রামনিধি গুপ্ত

বাংলায় টপ্পা গানের প্রবর্তক

রামনিধি গুপ্ত (১৭৪১—৬ এপ্রিল ১৮৩৪) সাধারণত নিধু বাবু নামে পরিচিত, বাংলা টপ্পা সঙ্গীতের একজন মহান সংস্কারক। তার পূর্ব পর্যন্ত টপ্পা এক ধরনের অরুচিকর গান হিসেবে বিবেচিত হতো । তার গানের ভক্তরা অধিকাংশই সেকালের ধনাঢ্য সম্ভ্রান্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে, ভগিনী নিবেদিতা তার লেখা গানের প্রভূত প্রশংসা করেছিলেন।[] এদেশে তিনিই প্রথম ইংরেজি অভিজ্ঞ কবিয়াল এবং প্রথম স্বাদেশিক সঙ্গীতের রচয়িতা। তার গানের ছত্র - "নানান দেশের নানান ভাষা/ বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা" - বাংলায় প্রবাদের মর্যাদা পেয়েছে। []

নিধু বাবু
জন্মনামরামনিধি গুপ্ত
জন্ম১৭৪১
চাঁপতা, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ (মাতুলালয়ে)[]
উদ্ভবকুমারটুলি, উত্তর কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ (পৈতৃক নিবাস)[]
মৃত্যু৬ এপ্রিল ১৮৩৯[]
ধরনটপ্পা
পেশাসংগীতঙ্গ

সংক্ষিপ্ত জীবনী

সম্পাদনা

রামনিধি গুপ্তর জন্ম বর্গি হামলার সময় মাতুলালয়ে হুগলি জেলার চাঁপ্তায়।[] পিতার নাম হরিনারায়ণ কবিরাজ। হাঙ্গামা মিটলে ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তর কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে পৈতৃক নিবাসে ফেরেন। [] সেখানেই তিনি জনৈক ইংরেজ পাদ্রীর কাছে ফার্সিইংরেজি শেখেন এবং সংগীত চর্চা শুরু করেন।[] তিনি কিছুদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে ও পরে ছাপরা অঞ্চলের কালেক্টরি অফিসে কেরানি হিসেবে চাকরি করেন। এই স্থানে তিনি কিছুদিন একজন মুসলিম ওস্তাদের (সারি মিঞা) নিকট সঙ্গীতের তালিম নেন। কিন্তু কয়েকদিন পর তিনি স্বাধীনভাবে হিন্দী সঙ্গীতকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে শুরু করেন। ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৮০৪ সালে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সাধনার উদ্দেশ্যে একটি আখড়া স্থাপন করেন। কুলুইচন্দ্র সেন প্রবর্তিত আখড়াই গান সংশোধন করে এখানে তিনি নতুন পদ্ধতিতে সঙ্গীত শিক্ষা দিতেন । এই সময় রচিত তার আখড়াই গানটপ্পা গানের জন্য তিনি বিখ্যাত হন।[] তার কোনও কোনও টপ্পায় সংস্কৃত 'অমরুশতক' -এর ছায়া পরিলক্ষিত হয়। তার একটি গীতিকা সংকলনের নাম 'গীতিরত্ন' (১৮৩৭)।[] তার সমসাময়িক জেমস লংয়ের বর্ণনানুসারে তিনি তার শ্রেষ্ঠ গানগুলি মদ্যপ অবস্থায় রচনা করেছিলেন।[]

উল্লেখযোগ্য গীতিপদ

সম্পাদনা

নিধুবাবু রচিত মানবীয় প্রেমের গানগুলি বিয়োগান্ত করুণা ও স্বতঃসিদ্ধ কবিতায় সার্থকতা লাভ করেছে -

"ভালবাসবে বলি ভালবাসিনে,
আমার স্বভাব এই,
তোমা বই আর জানিনে।
বিধুমুখে মধুর হাসি,
আমি বড় ভালবাসি,
তাই দেখে যেতে আসি –
দেখা দিতে আসিনে।।"

"যার মন তারই কাছে,
লোকে বলে নিলে নিলে,
দেখা হলে জিজ্ঞাসিব,
সে নিলে কি আমায় দিলে।
দৈবযোগে একদিন,
হয়েছিল দরশন।
না হতে প্রেম-মিলন,
লোকে কলঙ্ক রটালে।"

"প্রেমে কি সুখ হ'ত।
আমি যারে ভাল বাসি,
সে যদি ভালবাসিত।
কিংশুক শোভিত ঘ্রাণে,
কেতকী কণ্টক বিনে,
ফুল হ'ত চন্দনে
ইক্ষুতে ফল ফলিত।"

"তবু কেন যে ভালবাসি,
তাহা নিজেই জানি নে।
আমার স্বভাব এই,
তোমা বই আর জানিনে।"

[]

আরো পড়ুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান, শ্রীসুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলিকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৯৬০, পৃ. ২৫৯
  2. শিশিরকুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৯৪ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
  3. দীনেশ চন্দ্র সেন। বৃহৎ বঙ্গ। ২য় বালাম (জানুয়ারি ১৯৯৩ সংস্করণ)। দে'জ পাবলিশিং, কোলকাতা-৭০০০৭৩। আইএসবিএন 81-7079-186-3 
  4. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৩৫৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  5. Chakrabarty, Ramakanta. Nidhu Babu and his Tappā. Published in Banerjee, Jayasri (ed.), The Music of Bengal. Baroda: Indian Musicological Society, 1987.
  6. রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য সম্পাদিত; কবিতা সংগ্রহ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জুলাই ১৯৯০; পৃষ্ঠা- ৪৪৭।

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা

ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে রামনিধি গুপ্ত (ইংরেজি)