রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালে সকাল ৮:৪৫ এ সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে ভবনটি ধসে পড়ে।[] ভবনের কয়েকটি তলা নিচে ডেবে যায়। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়ে। এ দূর্ঘটনায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয় যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।[][][১০][১১][১২][১৩][১৪] সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল, সকালে ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে।[][১০][১৫] ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।[১১] এর মাত্র পাঁচ মাস আগে ঢাকা পোশাক কারখানায় একটি বড় অগ্নিকান্ডের পর এই দুর্ঘটনাটি হয়, যেটি বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনা।[১৬]

রানা প্লাজা ভবন (সাভার) ধস ২০১৩
তারিখ২৪ এপ্রিল ২০১৩ (2013-04-24)
সময়৮:৪৫ বাংলাদেশ সময়[]
অবস্থানসাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৩°৫০′৪৬″ উত্তর ৯০°১৫′২৭″ পূর্ব / ২৩.৮৪৬১১° উত্তর ৯০.২৫৭৫০° পূর্ব / 23.84611; 90.25750
নিহত১,১২৯ জন[][]
আহত২,৫০০ জনেরও বেশি [][]
নিখোঁজ৯৯৬
সন্দেহভাজন
  • সোহেল রানা, ভবন মালিক।[]
  • বজলুস সামাদ আদনান, মালিক, নিউ ওয়েভ বাট্টন্স।[]
  • আমিনুল ইসলাম, মালিক, ফ্যন্টম গার্মেন্টস।[]
  • মাহবুবুর রহমান তাপস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নিউ ওয়েভ বাটন্স।[]
  • ইমতেমাম হোসেন, প্রকৌশলী, সাভার পৌর এলাকা।[]
  • আলী মিয়া, সহকারী প্রকৌশলী, সাভার পৌর এলাকা।[]

এই ঘটনার ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।[১৭][১৮][১৯]

প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা
 
সাভার, ভবন ভাঙ্গার অবস্থান (লাল চিহ্নিত)

ভবনটি রানা প্লাজা হিসেবে পরিচিত এবং এর মালিক সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।[] সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি। এতে ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা। দ্বিতীয় তলার বিপণিকেন্দ্রে বহু দোকান ছিল। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল প্রথম তলায়।[২০]

গার্মেন্টস কারখানায় প্রায় ৫০০০ এর মত কর্মী কাজ করত। ২০০৭ সালে রানা প্লাজা নির্মাণ করার আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত ডোবা। ভবন নির্মাণ করার আগে বালু ফেলে এটি ভরাট করা হয়। [২১]বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর প্রধান, আলী আহমেদ খান, জানান যে ভবনের উপরের চার তলা অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছিল।[২২]

 
ধসে যাওয়া ভবনের অংশ।
ধসের পরের কিছু ভিডিও চিত্র

২৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে ফাটল নিশ্চিত হওয়ার পর ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে সত্ত্বেও, অনেক গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরের দিন কাজে ফিরতে বলা হয়, তাদের সুপারভাইজার ভবনটিকে নিরাপদ ঘোষণা করে।[২০] ফাটল সম্পর্কে স্থানীয় সংবাদ চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল।[২৩] ৯তলা ভবনটি সকাল ৯:০০ টার দিকে প্রথম তলা বাদে বাকি সবগুলি তলা ধসে পড়ে।[১০] ধসে পড়ার সময় ভবনটিকে প্রায় ৩০০০ কর্মী ছিল।[১১] প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল নয়টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দ এবং কাঁপনে তারা ভূমিকম্পের আশঙ্কা করেন। পরে বেরিয়ে দেখেন বিরাট এলাকা ধুলা বলিতে ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে।"[২৪]

ঐ সময় ভবনে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল নারী যাদের সাথের তাদের শিশু সন্তানও সেখানে নার্সারী সুবিধায় ছিল।[২৫]

প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেন। ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হয়। [২৬]

এঘটনার পর উত্তেজিত পোশাক শ্রমিকরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবীতে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যপক আন্দোলন গাড়ি ও বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর চালায়।[২৭]

বিএনপি ও বামপন্থি দলগুলো এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবীতে ২রা মে সারাদেশে হরতাল ঘোষণা করে কিন্তু পরবর্তিতে হরতাল বাতিল ঘোষণা করে।[২৮]

