রাজারবাগ পুলিশ লাইন

রাজারবাগ পুলিশ লাইন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর মূল ব্যারাক। এটি ঢাকার পল্টন থানার অন্তর্গত এলাকা রাজারবাগে অবস্থিত। এখানে স্বল্প সংখ্যক অফিসারের কোয়ার্টারের পাশাপাশি কন্সটেবল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যের ব্যারাক রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যে প্যারাড গ্রাউন্ড রয়েছে সেটিও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অবস্থিত। প্রতি বছর এখানে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি পুকুর, ঘোড়ার খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জাদুঘর।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের একটি জলাশয়

ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পাদনা

রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক অপারেশন সার্চলাইট পরিচালিত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীদের প্রথম লক্ষ্য ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করা। ২৫ শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তানি বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন ঘিরে ফেলে। তখন অস্ত্রাগার হতে পুলিশদের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রথম বুলেট নিক্ষিপ্ত হয় চামেলিবাগ পুলিশ ব্যারিকেড হতে, যার ফলে নিহত হন দুইজন পাকিস্তানি সেনা। পুলিশদের অস্ত্র ও গোলা বারুদ ফুরিয়ে গেলে হানাদার বাহিনী তুমুল গতিতে আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনারা সারারাত গুলি ও কামানের গোলা বর্ষন করে বহু পুলিশ হত্যা করে। এখান থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।[১]

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্পাদনা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের পুলিশদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর উদ্দেশ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপিত হয়। এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে সেই বেতারযন্ত্র যেটি দিয়ে ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পরিচালক মোঃ শাহজাহান মিয়া সারাদেশের সকল থানায় রাজারবাগ, পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক আক্রমণের কথা জানিয়ে দেয়। এখানে স্থান পেয়েছে সেই পাগলা ঘণ্টা, যেটি বাজিয়ে সমগ্র পুলিশকে সেই কালরাত্রে একত্র করেছিলেন কন্সটেবল আব্দুল আলি। এ দুটি জিনিসের পাশাপাশি রয়েছে পুলিশদের ব্যবহৃত রাইফেল, মর্টার, বন্দুক, হাতব্যাগ, চশমা, টুপি ও ইউনিফর্ম। এছাড়াও তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শকের ভাষনের একটি কপি রাখা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধে পুলিশদের অনুপ্রাণিত করেছিল।[২]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে "রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ" নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "রাজারবাগ প্রতিরোধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে পুলিশ বাহিনী"dailyjagaran.com 
  2. "রাজারবাগের জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক - BBC Bangla - খবর"www.bbc.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০২১ 
  3. "Official website of Rajarbag Police Lines School & College"। ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০২১