতের সঙ্গে যুক্ত করে আর সিমান্টিক উপাংশটি সিন্ট্যাকটিক উপাংশকৃত অবয়বগুলিকে কোন একটি নির্দিষ্ট শব্দার্থপূর্ণ বর্ণনার সঙ্গে যুক্ত করে। দুটি উপাংশই সিন্ট্যাকটিক উপাংশ থেকে পাওয়া ফর্মাটিভ সম্পর্কিত তথ্যের উপর কাজ করে।
সুতরাং, কোন ব্যাকরণে, প্রত্যেক বাক্যের জন্য সিন্ট্যাকটিক উপাংশ দ্বারা দুটি অবয়ব উৎপাদন করতে হবে। একটি অবয়ব হবে ডিপ স্ট্রাকচার বা সুগভীর অবয়ব এবং অপরটি হবে সারফেস স্ট্রাকচার বা উপরি অবয়ব। সুগভীর অবয়বটি বাক্যের শব্দার্থ বা সিম্যান্টিক রূপ নির্ধারণ করবে এবং উপরি অবয়বটি বাক্যের ফোনেটিক বা ধ্বনিগত রূপ নির্দিষ্ট করবে।
সিন্ট্যাকটিক উপাংশের একটি অঙ্গ হল বেস বা ভিত্তি। বেস হল কিছু নিয়ম নিয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা যে নিয়মগুলি কিছু অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক বেসিক স্ট্রীং বা মূলগত সারি উৎপাদন করে। প্রত্যেকটি বেসিক স্ট্রীং বা মূলগত সারির সঙ্গেই একটি গঠনমূলক বর্ণনা দেওয়া থাকে যাকে বেস ফ্রেজ মেকার বা মূল পদন্যাসকর্তা বলে। এই বেস ফ্রেজ মেকারগুলিই হল ডীপ স্ট্রাকচার বা সুগভীর অবয়বের মূল উপাদান। একটি ভাষার প্রত্যেকটি বাক্যের মধ্যেই বেস ফ্রেজ মেকার বা পদন্যাসকর্তাগুলি দিয়ে গঠিত একটি ক্রম বা সারি থাকবে, যে ক্রমটি তৈরী হবে ব্যাকরণের সিন্ট্যাকটিক উপাংশের বেস বা ভিত্তি থেকে। চমস্কি পদন্যাসকর্তা সমন্বিত এই ক্রমসারিকে ওটির সঙ্গে সম্পর্কিত বাক্যের বেসিস বা ভিত্তিভূমি বলেছেন।[২]
সিন্ট্যাকটিক উপাংশের অপর ও বিশেষ অঙ্গটি হল ট্রান্সফর্মেশনাল বা রূপান্তরমূলক অংশ, যা বাক্যের বেসিস বা ভিত্তিভূমি থেকে বাক্যটিকে তার সারফেস স্ট্রাকচার বা উপরি অবয়ব সহ উৎপাদন করবে, যার উপর ফোনোলজিক্যাল উপাংশটি সুচারুভাবে কাজ করতে পারবে।
পাণিনি
সম্পাদনাচমস্কির মতে জেনেরটিভ গ্রামারের ধারণা খুব একটা নতুন ধারণা নয়। পাণিনির ব্যাকরণকে একদিক দিয়ে একধরনের উৎপাদনশীল ব্যাকরণ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।[৩]