তদন্ত ও গ্রেপ্তার

সম্পাদনা

২৫ শে এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভবন ও ঐ ভবনের গার্মেন্টস মালিকদেরকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করতে সরকারীভাবে আলাদা কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার আহ্বান করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় দায়ীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।[২৯] ২৭শে এপ্রিল এই ভবনের দুটি গার্মেন্টসের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সাভার পৌরসভার দুজন প্রকৌশলীকেও গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া হয়।[৩০] ২৮শে এপ্রিল এই ঘটনায় দায়ী ভবন মালিক সোহেল রানাকে বেনাপোল সীমান্ত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র‍্যাব গ্রেপ্তার করে।[৩১][৩২]

গ্যালারি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "It crumbles like a pack of cards"The Daily Star (Bangladesh)। ২৫ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৩ 
  2. "SAVAR BUILDING COLLAPSE-Death toll jumps to 1,042"। BD Today। ৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩ 
  3. "Savar collapse death toll reaches 1,126". The Daily Ittefaq. Retrieved 12 May 2013.[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Frantic search for survivors after Dhaka building collapse"BBC News। ২৫ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৩ 
  5. "Bangladesh collapse search over; death toll 1,127"। Yahoo News। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৩ 
  6. "80 dead, 800 hurt in Savar high-rise collapse"। bdnews24.com। ২৪ এপ্রিল ২০১৩। ২৭ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  7. "'Raids' fail to arrest Rana"The Daily Star। ২৮ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৩ 
  8. "Bangladesh factory building collapse kills over 70, injures hundreds"। Reuters। ২৪ এপ্রিল ২০১৩। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  9. 'Extreme Pricing' At What Cost? Retailer Joe Fresh Sends Reps To Bangladesh As Death Toll Rises – Forbes
  10. "Bangladesh Dhaka building collapse leaves 80 dead"। BBC News। ২৪ এপ্রিল ২০১৩। 
  11. Nelson, Dean (২৪ এপ্রিল ২০১৩)। "Bangladesh building collapse kills at least 82 in Dhaka"The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  12. "সাভারে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮৭ - bdnews24.com"। ২৭ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৩ 
  13. "Death hangs heavy as toll hits 294 - bdnews24.com"। ২০ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৩ 
  14. সাভারে ভবন ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে
  15. Mullen, Jethro (২৪ এপ্রিল ২০১৩)। "Bangladesh building collapse kills at least 80"। CNN। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  16. Edwards, Michael (২৬ এপ্রিল ২০১৩)। "Up to 1,000 feared dead after Bangladesh factory collapse"ABC News (Australia)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৩ 
  17. "ধ্বংসস্তূপে বিস্ময়কন্যার ১৭ দিন"প্রথম আলো। ১১ মে ২০১৩। ২০১৮-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৩ 
  18. Dhaka building collapse: Woman pulled alive from rubble
  19. "Bangladesh factory: woman found alive in rubble 17 days after collapse"। দ্য গার্ডিয়ান। ১০ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৩ 
  20. Zain Al-Mahmood, Syed (২৪ এপ্রিল ২০১৩)। "Bangladesh building collapse kills at least 76 garment workers"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  21. "ভবনমালিক যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেই"। ২৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৪ 
  22. Yardley, Jim (২৪ এপ্রিল ২০১৩)। "Building Collapse in Bangladesh Leaves Scores Dead"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৩ 
  23. Alam, Julhas (২৪ এপ্রিল ২০১৩)। "At least 87 dead in Bangladesh building collapse"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  24. "At least 100 killed and many more hurt in Bangladesh factory collapse"London Evening Standard। ২৪ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৩ 
  25. Bangladesh building collapse kills at least 82 in Dhaka - Telegraph
  26. "কাল জাতীয় শোক সাভারে ভবন ধসে নিহত ৮০"। ২০১৪-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  27. Garment workers remain restive | The Daily Star
  28. 18-party, lefts call hartal for May 2 | The Daily Star
  29. 2 factory owners arrested | The Daily Star
  30. প্রথম আলো, ২৮শে এপ্রিল
  31. Rana arrested from Benapole - bdnews24.com
  32. BBC News - Dhaka building collapse: Owner Mohammed Sohel Rana held

৩৩. প্রথম আলো (৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ইং)

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা