মহারাজা রমানাথ ঠাকুর ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতার এক অগ্রগণ্য সমাজপতি। তিনি ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখার নীলমণি ঠাকুর এর পুত্র,[১] দ্বারকানাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ ভ্রাতা এবং প্রসন্নকুমার ঠাকুরের জ্ঞাতিভ্রাতা।[২] পরবর্তীকালে তিনি কলকাতার বটতলা অঞ্চলে পারিবারিক সম্পত্তির অধিকারী হন।[৩]

রমানাথ ঠাকুর
জন্ম২৬ অক্টোবর, ১৮০১
মৃত্যু১০ জুন, ১৮৭৭ (বয়স ৭৬ বছর)

কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

১৮২৯ সালে রমানাথ ঠাকুর ইউনিয়ন ব্যাংকের দেওয়ান হয়েছিলেন। ব্যাংক উঠে যাওয়া পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন।[২] যৌবনে রমানাথ ছিলেন রামমোহন রায়ের ভাবাদর্শের অনুগামী[২] এবং ব্রাহ্মসমাজের প্রথম অছিদের অন্যতম।[৪] যে সকল ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। জীবনের শেষ দশ বছর তিনি উক্ত সংঘের সভাপতিত্বও করেছিলেন।[২]

নরমপন্থী দল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল অ্যাসোসিয়েশন এই যুগে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। বিপিনচন্দ্র পালের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে কলকাতার ছাত্রসমাজ এই জাতীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ গ্রহণ করত। এই সব দলের নেতৃস্থানে ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণদাস পাল, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রমানাথ ঠাকুর, দিগম্বর মিত্র, রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ও লালমোহন ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।[৫]

রমানাথ ঠাকুর ছিলেন হিন্দুমেলার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।[৬] রমানাথ ঠাকুর ছিলেন পাশ্চাত্য শিল্পকলার একজন সমঝদার এবং চিত্রকলার সংগ্রাহক। সেযুগে পাশ্চাত্য শিল্প কলকাতার সমাজে বিশেষ কেউ বুঝত না; চিত্র সংগ্রহও ছিল এক বিরল শখ।[৭]

সম্মান সম্পাদনা

১৮৬৬ সালে রমানাথ বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। আইন পরিষদে তিনি রায়তদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। তাই তাকে “রায়তবন্ধু” আখ্যা দেওয়া হয়। পৌর বিষয়গুলিতে তিনি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছিলেন। মূলত তারই উদ্যোগে কলকাতার নিমতলা শ্মশানঘাটটি তার আদি ঠিকানাতেই রেখে দেওয়ার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৮৭৩ সালে তিনি ভাইসরয়ের কাউন্সিলে নির্বাচিত হন এবং “রাজা” উপাধি পান। ১৮৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় তার অবদানের জন্য লর্ড নর্থব্রুক তাকে “কম্প্যানিয়ন অফ দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া” উপাধি প্রদান করেন। ১৮৭৭ সালের দরবার ঘোষণাপত্রে বড়োলাট লর্ড লিটন তাকে “মহারাজা” উপাধি প্রদান করেন।[৮]

রচনা সম্পাদনা

প্রসন্নকুমার ঠাকুরের সঙ্গে তিনি ইন্ডিয়ান রিফর্মার পত্রিকা চালু করেন। এছাড়া হরকরাইংলিশম্যান পত্রিকায় তিনি "হিন্দু" ছদ্মনামে লিখতেন।

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Bandopadhyay, Hiranmay, Thakurbarir Katha, (বাংলা), p31, Sishu Sahitya Samsad.
  2. Sengupta, Subodh Chandra and Bose, Anjali (editors), 1976/1998, Sansad Bangali Charitabhidhan (Biographical dictionary) Vol I, (বাংলা), p456, আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০
  3. Bandopadhyay, Hiranmay, Thakurbarir Katha, (বাংলা), p19, Sishu Sahitya Samsad.
  4. Sastri, Sivanath, History of the Brahmo Samaj, 1911-12/1993, p549, 557, Sadharan Brahmo Samaj, 211 Bidhan Sarani, Kolkata.
  5. Sengupta, Nitish, History of the Bengali-speaking People, (2001/2002), p287, UBS Publishers’ Distributors Pvt. Ltd., আইএসবিএন ৮১-৭৪৭৬-৩৫৫-৪.
  6. Sastri, Sivanath (1903/2001), Ramtanu Lahiri O Tatkalin Banga Samaj (বাংলা)  অজানা প্যারামিটার |Publisher= উপেক্ষা করা হয়েছে (|publisher= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য), page 151.
  7. Guha Thakurta, Tapati, Art in Old Calcutta, the Melting Pot of Western Styles, in Calcutta, the Living City, Vol I, edited by Sukanta Chaudhuri, pp 148-151, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১.
  8. Cotton, H.E.A., Calcutta Old and New, 1909/1980, p596, General Printers and Publishers Pvt. Ltd.