রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার রামপালে অবস্থিত একটি প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।[১] রামপালে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB), ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে।[২] বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মিত হবে সুন্দরবনের থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীর ঘেঁষে এই প্রকল্পে ১৮৩৪ একর জমির সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১০ সালে জমি অধিগ্রহণ করে বালু ভরাটের মাধ্যমে নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে।[৩]
রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র | |
---|---|
অফিসিয়াল নাম | রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র |
দেশ | বাংলাদেশ |
অবস্থান | সাপমারী, রামপাল উপজেলা, বাগেরহাট জেলা |
স্থানাঙ্ক | ২২°৩৫′৪৪″ উত্তর ৮৯°৩৩′১৫″ পূর্ব / ২২.৫৯৫৫৫৬° উত্তর ৮৯.৫৫৪০২৭৭৮° পূর্ব |
মালিক |
|
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র | |
প্রধান জ্বালানি | কয়লা |
বিদ্যুৎ উৎপাদন | |
নামফলক ধারণক্ষমতা | ১৩২০মেগাওয়াট |
চুক্তি
সম্পাদনা২০১০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বি.পি.ডি.বি.) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন (এনটিপিসি) এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে সংস্থা দুটি ২০১৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়।[৪] ২৯ শে জানুয়ারী ২০১২ সালে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এনটিপিসি'র সাথে একটি বিদ্যুৎ কেন্দর নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে।[৫] যৌথ উদ্যোগে তৈরি সংস্থা বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব শক্তি সংস্থা (বিআইএফপিসি) নামে পরিচিত।[৬] বিটিআরসি এবং এনটিপিসি ৫০:৫০ অংশিদারীত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পের বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। এনটিপিসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করবে।[৭] বাংলাদেশ ও ভারত সমানভাবে এই প্রকল্পের মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার করবে। বাকি মূলধন, যা ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য হতে পারে, তা এনটিপিসি থেকে সাহায্যের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র মতে, যৌথ উদ্যোগ কোম্পানীটি একটি ১৫ বছর কর ছাড়ের সুবিধা ভোগ করবে।[৮]
কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়লা পরিবহনের জন্য নৌপথ সচল রাখতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি হওয়া ড্রেজিং প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৯ কোটি টাকা। মোংলা বন্দর জেটি থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার নৌপথটিতে ভারতের ড্রেজিং করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান কাজ করবে বলে জানানো হয়।[৯]
পরিবেশগত সমস্যা
সম্পাদনাকয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এই প্রকল্প পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে।[২] ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়পত্রে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নকে সন্দেহজনক বলে অভিহিত করে, এবং প্রকল্পটিকে বন্ধ করার জন্য বলা হয়।[১০]
১ আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ অনুমোদন করে, কিন্তু তারপর বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর তার অবস্থান পরিবর্তিত করে এবং প্রকল্পটি নির্মানের জন্য ৫০ টি শর্ত জারি করে।[১১] কিন্তু সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান মৌলিক পূর্বনির্ধারিত একটিকে শর্ত লঙ্ঘন করে। সাধারনত এই ধরনের প্রকল্পগুলো পরিবেশগত সংবেদনশীল এলাকার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের বাইরে নির্মান করতে হয়।[২]
পরিবেশবাদী কর্মীরা দাবি করেন যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাবিত অবস্থান রামসার কনভেনশনের শর্ত তথা আইন লঙ্ঘন করবে। রামসর কনভেনশন, যা বাংলাদেশের একটি স্বাক্ষরকারী, জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তি। সুন্দরবন রামসারের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের জলাভূমিগুলির তালিকাতে রয়েছে।[১২][১৩]
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর ৪.৭২ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে হবে। এর জন্য ৮০,০০০ টন ক্ষমতার প্রায় ৫৯ টি বিশাল মালবাহী জাহাজের প্রয়োজন হবে এবং জাহজগুলিকে পশুর নদীর তীরে জাহাজ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। বন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নদী পথে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল করবে এবং এর মধ্যে নদীর প্রবাহ পথও রয়েছে। পরিবেশবিদরাদের মতে এই কয়লা বহনকারী যানবাহন প্রায়ই আবৃত হয়, যার ফলে ফ্লাই অ্যাশ, কয়লা ধুলো এবং সালফার, এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক বিশাল পরিমাণ ছড়িয়ে পড়ে প্রকল্প এলাকার আশেপাশে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Indo-Bangla joint company for power import"। The Independent। Dhaka। ৮ মার্চ ২০১১। ১০ মার্চ ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ Kumar, Chaitanya (২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Bangladesh Power Plant Struggle Calls for International Solidarity"। The Huffington Post।
- ↑ Rahman, Khalilur (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Demand for Rampal power plant relocation"। Financial Express। Dhaka। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Ahsan, Manjurul (১৪ মে ২০১১)। "Experts denounce Bagerhat coal-fired power plant plan"। New Age। Dhaka। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Final report on environmental impact assessment of 2x (500–660) MW coal based thermal power plant to be constructed at the location of Khulna – India Environment Portal – News, reports, documents, blogs, data, analysis on environment & development – India, South Asia"। indiaenvironmentportal.org.in।
- ↑ Ritu, Moshahida Sultana (১১ জুন ২০১৩)। "Who gains, who loses?"। The Daily Star।
- ↑ "Coal-fired energy BD signs power plant deal with Delhi"। pakobserver.net। ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ "Power Division seeks $302m for Rampal plant"। The Independent। Dhaka। ৮ আগস্ট ২০১৩। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পরিবহনে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৭ জুলাই ২০১৭। ৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Iftekhar Mahmud (২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬), "Unesco calls for shelving Rampal project", Prothom Alo, সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৬[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "DoE changes stance on Rampal power plant"। The Financial Express। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "The Roar of Disapproval"। Dhaka Courier। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৫ – HighBeam Research-এর মাধ্যমে। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))।
- ↑ Anisul Islam Noor (২৭ অক্টোবর ২০১৫)। "Rampal plant won't hamper environ"। The New Nation। ২৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৫।