রাজা সূর্য কুমার
রাজা সূর্য কুমার ছিলের বাংলাদেশের রাজবাড়ী অঞ্চলের একজন জমিদার। তার নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ করা হয়েছিল। তার পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজকর্মী ছিলেন।[১] কিন্তু পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়ের পর তিনি লক্ষ্মীকোলে এসে আত্মগোপন করেন। পরে তার পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এই অঞ্চলে জমিদারি গড়ে তোলেন। তারই পুত্র রাজা সূর্যকুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি পান।[২]
রাজা সূর্য কুমার | |
---|---|
জন্ম | ১৮৪০ এর দশক |
অন্যান্য নাম | সূর্য কুমার গুহ রায় |
সন্তান | নরেন্দ্রনাথ গুহ রায় |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | প্রভুরাম (পিতামহ) সমীরেন্দ্র গুহ রায় (নাতি) |
সূর্যকুমারের কাশিমনগর পরগনার পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চল, (পদ্মা তখন লক্ষমীকোল থেকে ৬ মাইল/প্রায় ১০ কিমি উত্তর দিয়ে প্রবাহমান ছিল), সূর্যনগর, দিনাজপুর, ভুবেনেশ্বর, কলিকাতা, কাবিলপুর পরগনায় জমিদারী ছিল।[৩]
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনালক্ষীকোল এস্টেটের উত্তরাধিকারী জমিদার দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ গুহ রায়ের কোনো সন্তান না থাকায় অনুমান ১৮৪০ এর দশকের শেষে সূর্য কুমারকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন।[৩]
লক্ষ্মীকোল গ্রামে রাজা সূর্য কুমার রায়ের বসতবাড়ি ছিল।[২] বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী সূর্য কুমার গুহরায় ছিলেন দরদী ও প্রজাপ্রেমী। সমাজসচেতন পাঠাগার, রাস্তাঘাট, পোস্ট অফিস, মন্দির নির্মাণ করেছেন। তার আশ্রয়ে লালিত পালিত হয়েছেন ছাত্র, আশ্রয়হীন বালক, দরিদ্র ঘরের অসহায় সস্তান। রাজার দুই রানী। কোনো রানীরই সন্তান না থাকায় রাজা যেন সকলের সন্তানকে আপন সন্তান ভাবতেন। নিজের শ্যালকদের পুত্রবৎ স্নেহে স্বগৃহে আশ্রয় দিয়ে পালন করেছেন।[৩]
রাজা উপাধি
সম্পাদনাজনশ্রুতি অনুযায়ী, সূর্যকুমার একজন তেজন্বী অথচ কোমল হৃদয়ের মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিত। প্রতাপশালী বৃটিশ রাজার কাছে তিনি মাথা নোয়াবার পাত্র ছিলেন না। স্বদেশী ও স্বরাজ আন্দোলনে পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। জাতীয় চেতনায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত সজাগ। একবার বড়লাট অত্র এলাকার সকলকে বলছিলেন “তিনি একজন রাজা বটে? অনেকে মনে করেন সেই ঘটনা থেকে রাজা বলে পরিচিত কিন্ত ব্যাপারটা এমন নয়। সূর্য কূমারের ব্যক্তিত্ব, জনহিতকর কাজ, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ এবং প্রজা প্রেমের জন্য ১৮৮০'র দশকে করোনোশনের মাধ্যমে তাকে 'রাজা' উপাধি দেওয়া হয়।[৩]
বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাবর্তমানে তাঁর বাড়িটির অস্তিত্ব নেই। শুধু তিনটি পুকুর আছে। একটি রাজার পুকুর, একটি রানির পুকুর ও আরেকটি বড় পুকুর নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের আগে পুকুরগুলো খাস হয়ে যায়। এরপর থেকে তা সরকারিভাবে দেখভাল করা হতো। পুকুরপাড়ের বটগাছতলায় মেলা বসত। তবে বছর দশেক ধরে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। রাজার উত্তরসূরিরা কেউ এখন আর রাজবাড়ীতে থাকেন না। গত ডিসেম্বরের শুরুতে রাজার বাড়ি পুকুরটির পাশে কালেক্টর দিঘি নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে পুকুরটির সঙ্গে ঐতিহ্য ও রাজার স্মৃতি জড়িয়ে থাকায় পুকুরটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে স্থানীয়রা আপত্তি জানিয়ে নামটি অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানায়।[২]
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "রাজার নামে 'রাজবাড়ী'"। বাংলা ট্রিবিউন।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ প্রতিনিধি (২০২১-০২-২৪)। "রাজার বাড়ি পুকুরের নাম বদলে 'কালেক্টর দিঘি' সাইনবোর্ড"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ ঘ dailyjagaran.com। "রাজবাড়ীর প্রতাপশালী রাজা সূর্য কুমার গুহরায় ছিলেন দরদী ও প্রজাপ্রেমী"। dailyjagaran.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৬।