রামতনু লাহিড়ী

ভারতীয় শিক্ষাবিদ এবং পন্ডিত

রামতনু লাহিড়ী (মে ২২, ১৮১৩ – আগস্ট ১৮, ১৮৯৮[১]) একজন শিক্ষক, সংস্কারক ও শিক্ষাসংগঠক ও বাঙালি সমাজ সংস্কারক।

রামতনু লাহিড়ী
(১৮১৩-০৫-২২)২২ মে ১৮১৩ – আগস্ট ১৮, ১৮৯৮(১৮৯৮-০৮-১৮)
Ramtanu Lahiri.jpg
রামতনু লাহিড়ী
ডাক নাম রামতনু লাহিড়ী
জন্ম তারিখ (১৮১৩-০৫-২২)২২ মে ১৮১৩
জন্মস্থান কৃষ্ণনগর, বাংলা
মৃত্যু তারিখ ১৮ আগস্ট ১৮৯৮(1898-08-18) (বয়স ৮৫)
মৃত্যুস্থান কলকাতা
আন্দোলন বাংলার নবজাগরণ, সমাজ সংস্কারক
প্রধান সংগঠন ব্রাহ্মসমাজ
পিতামাতা রামকৃষ্ণ লাহিড়ী, জগদ্ধাত্রী দেবী

শৈশব ও শিক্ষাসম্পাদনা

নদীয়ার কৃষ্ণনগরে এক উচ্চ কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং কলকাতার হিন্দু কলেজে শিক্ষা লাভ করেন। রামতনুর পিতা রামকৃষ্ণ লাহিড়ী ছিলেন নদীয়া রাজপরিবারের একজন দেওয়ান। এগারো বছর বয়স পর্যন্ত রামতনু গ্রামের পাঠশালায় লেখাপড়া করেন। পরে তিনি অগ্রজ কেশবচন্দ্র লাহিড়ীর সঙ্গে কলকাতা যান এবং ডেভিড হেয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় হেয়ার স্কুলে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পান। ১৮২৮ সালে তিনি বৃত্তি নিয়ে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলার অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডিরোজিওর সান্নিধ্য লাভ করেন।

কলেজের জীবনসম্পাদনা

রামতনু লাহিড়ী সেই সব শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবীর একজন ছিলেন, যাঁরা উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনের ভিত তৈরি করেন। নানা দিক থেকে উনিশ শতককে বলা যায় স্কুল শিক্ষকদের যুগ। তখন হেনরি ডিরোজিও থেকে শুরু করে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্যারীচরণ সরকার, পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং ডেভিড হেয়ার পর্যন্ত বিখ্যাত স্কুল শিক্ষকগণ বাংলায় এক নবজাগরণের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। শিক্ষক হিসেবে রামতনু ছিলেন সে যুগের একজন আদর্শ প্রতিনিধি।

প্রথম কাজসম্পাদনা

১৮৩৩ সালে রামতনু হিন্দু কলেজের (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষক হন এবং ১৮৪৬ সালে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে যোগদান করেন। ঐ বছরই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রামতনু তার দীর্ঘ শিক্ষক জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান করেছেন। সবশেষে বরিশাল জিলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকা কালে ১৮৬৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

কলিকাতার বাইরেসম্পাদনা

রামমোহনের প্রভাবে রামতনু পৈতা ত্যাগ করে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণে তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিতদের দ্বারা সামাজিকভাবে অপমানিত হতেন। কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে এবং তার অনুপম চরিত্রের জন্য গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। তার শিষ্যরা তাকে তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও অত্যন্ত সম্মান করতেন। শিষ্যদের অন্যতম সমাজসংস্কারক পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ১৯০৪ সালে রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ নামে নিজের সমাজ-সমীক্ষামূলক গবেষণা গ্রন্থের নামকরণের মাধ্যমে গুরুকে স্মরণীয় করে রেখেছেন।

অবসর জীবনসম্পাদনা

রামতনু ব্রাহ্মধর্মের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তার ছাত্রদের হিতোপদেশ অপেক্ষা বুদ্ধি ও নীতির দ্বারা বেশি প্রভাবিত করেন। সরকারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্কুলে বদলি হয়েছেন। সর্বত্রই তিনি তার ছাত্র এবং সহকর্মীদের দ্বারা একজন আদর্শ শিক্ষক, জ্ঞান ও চিন্তার নতুন উৎস এবং একজন অসাধারণ সংগঠক হিসেবে অভিনন্দিত হয়েছেন। তিনি তার শিক্ষা, একাগ্রতা, পুনর্জাগরণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দিক নির্দেশনার দ্বারা ছাত্রদের একটি প্রজন্ম তৈরি করেন, যাঁরা পরবর্তীকালে শিক্ষা, রাজনীতি, সাংবাদিকতা এবং অন্যান্য পেশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬৬০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬

বহিঃসংযোগসম্পাদনা