রামতারণ সান্যাল (English Ramtaran Sanyal ) ( ১৮৫৮ - ২৩ অক্টোবর ১৯১২) ছিলেন বিখ্যাত সংগীতাচার্য ও মঞ্চাভিনেতা। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা নাট্যজগতে নাট্যগীতির অগ্রগণ্য সুরস্রষ্টা ছিলেন তিনি। [১]

সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পাদনা

রামতারণ সান্যালের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর বর্তমানে রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার খালকুলা গ্রামে। পিতা বৈকুণ্ঠতারণ সান্যাল ।

রামতারণ বিভিন্ন গীতিনাট্যের সুর ও তাল শিক্ষা দিতেন। নাট্যজগতে প্রথম সুরারোপ করেন "আদর্শ সতী" নাটকে। এই নাটকে সত্যবানের ভূমিকায় এবং "কামিনীকুঞ্জ" নাটকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। ১৮৭২এ প্রতিষ্ঠিত সাধারণ রঙ্গালয়ের প্রথম যুগে নাট্যগীতির অগ্রগণ্য সুরস্রষ্টা ছিলেন তিনি। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে অভিনীত উপেন্দ্রনাথ দাস রচিত প্রবল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ব্যঙ্গনাট্য 'জগদানন্দ ও যুবরাজ'-এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা মার্চ গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে গীতি নাট্য ‘সতী কি কলঙ্কিনী’ অভিনয়কালে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করে থিয়েটারের মালিক, নাট্যকার ও অন্যান্য কলাকুশলীদের গ্রেপ্তার করে। তাঁদের মধ্যে সঙ্গীত পরিচালক রামতারণ সান্যালও ছিলেন। এই বছরেই ইংরাজ সরকার লাগু করেন কুখ্যাত নাট্যনিয়ন্ত্রণ আইন। বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়ের বয়স তখন সবেমাত্র চার বছর। রামতারণের পূর্বে থিয়েটারে সঙ্গীত শিক্ষা দিতেন মদনমোহন বর্মন। সঙ্গীত পরিচালক রূপে থিয়েটারে প্রবেশ করলেও রামতারণ অভিনয়ও করতেন গিরিশচন্দ্রের অনেক নাটকে সঙ্গীত পরিচালনার সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। তার পূর্বে নাটকের গানে পুরাতন গানের প্রচলিত সুর ব্যবহার করা হত। সেই অনুযায়ী নাট্যকাররা তাদের মনের মত কথা বসাতেন। গিরিশচন্দ্রও এই রীতিতে নাট্যগীতি রচনা করতেন। রামতারণই প্রথম গিরিশচন্দ্রকে বললেন তার মনের মত নাট্যগীতি রচনা করতে এবং গানের নাটকীয়তার প্রকৃতি অনুসারে সুর রচনা শুরু করেন। অর্থাৎ সুর অনুযায়ী কথা নয় কথা অনুযায়ী সুরসংযোগ। নাট্যসঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রে এ ছিল এক আমূল পরিবর্তন। গিরিশচন্দ্রের বহু কীর্তিমান নাটক 'চৈতন্যলীলা', বেল্লিক বাজার, মলিনা বিকাশ, পারস্যপ্রসূন, 'প্রফুল্ল', মায়াতরু, প্রভাস যজ্ঞ, মোহিনী প্রতিমা, মলিনমালা,পলাশীর যুদ্ধ, 'বিল্বমঙ্গল ঠাকুর' প্রভৃতি মঞ্চসফল নাটকে নাট্যসঙ্গীত রচনা করেছিলেন তিনি এবং ‘অপেরা মাষ্টার’ নামে পরিচিত হয়েছিলেন। [২] তার নৈপুণ্যে ন্যাশনাল থিয়েটারে বহু গীতিনাট্য সুঅভিনীত হয়েছে। মঞ্চে অভিনয়ের চেয়ে সংগীতের তাল-মাত্রা প্রভৃতিতে বেশি মনোযোগ দিতেন। তারা সুন্দরী-সহ বহু অভিনেত্রীর সংগীত শিক্ষক ছিলেন তিনি।

রামতারণ সান্যাল ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ৬ ই কার্তিক (ইংরাজী ২৩ শে অক্টোবর ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে) পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৬৬১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. ""বাংলা গানের সেকাল একাল পর্ব ৫""। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২৩